ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গীতাঞ্জলি হালদার

গৃহিণীর অতিথি আপ্যায়ন

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১৪ জুলাই ২০১৭

গৃহিণীর অতিথি আপ্যায়ন

‘ঈদ’ শব্দটি শুনলেই মনের ভেতর অন্যরকম অনুভূতি জেগে ওঠে। আর এই অনুভূতির বহির্প্রকাশ হচ্ছে ‘ঈদ’ মানে আনন্দ। এক মাস সিয়াম সাধনার ফল হচ্ছে ঈদ। হৃদয়ের আবেগে খুশির জোয়ার বয়ে আনে ঈদের দিন। আর এই আনন্দের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে ঈদের দিনে মায়ের হাতের মজার মজার খাবার। যা মনে পড়লে জিহ্বায় পানি চলে আসে। সকাল বেলা ঘুমের ঘোরেই মায়ের হাতের রান্নার ঘ্রাণ চলে আসে নাকে। সেই আনন্দে সকাল বেলায়ই উঠতে হয় খাবারের লোভে। আহ্্ ভাবতেই মনে হয় যেন অমৃত। যে খাবারের কোন তুলনা হয় না। ঈদের দিনের খাবারের কথা মনে পড়তেই প্রথমে মনে পড়ে দুধ সেমাই। খাঁটি গরুর দুধের সেমাইয়ে যে স্বাদ তা আর কোথাও পাওয়া যায় না। আর সঙ্গে থাকে ভুনা খিচুড়ি আর মাংস। শহর আর গ্রাম যেখানেই ঈদের সকাল হোক তার মানেই হচ্ছে বিভিন্ন স্বাদের সেমাই পায়েস আর ভুনা খিচুড়ি সঙ্গে মাংস। এটাতো ভাবতেই কি প্যানেলে অর সেমাইয়ের মজাই আলাদা। এরপর থাকে পায়েস যদি এর সঙ্গে থাকে ছানা টুকরো, কিশমিশ আর কাজু বাদাম। একবার ভাবুন সে খাবারের মজা কেমন হতে পারে। সকাল বেলা গোসল সেরে বড় সালাম করে সালামি নেয়ার যেমন আনন্দ আর সে সঙ্গে থাকে বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবারের মজা তাহলে ঈদের সকালটাই বেশ জমে ওঠে। এ তো গেল সকাল বেলার খাবারের মজা। তারপর তো চলে আরও বিশাল আয়োজন। ঈদে মা, ভাবি, আর বোনেরা তো রান্না করেই সময় পাড় করে দেন। এই দিক থেকে ঈদের দিনে তাদের অবদান কিন্তু অবিস্মরণীয়। কারণ মা, বোন, ভাবি এদের জন্যই ঈদের দিনের খাবার জমে ওঠে। তাই বলতে চাইÑ খাবারের স্বাদ বর্ণনা করার আগে তাদের কথা স্মরণ করতে। ঈদে সবাই ঘোরাঘুরি করলেও বাড়ির মায়েরা কিন্তু ঘুরতে পারে না। তারা তো সন্তানের মুখে ভাল ভাল মজার মজার খাবার তুলে দেয়ার জন্য সকাল থেকে রান্না শুরু করেন। আর এই রান্না চলে দিনভর। যদি তারা রান্না না করত তাহলে খাবারের এত স্বাদ আমরা সন্তানরা পেতাম কি করে? তাই খাবার গ্রহণের আগে মা, বোন, ভাবিদের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। মোটকথা সারাদিন কাজ, সঙ্গে মেহমানদারি তো আছেই। তাই মায়েদের ভূমিকা সত্যিই অতুলনীয়। একমাত্র মা-ই এই কাজ করেন সন্তানের মুখে হাসি দেখার জন্য। মায়ের ঈদের আনন্দ সন্তানের দেয়া নতুন কাপড় নয়, একটু মন খোলা হাসি দেখার জন্য। ঈদের দিনে অন্য সবার পোশাক, সঙ্গে মজার খাবারের লোভ আছে। কিন্তু মায়ের লোভ সন্তানের মুখের হাসি। ঈদের চাঁদ দেখে সবাই যেমন আত্মহারা হয়, তেমনি মা আত্মহারা হয় সন্তানের সুখে। তাই মা রান্না করে খাওয়াতেই পছন্দ করে ঈদের দিন। ঈদের দিনে সকালের খাবার তো আমরা গ্রহণ করলাম এবার দেখি দুপুরে কি আয়োজন চলেÑদুপুরে আয়োজন আরও ভিন্ন রকম যা শুনে জিহ্বা আরও বেশি ভিজে যাবে। বিরিয়ানি তো থাকেই তার সঙ্গে সরু চালের পোলাও, কোরমা, মুরগির রোস্ট, খাসি, গরুর মাংসের রেজালা। এ ছাড়াও থাকে চিতল মাছের কোপতা আর রুই মাছের কালিয়া এর মাঝে কাবাব, বোরহানি, জর্দা তো থাকবেই। কিন্তু তারপরে কিছু একটা থেকেই যায়। বর্তমানে খাবারের পর দই না হলে কি চলে? দই তো থাকতে হবে পারলে দইয়ের সঙ্গে এক পিস মিষ্টি। আহ্ কি স্বাদ সেই খাবারের। কি কেমন লাগছে, খাবারের কথা শুনে। আমার এখন অন্যরকম লাগছে খাবারের গল্পে। দুপুরের খাবার শেষে ঘোরাঘুরি। কারণ ঈদের দিনে তো কোন বিশ্রাম নেই। এখান থেকে সেখানে শুধু ছোটাছুটি। আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব প্রতিবেশী সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেয়া। এটা ঈদের বিশেষ মজা। ঈদের দিন সবাই দুঃখ, কষ্ট ভুলে এক সঙ্গে মিলে মিশে দিন কাটাতে পছন্দ করে। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে এক সময় বিকেল চলে আসে। ঈদের দিনে বিকেল বেলার মজা আরও অন্যরকম। শহরে সবাই বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানে। শিশু পার্ক, হাতিরঝিল ও রমনা পার্কে ঘুরতে যায়। অন্য দিকে ঈদের দিন গ্রামের আনন্দ একেবারেই অন্যরকম আনন্দের। সবার সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা হয় এবং বিকেল বেলা অনেক বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়, নদীর পাড়ে ঘুরতে যাওয়া এই সব অন্যরকম আনন্দ শুধু ঈদের দিনেই হয়। এভাবে এক সময় বিকেল আসে। সারাদিন হৈচৈ করে এত খাবার খাওয়ার পরেও আর যেন একটা মনের মধ্যে খাবার খাবার গন্ধ আসে। আর সেই খাবার হচ্ছে চটপটি, ফোসকা, বাদাম-ছোলা, ঝালমুড়ি, হালিম, নুডলস ইত্যাদি। এ যেন এক অন্যরকম মজা। কারণ এক মাস রোজা থাাকর কারণে সারাদিন এসব খাবার আর এই এক মাসে খাওয়াই হয় না বন্ধুদের নিয়ে। তাই এর মাঝেও রয়েছে অন্যরকম আনন্দ। ঈদের খাবার মানেই বিশেষ মজার মজার খাবারের স্বাদ। ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। ঈদের সারাদিন এক অন্যরকম অনুভূতি। ঈদের সারা দিন এক অন্যরকম অনুভূতি। ঈদের পোশাক, খাবার, বেড়াতে যাওয়া, সবার সঙ্গে কোলাকুলি এবং ঈদের নামাজ। এ যেন সবই অন্যরকম। তাই প্রতিবছর এই সিয়াম সাধনা সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনুক। ধর্ম যার যার, কিন্তু আনন্দ হোক সবার। এটাই একমাত্র কামনা।
×