ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ চিত্তরঞ্জন দাশ

বাল্টিক সাগর থেকে রকি মাউন্টেন

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১৪ জুলাই ২০১৭

বাল্টিক সাগর থেকে রকি মাউন্টেন

(পূর্ব প্রকাশের পর) ফিরতি যাত্রা দেখতে দেখতে সময়টা পেরিয়ে গেল। এদিকে বিদায় নেয়ার সময় সমাগত। যাত্রীরা এক এক করে সবাই ফিরে আসছে ফেরি টারমিনালের দিকে। আমরা কিছুটা আগেই জাহাজে চড়ে বসেছি। এখন ডেকে পাঁয়চারি করা আর চারদিকের উন্মুক্ত আকাশ, চ্যানেল পেরিয়ে দিগন্ত প্রসারিত জলরাশি দেখার অবকাশে ভেঁপুর গগণবিদারী শব্দের মাধ্যমে সব যাত্রীকে অবগত করা হলো এখনই নোঙর তোলা হবে। নোঙর তোলা হলো। বিশাল আকৃতির জাহাজখানি একটা ঝাঁকুনি দিয়ে আস্তে আস্তে চলতে শুরু করল। এখন স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটা। চারদিকে সূর্যের প্রখর আলোকরশ্মি গাছপালা, বাড়িঘর, সাগরের মোহনা, জলরাশিÑ সবকিছুকে আলোকিত করে রেখেছে। ইউরোপে এখন গ্রীষ্মকাল, তাই সূর্য ডুবতে কম করে হলেও পাঁচ ঘণ্টা বাকি। সুতরাং আরও অনেকটা সময় দিনের আলোয় সমুদ্র দেখতে দেখতে পাড়ি দেয়া যাবে অনেকটা দূর। এমনকি প্রকৃতি সহায় থাকলে সাগরবক্ষের সূর্যাস্ত দেখাটাও কপালে জুটে যেতে পারে। স্কটহোম থেকে হেলসিংকি আসার সময় সাগরের মাঝখানে বসে ভোরের সূর্য উদয় দেখার প্রবল আগ্রহটা অন্তরেই বিলীন হয়ে গেল, সকালে যথাসময়ে ঘুম না ভাঙ্গার করণে। সে রাতে অবশ্য ধকলটা কম যায়নি। তাই আজকের সূর্যাস্তটা কোন প্রকারে মিস করা যাবে না। হেলসিংকি ফেরি টারমিনাল থেকে গভীর সমুদ্রের দূরত্বটা খুব বেশি নয়। এই চ্যানেলটা খুব বেশি হলে মাইলখানেক হতে পারে। তবে সৌন্দর্যের বিচারে কোন অংশে কম নয়। ইতোমধ্যে আমরা দোহে মিলে বারো তলা এই প্রমোদ তরীর একেবারে উপরের ডেকের সামনে মাস্তুলের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে চারদিকের ছোট ছোট দ্বীপের বক্ষ ভেদ করে নির্মাণ করা বিলাসী ভিলা, তাকে ঘিরে থাকা বৃক্ষকুল, হারবারে চলন্ত বোট, ভাইকিংয়ের বিশাল আকৃতির তরী খানিসহ দৃশ্যান্তর দেখতে দেখতে পাড়ি জমালাম গভীর সমুদ্রে। পেছনে ফেলে আসলাম ক্ষণিকের স্মৃতি বিজড়িত হেলসিংকির নান্দনিক সব দৃশ্যাবলী। হে বন্ধু বিদায়। চিনে রেখ মোরে, আবার যদি কখনও ফিরে আসি তোমার দুয়ারে, সেদিন সাদরে গ্রহণ কর আমারে। এই সুযোগে সেলজা কোম্পানির এই বিলাসবহুল জলযানের একটা ধারণা দেয়া যেতে পারে। কবে কখন এর যাত্রা শুরু সে ইতিহাসে না গিয়ে এর ভেতরের সুযোগ-সুবিধা আরাম আয়েশ ইত্যাদি নিয়ে দু-এক কথা লেখার চেষ্টা করি। ঝরষলধ খরহব হলো ফিনিস ক্রজফেরি, যার পরিচালনার দায়িত্বে আছে ভবৎৎু পড়সঢ়ধহু. এই কোম্পানির চারটি জাহাজ, প্রতিবছর তিন মিলিয়ন যাত্রী এবং দুই লাখ গাড়ি পরিবহন করে থাকে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের মধ্যে। এই ক্রজফেরিতে দর্শনীর তারতম্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকারের বিলাসীতায় সাজানো ঘরের ব্যবস্থা বিদ্যমান। যার মধ্যে প্রথমেই বলতে হয় ঊীবপঁঃরাব ঝঁরঃব-এর কথা। হোটেল রুমের মান নির্ণয় করা হয় যে স্টার মার্ক দিয়ে সেই বিচারে এই স্যুটের মান যে কত স্টার হবে সেটা সঠিকভাবে নির্ণয় করা না গেলেও এর ভেতরের সুযোগ-সুবিধার আলোকে পাঁচটা স্টার দিলে মনে হয় বেশি হবে না। ডবল বেড, ড্রেসিং রুম, ফ্লাট টিভি, ব্লুতে ডিক্স প্লেয়ার, রেডিও, বার ডেক্সসহ ফ্রিজ এবং এক্সপ্রেসো কফি মেশিন। নিজেস্ব ঝধঁহধ যার সঙ্গে যিরৎষঢ়ড়ড়ষ নধঃয এবং নধঃযৎড়নবং. এ ছাড়াও এক বোতল স্যাম্পেন, রিফ্রেসমেন্ট ফলের ঝুড়ি, ক্যাবিন সার্ভিস, ব্রেকফাস্টসহ ফ্রি প্রবেশাধিকার ঝঁহভষড়বিৎ ঙধংরং ঝধঁহধ ঝবপঃরড়হ-এ। আর সব শেষে ঘরের বিশাল আকৃতির জানালা দিয়ে ফ্রি ফ্রি সাগরের ভিউ দেখা। দুই রাত তিন দিন ঘরটাতে ভালই কাটল। এর পর জুনিয়র স্যুট, কমোডর, ডিলাক্স, এ ফ্যামিলি স্যুট যেখানে ছয়জন যাত্রীর থাকার ব্যবস্থা তবে একজন শিশু অবশ্যই থাকতে হবে। এর পর এ ক্লাস, বি ক্লাস, সি ক্লাস ইত্যাদি তো আছেই। ঝরষলধ খধহফ, শিশুদের খেলাধুলার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। নতুন বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করা ছবি আঁকা, অভিজ্ঞ ক্রজ কর্মীদের তত্ত্ব¡াবধানে শিশুরা যাতে আনন্দঘন পরিবেশে সময় কাটাতে পারে তার সব ব্যবস্থা করা আছে। সব শিশুকে অতি প্রিয় খাবার আইসক্রিমের স্বাদে আপ্যায়ন, যদিও বিনা সেলামিতে নয়। স্কুল ছুটির দিনগুলোতে শিশুদের বিশেষভাবে সম্মানিত করা হয়, আমন্ত্রণ জানানো হয় গড়ড়সরহ পযধৎধপঃবৎ সঙ্গে নানা কর্মকা-ে আনন্দ উপভোগ করার জন্য। সন্ধ্যায় বিশেষ ডিসকো নাচের ব্যবস্থা থাকে নাচের জন্য নির্ধারিত ফ্লোরে গড়ড়সরহ সঙ্গে। অন্য সময়েও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তাকে হ্যালো বলার কোন সমস্যা নেই। চলবে...
×