ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের চাঁদা বাড়ানোর প্রতিবাদ

এবার আন্দোলনে যোগ দিল সরকার সমর্থক জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৫ জুলাই ২০১৭

এবার আন্দোলনে যোগ দিল সরকার সমর্থক জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের চাঁদা বাড়ানোর প্রতিবাদে শিক্ষকদের আন্দোলনে যোগ দিল এবার সরকার সমর্থক সর্ববৃহৎ শিক্ষক ফোরাম জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্ট। আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতিও। দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে চাঁদার পরিমাণ ৬ থেকে ১০ শতাংশে উন্নিত করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে সরকারী কর্মচারীদের ন্যায় ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, বৈশাখী ভাতা, পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতার দাবিও তোলা হয়েছে। শুক্রবার ঢাকায় পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছেন ফ্রন্ট ও সমিতির নেতারা। এদিকে চাঁদার পরিমাণ ৬ থেকে ১০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ ক্রমশই বাড়ছে পাঁচ লক্ষাধিক বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীর মাঝে। শিক্ষকদের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও অবসর-কল্যাণের টাকার বোঝা শিক্ষকদের ওপর চাপানোর অভিযোগ তুলে আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়কারী ও প্রবীণ শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ কর্মসূচী ঘোষণা করেন। বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণের বর্ধিত চাঁদা কর্তনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, সরকারী কর্মচারীদের ন্যায় ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, বৈশাখী ভাতা, পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, পূর্ণাঙ্গ পেনশন, বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতাসহ ১১ দাবি জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ। দাবি আদায়ে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেবেন ফ্রন্টের নেতাকর্মীরা। ১৮ জুলাই সব জেলা সদরে সংবাদ সম্মেলন, ২০ জুলাই জেলা সদরে মানববন্ধন, ২৩ জুলাই দাবির স্বপক্ষে উপজেলা সদরে মিছিল ও ২৮ জুলাই সব জেলা সদরে শিক্ষক-কর্মচারী সমাবেশ ও জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেবেন তারা। শিক্ষক নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এ সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ৭ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে বৃহত্তর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হক, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ কারিগরি কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ফয়েজ হোসেন, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির মহাসচিব (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মহসিন রেজা, বাংলাদেশ কারিগরি কলেজ শিক্ষক সমিতির মহাসচিব অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির অতিরিক্ত মহাসচিব খান মোশারেফ হোসেন, বাংলাদেশ কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি হাবিবুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শেখ আফছার উদ্দিন, বাংলাদেশ কলেজ কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আনসার আলী প্রমুখ। অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ প্রথমেই বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কার, শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকসহ শিক্ষা উপকরণ সরবরাহের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কিছু শিক্ষকের অপকর্ম নিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষক নামধারী একটি ক্ষুদ্রাংশের অনৈতিক ও পেশাগত অসদাচরণে শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় নিয়োজিত শুধু নয়, অভিভাবক, বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলকে বিব্রত হতে হচ্ছে। ১ শতাংশেরও কম ব্যক্তি প্রশ্নপত্র ফাঁস, পরীক্ষার্থীকে অসদুপায় অবলম্বনে সহায়তা, যথাযথভাবে পাঠদান না করে বাণিজ্যিক কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনিসহ নানা অবৈধ কার্যকলাপ, নৈতিক স্খলন ও পেশাগত অসদাচরণে লিপ্ত। তাদের অপকর্মের দায় শিক্ষক সমাজ নিতে পারে না। আমরা দাবি করছি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ গঠন করে তাদের আইনানুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। শিক্ষক নেতা বলেন, সরকার ইতোমধ্যে বেসরকারী প্রাথমিক স্কুলগুলোর প্রায় সব ক’টি সরকারী করেছে। বর্তমানে মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ ‘জাতীয়করণের’ প্রক্রিয়া চলছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভাল উদ্যোগ। কিন্তু তালিকা প্রণয়নে অগ্রাধিকার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রাচীন প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত নতুন প্রতিষ্ঠান, ভাল ফলকারী প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে এর বিপরীত ধারার প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা সুনির্দিষ্ট, প্রকাশ্য নীতিমালার ভিত্তিতে স্কুল-কলেজ শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে সরকারী শিক্ষকদের অনুরূপ একই সিলেবাসে পাঠদানকারী বেসরকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি, টাইম স্কেল, ৫% বার্ষিক প্রবৃদ্ধি, পূর্ণাঙ্গ পেনশন, পূর্ণ উৎসব ও বৈশাখী ভাতা, যোগ্যতার শর্ত পূরণ করেও এমপিও বঞ্চিত শিক্ষকদের এমপিও প্রদান, শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় অনভিপ্রেত হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাঁদার হার বাড়ানো নিয়ে দেশব্যাপী এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে তার উল্লেখ করা দরকার। পত্র-পত্রিকায় শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষাসচিব, অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিবের মতামত প্রকাশিত হলেও শিক্ষক-কর্মচারীরা তাতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না। জানা যায় আলোচ্যসূচীর এজেন্ডায় চাঁদা বৃদ্ধির প্রস্তাব ছিল না। বিবিধ আলোচনায় চাঁদা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যা প্রচলিত আর্থিক বিধি বিধানের পরিপন্থী। শিক্ষকরা মনে করছেন, চাঁদা বৃদ্ধির বিষয়টি তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। প্রচলিত চাঁদার হারে অবসর বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে যে আর্থিক সুবিধা এখন পাওয়া যাচ্ছে, চাঁদার হার বৃদ্ধি করে তার চেয়ে বেশি সুবিধা না পাওয়া গেলে চাঁদার হার বৃদ্ধির যৌক্তিকতা কোথায়? কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডের অতিরিক্ত চাঁদা কর্তন অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। শিক্ষক নেতারা অভিযোগ করেছেন, বোর্ড সভায় উপস্থিত থেকে সিদ্ধান্তের পক্ষে থাকার বিষয়ে অসত্য বলছেন অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ। এদিকে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের ৪ শতাংশ বর্ধিত চাঁদা কর্তনের গেজেট বাতিল, এমপিওভুক্তিতে হয়রানি বন্ধ ও চাকরি জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলো জানানো হয়। সংগঠনের সভাপতি মোঃ আবুল বাশার হাওলাদার বলেন, দেশের ৯৮ ভাগ শিক্ষা ব্যবস্থা বেসরকারী শিক্ষকরা পরিচালনা করেন। এই বেসরকারী শিক্ষকরা নানা কারণে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, বেসরকারী শিক্ষকরা বেতনের একটা অংশ সরকার থেকে পেয়ে থাকেন যা এমপিওর মাধ্যমে প্রদান করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ করেছে শিক্ষক-কর্মচারী অবসর কল্যাণে আরও ৪ শতাংশ অতিরিক্ত চাঁদা কর্তন করা হবে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে শিক্ষকরা হতাশ। আবু বাশার বলেন, বিধি অনুসারে কর্তন করা চাঁদার টাকার সঙ্গে সরকারী বরাদ্দ মিলিয়ে অবসরকালীন টাকা স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রদান করা হবে। কিন্তু শিক্ষক-কর্মচারীরা অবসরকালীন টাকা ৩-৪ বছরেও পাচ্ছেন না। এমনকি জীবনদ্দশায়ও পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় অতিরিক্ত ৪ ভাগ চাঁদা কর্তন, যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এ অমানবিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। অনলাইন এমপিও সার্ভিসে দুর্নীতি বেড়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও হয়রানি ও দুনীর্তি লাঘবে জুলাই ২০১৫ থেকে অনলাইন এমপিও সার্ভিস চালু করেছেন। আর এ অনলাইন এমপিও তে হয়রানি দুর্নীতি কমেনি বরং বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময় সরকারী শিক্ষকদের মতো বেসরকারী শিক্ষকদেরও ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট, পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাস, বাড়িভাড়া, মেডিক্যাল ভাতা ও বৈশাখী ভাতা দেয়ার দাবি জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রিন্স, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মোঃ জসিম উদ্দিন সিকদার প্রমুখ।
×