ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আইএস ঘাঁটি রাকা থেকে পলায়ন

পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলনে মরিয়া সিরীয়রা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৫ জুলাই ২০১৭

পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলনে মরিয়া সিরীয়রা

মোহাম্মদ আল-হাসান চার বছরের মধ্যে তার ছেলের কণ্ঠ শুনতে পেয়েছেন মাত্র একবার। সিরীয় সেনা সদস্য তার এ যুবক ছেলে জিহাদী ঘাঁটি রাকায় আটক তার পরিবারের কাছে শুভেচ্ছা পাঠানোর জন্য যখন এক রেডিও অনুষ্ঠানে অংশ নেন তখন তার কণ্ঠ শোনেন মোহাম্মদ আল-হাসান। ৬২ বছর বয়স্ক মোহাম্মদ ও তার স্ত্রী নাজিরা দেখেছেন, দেশের এ জটিল যুদ্ধে তার পরিবার কিভাবে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। তারা ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপের শাসকের বছরগুলোতে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তাদের নিজ শহর ছেড়ে যাননি কখনও। তারা তাদের নয় সন্তানের মধ্যে দুই সেনা ছেলেকে ২০১৩ সালের পর দেখতে পাননি এবং ২০১৪ সালের পর থেকে তাদের দুই বিবাহিত মেয়েকেও দেখতে পাননি। তিন মাস আগে অন্য সন্তানদের নিয়ে রাকা ত্যাগ করার পর তাদের একটাই স্বপ্ন ছিল এবং তা হচ্ছে, তার প্রিয় সন্তানদের সঙ্গে আবারও মিলিত হওয়ার। নাজিরা বলেন, আমরা জানি না তারা জীবিত না মৃত। কালো হিজাবের তুলনায় তার বাদামি রঙের উজ্জ্বল চোখ দুটি চকচক করে উঠল তখন। এ দম্পতি রাকা শহর থেকে ৫০ কিলোমিটারের বেশি উত্তরে আইন ইসায় এক স্থানচ্যুত শিবিরে গ্রীষ্মের প্রচ- গরমে বসে ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত যোদ্ধারা রাকা শহর আইএসমুক্ত করার জন্য শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকলে এখান থেকে হাজার হাজার লোক পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয় আইন ইসায়। আইএস ২০১৪ সালে শহরটি দখল করার পর মোহাম্মদ ও নাজিরা পার্শ্ববর্তী প্রদেশ হাসাকেহ যাওয়ার সুযোগ পাননি। তাদের বিবাহিত মেয়েদের দুইজন বাস করছে এ প্রদেশেই। মোহাম্মদ বলেন, আইএস রাকায় আমাদের শ্বাস রোধ করে দিচ্ছিল। আমি আমাদের ছেলেদের কণ্ঠ শুনতে পাই না প্রায় পাঁচ বছর ধরে। যুক্তরাষ্ট্রে সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস এপ্রিলে রাকার কাছে এসে পড়লে মোহাম্মদের পরিবার আল-মেশলেবের পূর্বাঞ্চলে তাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা একটি মোটরসাইকেলে রওনা দেন এবং উত্তরাঞ্চলে আইন ইসা শিবিরে পৌঁছান বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিয়ে। প্রায় ৭ হাজার গৃহচ্যুত মানুষ এখানে অবস্থান করছে। শিশুরা তাঁবুর গোলক ধাঁধায় পড়ে দৌড়াচ্ছে। মোহাম্মদ ও নাজিরা এখন নিরাপদ হলেও প্রায় ১৮০ কিলোমিটার প্রত্যন্ত পূর্বাঞ্চলে হাসাকেহ শহরে তাদের মেয়েদের কাছে যেতে পারছেন না। জিহাদী শাসনের সময় তারা রাকায় অবৈধ ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে গোপনে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেছেন মাঝেমধ্যে। কিন্তু ৮ মাস ধরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তারা বলেন, আমরা এখানে আছি এ কথা জানে না আমাদের মেয়ে ওয়াফা ও নউরা। মোহাম্মদ ও নাজিরা এ শিবির ছেড়ে যাওয়ার জন্য কুর্দী পুলিশের অনুমতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন মরিয়া হয়ে। নাজিরা বলেন, পুলিশ বলছে, এ শিবির যারা ত্যাগ করতে চাইছে তাদের দীর্ঘ তালিকা রয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয় সংস্থা ওচা রাকার গৃহচ্যুত মানুষের চলাচলের স্বাধীনতা বৃদ্ধির জন্য এ সপ্তাহে শিবির কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছে। নাজিরার ২৭ বছরের মেয়েও তার মায়ের মতো দুর্ভোগে রয়েছে। অন্য মেয়ে রাইদার স্বামী সিরীয় সেনাবাহিনীর একজন সদস্য। এ মেয়ে ২০১৩ সাল থেকে স্বামীর দেখা-সাক্ষাত পায়নি। রাইদা তার স্বামীর সর্বশেষ সান্নিধ্য পাওয়ার ঠিক এক মাস পর তার তৃতীয় সন্তান ইসামের জন্ম দেয়। আইএস শাসনাধীন কোন পুরুষ অভিভাবক ছাড়া বাড়ির বাইরে যেতে পারেনি রাইদা। -এএফপি
×