ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে, কমেনি ইন্টারনেটের দাম

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৫ জুলাই ২০১৭

ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে, কমেনি ইন্টারনেটের দাম

ফিরোজ মান্না ॥ দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লেও ইন্টারনেটের দাম কমেনি। গ্রাহকদের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে বিটিআরসি ইন্টারনেটের দাম কমানো ও গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। কিন্ত গত দুই মাসেও বিটিআরসি এ বিষয়ে কোন অগ্রগতি আনতে পারেনি। বর্তমানে দেশে ৭ কোটি গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। দেশে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ৭ কোটি ইন্টারনেট গ্রাহক সৃষ্টি হওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা। বছর শেষে এ সংখ্যা বেড়ে সাড়ে ৭ কোটি হতে পারে। ইন্টারনেট বৃদ্ধির হার অনুযায়ী দেশে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের চেয়ে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক বাড়ছে দ্রুত। দেশে বর্তমানে মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা সাড়ে ১২ কোটি। বছর শেষে এ সংখ্যা ১৩ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। মোবাইলে ৬ কোটি গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। বাকি এক কোটি গ্রাহক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন বলে জানিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। সূত্র মতে, দুই মাস আগে বিটিআরসি মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের দাম বেঁধে দেয়ার উদ্যোগ নেয়। ওই উদ্যোগ গত দুই মাসে কোন অগ্রগতি পায়নি। কেন কি কারণে বিটিআরসি মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমাতে পারছে না তা কেউ জানাতে পারেনি। অপারেটররা মোবাইলে ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্যাকেজ দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে বেশি টাকা কেটে নিচ্ছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কস্ট মডেলিং’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সাধারণ মানুষের কাছে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার জন্যই বিটিআরসির এই উদ্যোগ। বিটিআরসি জাতিসংঘের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) এক কর্মকর্তাকে পরামর্শক নিয়োগও দিয়েছে। নিয়োগকৃত পরামর্শক ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণের বিষয়ে বিটিআরসিকে পরামর্শ দেবে। বিটিআরসি ওই পরামর্শের ভিত্তিতে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম নির্ধারণ করবে। কিন্তু এই কাজের কোন অগ্রগতি নেই বলে বিটিআরসির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. শাহজাহান মাহমুদ সম্প্রতি বলেছেন, ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণের জন্য আমরা খুব শীঘ্রই আইটিইউয়ের এক কর্মকর্তাকে কস্ট মডেলিংয়ের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কস্ট মডেলিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। তবে কিছুটা সময় লাগবে। কস্ট মডেলিং হয়ে গেলে বোর্ড সভায় আলোচনা করে ইন্টারনেটের দাম ঠিক করব। তবে এখনই ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে না। পরামর্শকের সুপারিশ নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য দাম ধরা হবে। যাতে কোন পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বিটিআরসি সূত্র জানায়, ইন্টারনেট সেবা দিতে কত খরচ হয় অপারেটরদের তা বের করার পদ্ধতিকে বলা হয় কস্ট মডেলিং। ইন্টারনেট সেবার দাম কি হবে তা গাণিতিক সমীকরণ দিয়ে কস্ট মডেলিং করা হবে। ২০০৮ সালে মোবাইল ফোনকলের মূল্য কত হবে তা নির্ধারণ করা হয়েছিল আইটিইউর পরামর্শক দিয়েই। এরপর দীর্ঘ সময় পার হযে গেলেও মোবাইল ফোনের কলরেট নির্ধারণ করা হয়নি। ওইসময় মোবাইল ফোনের কলরেট করা হয়েছিল প্রতি মিনিট (ভয়েস কল) সর্বোচ্চ মূল্য ২ টাকা আর সর্বনিম্ন মূল্য ২৫ পয়সা। বর্তমানে মোবাইল কলের দাম আরও কম হওয়ার কথা থাকলেও এ বিষয়ে কোন কাজ হয়নি। বিটিআরসি দীর্ঘ ৯ বছরেও মোবাইল ফোনের কলরেট পুনঃনির্ধারণের বিষয়ে কোন উদ্যোগই নেয়নি। তবে মোবাইল ফোনের কলরেট নির্ধারণ একবার হলেও ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণে একবারও উদ্যোগ নেয়নি বিটিআরসি। এবারই প্রথম বিটিআরসি ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। এটা ইন্টারনেট গ্রাহকদের জন্য একটি সুখবর বলা যেতে পারে। কারণ, মোবাইল অপারেটররা নিজেদের ইচ্ছেমতো বিভিন্ন প্যাকেজের নামে ইন্টারনেট সেবা থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। একটা প্যাকেজ থেকে দিনে যদি এক টাকা করেও হাতিয়ে নেয় তাহলে দেশে ১২ কোটি মোবাইল গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে ৬ কোটি ৭২ লাখ গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। যদি ৬ কোটি গ্রাহকও ধরা যায়, তাহলে প্রতিদিন ৬ কোটি টাকা অপারেটরদের হাতে যাচ্ছে। মাসে ১৮০ কোটি টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে নিয়ে যাচ্ছে অপারেটররা। বছর শেষে তা গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকায়। এই বিশাল অঙ্কের টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে মোবাইল অপারেটররা অবলীলায় নিয়ে যাচ্ছে। কেউ টেরও পাচ্ছে না। আর এ নিয়ে কারও কোন প্রশ্নও নেই। বিটিআরসিও বিষয়টি এতদিন জেনেও না জানার ভান করে বসে ছিল। কিন্তু সম্প্রতি কয়েক হাজার গ্রাহক বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসির কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ কথা বলেছেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইন্টারনেটের দাম আসলে কত হওয়া উচিত তা নির্ধারণ করার জন্য পরমর্শক নিয়োগ করা হবে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে এমন একটি সহনীয় দাম নির্ধারণ করার জন্য বিটিআরসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশের পরে বিটিআরসি গত ২৭ মার্চ ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স কমিটির বৈঠকে ‘কস্ট মডেলিংয়ের’ জন্য পরামর্শক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গঠিত কমিটিতে বিটিআরসি ছাড়াও টেলিযোগাযোগ খাত-সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, কস্ট মডেলিংয়ের মাধ্যমে ইন্টারনেটের দাম আসলে কত হওয়া উচিত এর একটি ধারণা পাওয়া যাবে। এই ধারণার পর আমরা নিজেরা বসে এ দেশের সব মানুষ যাতে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে এমন একটি দাম ঠিক করা হবে। তাছাড়া মোবাইল অপারেটরদের ইচ্ছেমতো প্যাকেজ ঘোষণা বন্ধের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কারণ, প্রতিটি প্যাকেজ ঘোষণা ও অফার দেয়ার আগে বিটিআরসির অনুমোদন নিতে হয়। অপারেটররা বেশিরভাগ অফার ও প্যাকেজ বিটিআরসি থেকে অনুমোদন না নিয়েই প্রচার করে যাচ্ছে। এতে গ্রাহকরা মারাত্মক প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এর আগে ২০১৬ সালে ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারণে একবার কস্ট মডেলিং করার উদ্যোগ নিয়েছিল। তখন কেন কি কারণে তা করা হয়নি এটা আর এখন বলা যাচ্ছে না। ২০০৮ সালে ভয়েস কলের কস্ট মডেলিং বিনামূল্যে করে দিয়েছিল আইটিইউ। সেই সময় ইন্টারনেটেরও কস্ট মডেলিং বিনামূল্যে করে নেয়া যেত। দেশের অবস্থার প্রেক্ষিতে এসব সেবার মান নির্ধারণ করা হয়। ২০০৮ আইটিও মোবাইল ফোনের কলরেট নির্ধারণে টাকা না নিলেও এবার ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে তারা টাকা নেবে। আইটিইউয়ের পরামর্শক নিয়োগে বিটিআরসির ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৭২ লাখ। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটি ৩১ লাখ। বাকি ৪১ লাখ গ্রাহক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন।
×