ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মহামারীর ধারেকাছেও আসেনি ঢাকা দক্ষিণ ॥ সাঈদ খোকন

চিকুনগুনিয়া বিস্তারের দায় কর্পোরেশনের নয় ॥ আনিসুল হক

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৫ জুলাই ২০১৭

চিকুনগুনিয়া বিস্তারের দায় কর্পোরেশনের নয় ॥ আনিসুল হক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে চিকুনগুনিয়ার বিস্তারে সিটি কর্পোরেশনের কোন দায় নেই বলে দাবি করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। আর ঢাকা দক্ষিণে চিকুনগুনিয়া ‘মহামারী’র ধারেকাছেও নেই দাবি করলেন মেয়র সাঈদ খোকন। শুক্রবার ডিএনসিসির পক্ষ থেকে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব এবং ডিএনসিসি কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দুই মেয়র এ দাবি করেন। গুলশান নগর ভবনে ডিএনসিসি মেয়রের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহুল ইসলাম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম এম সালেহ ভূঁইয়া, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এম এ রাজ্জাক, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনোয়ার হোসেন, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান, ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি ডিজিজ কন্ট্রোল এ্যান্ড রিসার্চের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ ডাঃ মনজুর এ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে ডিএনসিসির মেয়র হিসেবে নগরবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করে আনিসুল হক বলেন, চিকুনগুনিয়া রোগের বাহক এডিস মশা জন্মায় বাসা বাড়ির ভেতরে। এর জন্য সিটি কর্পোরেশনকে দায়ী করা যায় না। এডিস মশা খুবই সংবেদনশীল। কীটনাশক ছিটালে এটা মরে যায়। কিন্তু আমাদের পক্ষে বাসা বাড়ির ভেতরে গিয়ে কীটনাশক প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। এ মশা ভবনের আন্ডার কন্সট্রাকশন চৌবাচ্চায় জমে থাকা পানিতেও জন্মায়। সিটি কর্পোরেশন থেকে সেগুলোতে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন মূলত কিউলেক্স মশা নিধন করে জানিয়ে মেয়র দাবি করেন, এগুলোতে তারা পর্যাপ্ত ওষুধ ছিটাচ্ছেন। সংস্থার দ্বারা যতটুকু দেয়া দরকার তার থেকেও বেশি ওষুধ দেয়া হচ্ছে। আনিসুল হক বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রকাশ করা তথ্যানুযায়ী চিকুনগুনিয়া রোগীর সংখ্যা ঢাকায় ৬৪৯ জন। এ তথ্য সঠিক নয়। বাস্তবে চিকুনগুনিয়া রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। তবে মহামারীতে রূপ নিয়েছে কিনা তা সরকার দেখবে। কিন্তু মহামারীর জন্য সিটি কর্পোরেশন দায়ী নয়। চিকুনগুনিয়া আক্রান্তকে মশারির মধ্যে রাখা দরকার। তাও যদি মানুষকে জানাতে হয় তাহলে আর কী বলব। আমার পক্ষে ঘরে ঘরে গিয়ে মশারি টানানো, ঘরের মশা নিধন করা সম্ভব নয়। এটি প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। চিকুনগুনিয়া আক্রান্তকে অন্য মশা কামড়ালে সেই মশা থেকেও এই রোগ ছড়াতে পারে। মশা নিধনের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের, তাহলে অন্য মশা নিধনে ব্যর্থ হওয়ায় এ রোগের প্রভাব বিস্তার করেছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, আমাদের অনেক দোষ আছে। তবে যেখানে ৫ দিন পর পর মশা নিধনের ওষুধ প্রয়োগের কথা, সেখানে আমরা তিন দিন পর পর প্রয়োগ করছি। সংবাদ সম্মেলন শেষে ঢাকায় চিকুনগুনিয়া মহামারীতে রূপ নিয়েছে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত এ রোগের যেভাবে বিস্তার ঘটেছে, যে পরিমাণ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, তাতে অবশ্যই এটা মহামারী। অধ্যাপক মাহমুদুর বক্তব্য সমর্থন জানিয়ে ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি ডিজিজ কন্ট্রোল এ্যান্ড রিসার্চের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ ডাঃ মনজুর এ চৌধুরী বলেন, মহামারী কিনা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে এটি (মহামারী) তাদের ব্যক্তিগত মত। স্বাস্থ্য, রোগতত্ত্ব কীটপতঙ্গ এসব বিশেষজ্ঞরা তাদের বক্তব্যে বলেন, আফ্রিকায় ১৯৫৬ চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস শনাক্ত হয় এবং এশিয়ার মশা এ রোগ ছড়ায়। ড্রেন, নর্দমা, ডোবা, জলাশয়ে এ মশা জন্মায় না। বাসাবাড়ির ফুলের টব, টায়ারের জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার জন্ম হয়। একটি এডিস মশা চার-পাঁচ সপ্তাহ বাঁচে। কোন রোগী চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে তাকে কমপক্ষে পাঁচদিন মশারির ভেতরে রাখতে হয়। এ বছর বৃষ্টিপাত অনেক আগে হওয়ায় চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে মন্তব্য করে তারা বলেন, চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস আমাদের আশপাশের দেশগুলো থেকে এসেছে। এ বছর দিল্লী, কলকাতা, করাচি এবং শ্রীলঙ্কা সব জায়গায়ই আমাদের যাতায়াত বেড়ে গেছে। তাছাড়া বৃষ্টির কারণে মশা ছিল বেশি, তাতে রোগ ছড়িয়েছে বেশি। আর এ রোগ আগে ছিল না বলে আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থাও ছিল না। ফলে রোগটা বেড়ে গেছে। এ ভাইরাস যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেদিকে সকল মানুষকে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন তাঁরা। অপরদিকে শুক্রবার বিকেলে চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধের লক্ষ্যে মশক নিধন কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শনের পূর্বে নগর ভবনে এক ব্রিফিংয়ে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন বলেনÑ ড্রেন, নর্দমা বা লেকের পানিতে বড় জলাশয়ের পানিতে এডিস মশা জন্মায় না। বসতবাড়ি ও আশপাশে স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র। তাই প্রজনন ক্ষেত্রগুলো বিনষ্ট করতে হবে। চিকুনগুনিয়ার প্রভাব বিস্তারের সিটি কর্পোরেশনকে কোনভাবে দায়ী করা যায় না। তাছাড়া ডিএসসিসিতে চিকুনগুনিয়া মহামারী আকার ধারণ করেনি। এটি উত্তর সিটিতে হতে পারে। এরপরও ডিএসসিসির পক্ষ থেকে চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে সর্বোচ্চ কার্যক্রম চলছে। আমরা বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গিয়ে মালিকদের অনুমতি নিয়ে মশক ও পরিচ্ছন্নকর্মীরা কাজ করব। কারণ মেয়র হিসেবে সিটি কর্পোরেশন এলাকার নাগরিকদের বাসা-বাড়ির পরিচ্ছন্নতা তদারকি করা আমার দায়িত্ব। আমরা চিকুনগুনিয়ার বিস্তার রোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এজন্য তিনি সবার আগে নাগরিকদের সচেতনতা ও সহযোগিতা কামনা করেন।
×