ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মলয় চন্দন মুখোপাধ্যায়

নবাব দর্শনে দুই দিন

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১৪ জুলাই ২০১৭

নবাব দর্শনে দুই দিন

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, এমপি সম্প্রতি কলকাতায় এসেছিলেন। গত ২২ মে থেকে ২৬ মে পর্যন্ত তাঁর এদেশে অবস্থানকালে তাঁর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ হয় আমার, সুযোগ হয় তাঁর মতো একজন সত্যিকার সহৃদয় মানুষের মন-মানসিকতা উপলব্ধির, যে মানুষটির সহজতা-সরলতায় মুগ্ধ না হয়ে উপায় ছিল না আমার। এই মুগ্ধতাবোধের সূচনা আমার সাম্প্রতিক ঢাকা ভ্রমণের সময়। আমার দীর্ঘদিনের কবি বন্ধু অসীম সাহার আমন্ত্রণে ওদের বঙ্গীয় সংস্কৃতি সংসদের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথিরূপে যোগ দিতে এসেছিলেন শাজাহান খান, এমপি। যখন জানলাম তিনি মাদারীপুরের ভূমিপুত্র, বললাম তাঁকে, তিনি প্রয়াত ব্যবহারজীবী এবং মাদারীপুরের বিশিষ্ট মানুষ গোপাল চন্দ্র দে-কে চেনেন কিনা। তাঁর মুখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠল আমার মুখে গোপাল চন্দ্রের নাম শুনে। জনাব খানের পিতা মরহুম মৌলভী আছমত আলী খানও ছিলেন এ্যাডভোকেট এবং তিনি ও গোপাল চন্দ্র একই সঙ্গে মাদারীপুর কোর্টে প্র্যাকটিস করতেন। এরপরেই তিনি আমাকে দাওয়াত দিয়ে বসলেন তাঁর দফতরে। পরস্পর ভিজিটিং কার্ড বিনিময় হলো। সে রাতে বেশিক্ষণ কথা হতে পারেনি, যেহেতু অন্যত্র আমাকে যেতে হয়েছিল দাওয়াত পেয়ে। ভেবেছিলাম তাঁর আমন্ত্রণ নিতান্তই সৌজন্যমূলক। কিন্তু যেদিন যাওয়ার কথা বলেছিলেন, সেদিন সকালে যখন ফোন করে জানতে চাইলেন কখন গাড়ি পাঠাবেন, আমি তাঁর এহেন আন্তরিকতায় বিমুগ্ধ না হয়ে পারিনি। জানি, বাংলাদেশের মানুষ অসম্ভব, কিংবা বলা চলে অসম্ভবেরও বেশি অতিথিপরায়ণ। কিন্তু তাই বলে একজন মন্ত্রী তাঁর প্রোটোকলের লেবাস ঝেড়ে ফেলে দিয়ে এভাবে আমাকে আপ্যায়িত করতে চাইছেন, এই অভাবিত আতিথেয়তা আমাকে আপ্লুত করবে না! কথা প্রসঙ্গে তাঁর কাছ থেকে জানলাম মুক্তিযুদ্ধে তাঁর যোগদানের কথা, দেরদুনে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স অর্থাৎ মুজিব বাহিনীতে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে যোগদান করে বৈলগ্রাম ব্রিজের সমরে তাঁর অসমসাহসিক অবদানের কথা। বাংলাদেশের বর্তমান সঙ্কট এবং তার মোকাবিলায় শেখ হাসিনার ভূমিকার কথাও উঠে আসে তাঁর কথায়। শেখ হাসিনার দুই পর্বের শাসনামলে যে কী অভাবিত উন্নতি ঘটেছে বাংলাদেশে, তাঁর বিশদ বিবরণ তিনি তুলে ধরলেন। জানালেন, ভারতের বহু স্থান ভ্রমণ করলেও এ পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ যাওয়া হয়নি তাঁর। আগামী মাসে কলকাতা যাবেন যখন, সে সময় তাঁর ইচ্ছে মুর্শিদাবাদ ঘুরে আসা। আমি ইতিহাসের ছাত্র এবং কলেজে ইতিহাস পড়িয়েছি। তাঁকে তাই আশ্বস্ত করলাম, তাঁকে মুর্শিদাবাদ ঘোরানোর দায়িত্ব আমার। শুনে আশ্বস্ত হলেন। শুনে তাঁর পার্শ্বচর সোহাগ তালুকদার, যিনি আগাগোড়া আমাদের যতœ আত্তিতে ব্যস্ত ছিলেন, বলে উঠলেন, তিনিও যাবেন তাহলে। অতএব ২২ মে যখন তাঁর ফোন পেলাম যে তিনি কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন এবং পরদিন তাঁর সঙ্গী করতে চান আমাকে দমদমে এক সংবর্ধনা সভায়, সোৎসাহে রাজি হই যেতে। ২৩ তারিখ চারটে নাগাদ কলকাতার তাজ বেঙ্গল হোটেলে দেখা করি তাঁর সঙ্গে। হোটেলে ঢুকতেই দেখি লাউঞ্জে রয়েছেন বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের উপদূত জনাব জকি আহাদ। ঢাকার আমার অনুজপ্রতিম বন্ধু, তথ্যচিত্র নির্মাতা মাসুদ করিম আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল, যখন জকি আহাদের সঙ্গে ওকে আলাপ করতে নিয়ে যাওয়ার সময় জকি যখন পা ছুঁয়ে আমায় শ্রদ্ধা জানাতে যাচ্ছিলেন, সিগারেট খেতে গিয়ে আমার অনুমতি চাইছিলেন। সেই জকি আহাদ এবং তাঁর সঙ্গে কলকাতাসহ বাংলাদেশে ডেপুটি হাই কমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (বাণিজ্য) আমার অত্যন্ত প্রিয় মানুষ জনাব মোহাম্মদ সাইফুল আমাকে দেখে উল্লসিত। কিছুক্ষণ আগেই জকি আহাদের সঙ্গে নাকি জনাব শাজাহান খানের আমাকে নিয়ে কথা হয়েছে। আমার ছবিও দেখিয়েছেন ওঁকে আর বলেছেন বাংলাদেশের প্রতি আমার প্রগার ভালবাসার কথা। ৩১৭ নম্বর ঘরে গিয়ে দেখি, মনোযোগ দিয়ে প্রুফ দেখছেন। ওঁর বাবাকে নিয়ে বই লিখেছেন, সে বইয়েরই প্রুফ। তাঁর দফতরে দেখা হওয়ার দিন তিনি একাধিক বই উপহার দিয়েছিলেন আমাকে তার লেখক উনি ছিলেন না। তাজ বেঙ্গলে গিয়ে তাঁর লেখক সত্তার পরিচয় পেলাম। এত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি নিজে প্রুফ দেখেন, এতে আশ্চর্য হতে হলো। নিজে প্রুফ না দেখলে স্বস্তি পাওয়া যায় না, তাঁর প্রত্যয়। অনতিবিলম্বে আমরা দমদমে রওনা হলাম। দেখা হবার পর হোটেলে সামান্য আলাপে আমার কুশল সংবাদ নিয়েছেন, আগন্তুক আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁর সঙ্গে ঢাকা থেকে আগত সরকারী কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। আমরা যাচ্ছি শতাব্দী প্রাচীন দমদম গ্রন্থাগারে, যেখানে ওঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। আসলে দমদম ওঁর অত্যন্ত পরিচিত জায়গা, সেখানে বাস করেন নারায়ণ বাবু, জনাব শাজাহান খানের মাদারীপুরের বাল্যসখা। নারায়ণ বাবু ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত মাদারীপুরে ছিলেন। সাতাত্তুর পরবর্তীকালে বহুবার জনাব খান নারায়ণ বাবুর বাসায় এসেছেন, খেয়েছেন, থেকেছেন। এখন তিনি মন্ত্রী, অতএব বাল্যসখার গৃহে রাত্রিবাস প্রোটোকলে আটকায়, আক্ষেপ নিয়ে জানালেন। গ্রন্থাগারের তরফ থেকে কিছু স্মারক উপহার তুলে দেওয়া হলো। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হওয়ার পর একে একে জকি আহাদ, সাইফুল্লার বক্তৃতা। অবশেষে জনাব শাজাহান খান বক্তৃতায় তিনি দমদমের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা বিশদ জানালেন। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন নিয়ে বললেন, বললেন মৌলবাদ ও মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে তাঁদের লাগাতার সংগ্রামের কথা। বক্তৃতার মধ্যে দু-তিনবার আমার নাম ধরে প্রশান্তি উচ্চারণে বিব্রত হতে হয়েছিল আমাকে। বেশকিছু বই তিনি উপহার দিলেন গ্রন্থাগারটিতে। বক্তৃতা শেষে পরিবেশিত হলো ভারতের জাতীয় সঙ্গীত। অনুষ্ঠান শেষ। অতঃপর ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের দেওয়া নৈশ ভোজে শামিল হওয়ার পরেই জনাব খানের কাছ থেকে বিদায়। যাওয়ার সময় তিনি মনে করিয়ে দিলেন, পরশু অর্থাৎ ২৫ মে মুর্শিদাবাদ যাত্রা নির্ধারিত। ২৫ তারিখ রওনা দিতে একটু দেরি-ই হলো। তাজ বেঙ্গলে রাজকীয় নাস্তা সেরে রওনা দিতে দিতে দশটা প্রায়। সাইফুল এসেছেন আজও। তিনি অবশ্য সফরসঙ্গী হবেন না, কেননা সে দিন ওঁরা কলামন্দিরে রবীন্দ্র-নজরুল জন্মজয়ন্তী পালন করছেন। আমি সেখানে উপস্থিত থাকব না, সাইফুল আক্ষেপ জানালেও (বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের আয়োজিত যে কোন অনুষ্ঠানে আমার অবধারিত উপস্থিতি ঘটে থাকে) পরে জানালেন, আপনার এই ভ্রমণসূচি তো এক মাস আগে থেকেই পূর্বনির্ধারিত। অতএব... আমাদের যাত্রা হলো শুরু। চারটে গাড়িতে মন্ত্রী মহোদয়ের সহযাত্রা পনেরো-ষোলোজন। আমি এবং নারায়ণ বাবু ছাড়া বাকি সকলেই বাংলাদেশের। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক এসপি মাহবুব উদ্দিন আহম্মদ বীর বিক্রম। রয়েছেন আমরা আর রাজনৈতিক সহকারী। আর ছিল পুলিশের ভ্যান, পুরো পথ নিরাপদে পৌঁছে দিতে। জেলা থেকে জেলান্তরে যেতে ভ্যানও পরিবর্তিত হচ্ছিল। প্রথম যাত্রা বিরতি কালনায়। ওখানকার বিদ্যাসাগর টিচার্স ট্রেনিং কলেজে আমাদের সম্মাননা জ্ঞাপন। উপলক্ষ অবশ্যই জনাব খান। ওখানকার শিক্ষিকারা পুষ্পস্তবক দিয়ে, কপালে চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে আবাহন করে অতিথি নিবাসে বসালেন। তারপর প্রচুর ফল ও মিষ্টি দিয়ে অতিথি সেবা এবং তৎসহ মিষ্টি পানীয়। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি শ্রীযুক্ত মাধব চন্দ্র ঘোষ প্রতিষ্ঠানটি ঘুরিয়ে দেখালেন। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটি এর মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখানে ঈইঝঊ মাধ্যম একটি বিদ্যালয়ও গড়ে তুলেছেন এঁরা। এখানে সম্মাননা প্রদানের মূলে শ্রীযুক্ত সুব্রত পাল। মাদারীপুরের ভূমিপুত্র সুব্রত বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের একজন শিল্পপতি। এই প্রতিষ্ঠানটিরও যৌথ মালিকানা তাঁর। এজন্যই আমাদের এখানে যাত্রা বিরতি এবং তারপর সুব্রত বাবুর কালনার বাসায় দ্বি-প্রাহরিক রাজকীয় আহার। অতঃপর মুর্শিদাবাদ রওনা। পথে যেতে পলাশীতে থেমে পলাশীযুদ্ধের স্মারক দেখে নেওয়া। সকলেই নীরব। যেন ১৭৫৭-র ২৩ জুনের সেই অরুন্তুদ দিনটির যাবতীয় বেদনা ও হাহাকার বয়ে বেড়াচ্ছিলাম সবাই। স্বভাবত খোশমেজাজি খান সাহেবের মুখও থমথমে। স্থান ছেড়ে বেরিয়ে আসছি যখন, সকলেরই মনে হচ্ছিল, স্থানটিকে আরও একটু যতœ নিয়ে সাজানো উচিত ছিল। বড় দায়সারাভাবে স্মৃতিসৌধটি গড়ে উঠেছে। ভারত-ইতিহাসের যুগান্ত রচিত হয়েছিল যে স্থানটিতে, সেখানে অন্তত একটি প্রদর্শনশালা প্রত্যাশিত ছিল, দরকার ছিল সিরাজউদ্দৌলার মূর্তি স্থাপন। বহরমপুর পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। সেখানে আমাদের রাত্রিবাসের জন্য সার্কিট হাউস নির্দিষ্ট ছিল। খানিক বিশ্রাম নিয়ে রওনা দেওয়া গেল নতুন বিন্যাসে গড়ে ওঠা মতিঝিল দেখতে। অশ্বখুরাকৃতি এই ঝিলটি ঘিরে প্রায় সাড়ে ৩০০ একর জমির ওপর গড়ে উঠছে অভিনব প্রমোদ উদ্যান। রয়েছে ভ্রমণার্থীদের থাকার জন্য কটেজ। লাইট এ্যান্ড সাউন্ডের মাধ্যমে পলাশীর যুদ্ধকাহিনী ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সমগ্র এলাকাটি ঘুরে দেখতে প্রায় একঘণ্টা সময় লাগল। লাইট এ্যান্ড সাউন্ডে মূর্ত হয়ে উঠল মুর্শিদ কুলি খাঁ, আলীবর্দী, সিরাজউদ্দৌলা, জগৎশেঠ, মীরমদন, ঘষেটি বেগম, মীর জাফরদের একদিকে, অন্যদিকে ক্লাইভ, ওয়াটসন, প্রমুখের কীর্তিসমূহ। দর্শকের দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া উপায় থাকে না। জনাব শাজাহান খান খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলেন সব আর প্রয়োজনে নানা প্রশ্ন করে জেনেও নিচ্ছিলেন। ঘষেটি বেগম এবং তার বোন সিরাজমাতা আমিনা বেগমকে পলাশীর যুদ্ধের পর ঢাকায় নির্বাসন দেওয়া হয়। সেখানে মীর জাফরের পুত্র মীরনের পরামর্শে বুড়িগঙ্গার মাঝখানে নৌকা করে নিয়ে যাওয়া হয়। অতঃপর সলিল সমাধি দেওয়া হয় দুজনকে। কাহিনী শুনে জনাব খান বলে ওঠেন, ‘মর্মান্তিক!’ আমরা মতিঝিলের রিসোর্ট সংলগ্ন আলোকিত উদ্যানে চেয়ার পেতে বসে, চা পানে ব্যস্ত, সান্ধ্য বাতাস বাজন করে যাচ্ছিল আমাদের। মেঘলা আকাশ, পায়ের নিচে ভিজে ঘাস, যত দূরে চোখ যায় আলোকমালায় সজ্জিত, এক মনোহর পরিবেশ। এর মধ্যেই যখন পলাশীর কুশীলবদের মনে পড়ে যাচ্ছিল, মুর্শিদকুলীর রাজধানী স্থাপন, আলীবর্দীর মারাঠাদের বিরুদ্ধে লড়াই, সিরাজের মসনদে বসা, ঘষেটি বেগম-মীরজাফর-উমিচাঁদের ষড়যন্ত্র, দানশা ফকিরের সিরাজকে ধরিয়ে দেওয়া, লুৎফুন্নেছার সিরাজ প্রীতি, এসব মনে জেগে উঠে মেদুর করে দিচ্ছিল মনকে। ফিরে এসো আহার, নিদ্রা। পরদিন সকালে আবার বেরিয়ে পড়া প্রাতরাশ খেয়ে। কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম, এখানকার বিখ্যাত মিষ্টি ছানাবড়ার স্বাদ অতিথিদের পাইয়ে দিতে। সে জন্য নাস্তায় লুচি আর মুরগির মাংসের সঙ্গে ছানাবড়াও ছিল। রাজসিক খাওয়া-দাওয়া, বলতেই হবে। আমরা আর সার্কিট হাউসে ফিরব না। মুর্শিদাবাদের যতখানি সম্ভব দেখে কলকাতা রওনা দেব। আজই মন্ত্রী মহোদয় ঢাকা চলে যাবেন। বিদায় মুহূর্তটি অবিস্মরণীয়। সার্কিট হাউসে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার থেকে সাধারণ কর্মচারী, বাবুর্চি, বেয়ারাদের সকলের সঙ্গে করমর্দন করলেন জনাব খান, ছবি তুললেন সবার সঙ্গে। এ দৃশ্য অভিভূত করল আমাকে। সাধারণতম মানুষের সঙ্গে তাঁর আন্তরিক ও অকৃত্রিম সম্পর্ক স্থাপনে কোন অভিনয় ছিল না। আমাদের প্রথম গন্তব্য কাশিবাজার রাজ বাড়ি। বাংলারে সাংস্কৃতিক ইতিহাসে এই বংশের অবিস্মরণীয় ভূমিকা রয়েছে। বিশাল প্রাসাদ, অসংখ্য কক্ষ ও কক্ষান্তর। অতীত এখানে মৌন থেকে তার আভিজাত্যকে জানান দিচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ এসেছিলেন এ প্রাসাদে। অতঃপর খোশবাগনদী পেরোতে হলো নৌকা করে। জনাব খানের অস্বস্তি নেই কিছুতে। সাঁতারে দক্ষ তিনি, নৌ চালনাতেও। তদুপরি নৌপরিবহনমন্ত্রী। খোশবাগে সিরাজ, আলীবর্দী, লুৎফুন্নেসার সমাধি আমাদের স্তব্ধ করেছিল। আমাদের সফরের অন্যতম সদস্য ফুয়াদ কবর জিয়ারত করলেন দেখলাম। কারও মুখে কোন কথা নেই। ফিরে আসবাব সময় নদী পেরোতে পেরোতে মনে মনে আওড়াচ্ছিলাম, এই গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায় ভারতের দিবাকর। লেখক : ভারতের অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ ই-মেইল : [email protected]
×