অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আমদানি বাড়লেও খুচরা পর্যায়ে চালের দাম কমছে না। প্রতিকেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪-৪৬ টাকায়। কয়েক মাস ধরেই এই দামে বিক্রি হচ্ছে মোটা চাল। এছাড়া চিকন মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৫৮ টাকায়। মাঝারি মানের পাইজাম, লতা, গুটি, স্বর্ণা এবং হাসকি চাল ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম না কমায় ভোক্তা পর্যায়ে চাল নিয়ে অসন্তুষ্টি বাড়ছে। তবে দাম কমেছে চিনি এবং ব্রয়লার মুরগির। দাম কমে প্রতিকেজি চিনি ৬০-৬৫ এবং ব্রয়লার মুরগি ১৩৫-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা পর্যায়ে। প্রতিকেজি আলু ৩-৪ টাকা দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮-২৪ টাকায়। এছাড়া ভোজ্যতেল, আটা, ডাল, ডিমের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দেশীয় মাছের দাম বাড়লেও ইলিশের দেখা মিলছে বাজারে। ভারি বর্ষণ ও বন্যায় ক্ষেত নষ্ট হওয়ার কারণে বেড়েছে সবজির দাম।
শুক্রবার রাজধানীর কাওরানবাজার, কাপ্তানবাজার, মিরপুর সিটি কর্পোরেশন মার্কেট এবং ঢাকার নিউমার্কেট ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে, খুচরা পর্যায়ে চালের দাম না কমায় সাধারণ ভোক্তার কষ্ট বেড়েছে। আমদানিকৃত চাল দেশে আসা শুরু হলেও দাম না কমায় ভোক্তা দোকানদারদের সঙ্গে দাম নিয়ে বাগবিত-ায় লিপ্ত হচ্ছেন। ভোক্তার প্রশ্ন, বিদেশ থেকে চাল এওেল দাম কমছে না কেন? এই প্রশ্নের সঠিক কোন জবাব দিতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম না কমায় ভোক্তা পর্যায় দাম কমছে না। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানিকৃত চাল আসা শুরু হওয়ায় দাম কিছুটা কমেছে। শীঘ্রই খুচরা পর্যায়ে দাম কমবে চালের।
পুরান ঢাকার কাপ্তানবাজারের চাল ব্যবসায়ী নূরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, খুচরা পর্যায়ে আগের দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে। শুনেছি বিদেশ থেকে চাল আসছে। কিন্তু আমরা এখনও সেই চাল পাইনি। তিনি বলেন, মিলমালিক ও পাইকারি পর্যায়ে দাম না কমলে খুচরা পর্যায়ে দাম কমার কোন সুযোগ নেই। ওই বাজারের চাল ক্রেতা বনগ্রামের বাসিন্দা মুনছুর জানালেন, খবরে শুনেছি বিদেশ থেকে চাল আনা হচ্ছে, কিন্তু দাম তো কমছে না। এখনও আগের মতো বেশি দাম দিয়ে চাল কিনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ, ভাত খেয়েই বেঁচে আছি। কিন্তু চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের কষ্ট বেড়েছে।
এদিকে, চালের দাম কমাতে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক কমানোসহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সরকারী পর্যায়ে ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যদিও সরকারী পর্যায়ে আমদানির কোন চাল এখনও দেশে পৌঁছেনি। চালের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে আমদানি বাড়াতে ঈদের আগে বিদ্যমান শুল্কহার ২৮ শতাংশ থেকে এক লাফে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয় সরকার। ঈদের ছুটির পর মূলত ১ জুলাই থেকে ১০ শতাংশ শুল্কে চাল আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে বেসরকারী পর্যায়ে আমদানিকৃত চাল দেশে আসা শুরু হয়েছে। চলতি জুলাই মাসের প্রথম চারদিনেই ৬০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে, যা গেল অর্থবছরের পুরো সময়ের আমদানির প্রায় অর্ধেক। প্রতিদিনই আমদানিকৃত চাল আসছে। ঢাকার পাইকারি বাজারে দেশী চালের দাম কেজিতে এক থেকে দেড় টাকা পর্যন্ত কমার কথা জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর চালের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বাদামতলী-বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, সরকার শুল্ক কমানোয় আমদানি বাড়ায় চালের দাম কমতে শুরু করেছে। সারা দেশে চাল সরবরাহের জন্য পরিচিত দিনাজপুরেও চালের দাম কমেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এসব কারণে শীঘ্রই খুচরা পর্যায়ে চালের দাম কমে আসবে।
নিত্যপণ্যের বাজার ॥ চারদিকে বন্যা ও ভারি বৃষ্টির কারণে রাজধানীর বাজারে সবজির দাম বেড়ে গেছে। বর্তমান ৫০-৬০ টাকার নিচে কোন সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ৪ টাকা। এছাড়া পটল, ঝিঙা, ধুন্দল, বরবটি, লতি, কাঁচকলা, বেগুন, টম্যাটো, শসা, কাঁচামরিচসহ সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে গেছে। দেশী মাছ বিশেষ করে রুই, কাতলা, চিংড়ি, পুঁটি, মলা এবং কাঁচকি মাছের দাম বেড়ে গেছে। প্রতিকেজি রুই ২৫০-৫০০ এবং চিংড়ি ৬০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় বাজারে ইলিশের দেখা মিলছে কিন্তু দাম কমছে না। প্রতিজোড়া মাঝারি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা। এছাড়া ছোট সাইজের হালি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকায়। পেঁয়াজ ও রসুন যথাক্রমে আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৮-৩২ এবং রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়। মুদি বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ছোলা ৮৫ টাকা, দেশী মুগডাল ১৩০ টাকা, ভারতীয় মুগডাল ১২০ টাকা, মাসকলাই ১৩৫ টাকা, দেশী মসুর ডাল ১২৫-১৩৫ টাকা, ভারতীয় মসুর ডাল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৫ লিটারের ভোজ্যতেলের বোতল ব্র্যান্ড বাজারভেদে ৫০০-৫১০ টাকা, প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ১০০-১০৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লেয়ার মুরগি ২২০ টাকা, দেশী মুরগি প্রতি পিস ৪০০ টাকা, পাকিস্তানী লাল মুরগি ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গরুর মাংস ৫০০-৫৫০ টাকা, খাসির মাংস ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।