ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আকিল জামান ইনু

তাপমাত্রার পরিবর্তন বিপর্যস্ত মৌমাছির জীবনচক্র

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১৪ জুলাই ২০১৭

তাপমাত্রার পরিবর্তন বিপর্যস্ত মৌমাছির জীবনচক্র

কেবল জার্মানিতেই আছে প্রায় ৫৫০ প্রজাতির মৌমাছি। এদের বেশিরভাগই একাকী বা সঙ্গীহীন। সাধারণ মৌমাছির মতো এরা মৌচাক গঠন করে বাস করে না। তবে প্রতিটি নারী মৌমাছি কয়েকটি আলাদা বাসা বাঁধে ও একাই তার সন্তানদের খাদ্যের জোগাড় করে। নিসঙ্গ মৌমাছি তার ক্ষুদ্র জীবনের কয়েকটি সপ্তাহ প্রজনন ও ডিমে তা দিয়ে এবং সন্তানদের খাদ্য জোগাড়ে ব্যয় করে যাতে তারা পূর্ণাঙ্গ রূপ পেতে পারে। মৌমাছি সাধারণত তার খাদ্য সংগ্রহের জন্য নির্দিষ্ট প্রজাতির উদ্ভিদের ওপর নির্ভর করে। তাপমাত্রার পরিবর্তনে মৌমাছির জীবনচক্রেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সঙ্কটে যথাসময়ে ডিম ফুটানো নির্দিষ্ট প্রজাতির উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে মৌমাছির যথাসময়ে ডিম ফুটানো আজ সঙ্কটের মুখে। বিশেষ করে প্রাক বসন্তে শীতনিদ্রা কাটিয়ে ওঠা মৌমাছির জন্য খাদ্য সংগ্রহ- এখন ঝুঁকিপূর্ণ। বৈশ্বিক উষ্ণতার নানাবিধ প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মৌমাছির ওপর। উদ্ভিদ ও মৌমাছির জীবনচক্রের পরিবর্তনই এর কারণ। বিষয়টি এমন যে, মৌমাছি উদ্ভিদের ফুল ফুটবার পূর্বেই ডিম পাড়ছে এবং তা করতে হচ্ছে তাকে অনাহারে থেকেই। অন্তত প্রথম কয়েকদিন। উইরিজবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব এনিম্যাল ইকোলজি এ্যান্ড ট্রপিক্যাল বায়োলজির একদল গবেষক এ নিয়ে কাজ করেছেন। যার ফলাফলও প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অব এনিম্যাল বায়োলজিতে। সময়ের পার্থক্যে ক্ষতিগ্রস্ত মৌমাছি দ্য কোলাবোরেটিভ রিসার্চ সেন্টার বসন্তকালীন মৌমাছির তিনটি প্রজাতির ওপর এই সময়ের পাার্থক্য নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাদের গবেষণালব্ধ ফলাফল উদ্বেগজনক। মৌমাছির ডিম দেয়া ও উদ্ভিদের ফুল ফোটার মধ্যে ৩ থেকে ৬ দিনের পার্থক্য হতে পারে বড় ক্ষতির কারণ বলে মত দিয়েছেন লেখক ম্যারিয়েলা। গবেষণার স্বার্থে গবেষকরা ৩৫টি বৃহদাকার ঝুলন্ত খাঁচা স্থাপন করেন। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মৌমাছি যেমন যথাসময়ে ডিম পেড়েছে, তেমনি ফুল ফোটার ৩ থেকে ৬ দিন পূর্বেও ডিম পেড়েছে। গবেষকরা এ সময় তাদের জীবনচক্র নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা মৌমাছির নিত্যদিনের কার্যকলাপ এবং তারা কতটি বাসা বাঁধে ও ডিম পাড়ার পরিমাণও রেকর্ড করেছেন। তারা দেখেছেন ৩ থেকে ৬ দিন আগে ডিমপাড়া অনেক মৌমাছি একদিকে যেমন মারা যাচ্ছে তেমনি তাদের প্রজনন ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। আচরণ পরিবর্তনেও রক্ষা নেই নেতিবাচক প্রভাব এড়ানোর জন্য আচরণগত পরিবর্তন করেও শেষ রক্ষা হয়নি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়Ñ তিনটির মধ্যে একটি প্রজাতি পুরুষ সন্তানের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে। কারণ পুরুষ মৌমাছির জন্য খাদ্যের প্রয়োজন হয় কম বড় নারী মৌমাছির চাইতে। কিন্তু ম্যারিয়েলা বলেছেন এর প্রভাব পড়বে মৌমাছির সংখ্যাবৃদ্ধিতে। যা এক সময় নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে আরেক প্রজাতির মৌমাছি সমপরিমাণ ডিমপাড়ার চেষ্টা করে অল্প স্থানে। কিন্তু এক্ষেত্রে তার ডিমে সংক্রমের শঙ্কাও প্রচুর। অন্য প্রজাতির মৌমাছি তার জীবনের দ্বিতীয় পর্যায়ে বেশি সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করে নেতিবাচক প্রভাব এড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সেটিও যথেষ্ট ছিল না। পরিবেশবিদ ম্যারিয়েলা বলেন, প্রতিটি প্রজাতির মৌমাছিই বিভিন্নভাবে আচরণে পরিবর্তন এনে পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রভাব থেকে রক্ষা পাবার চেষ্টা করছে। কিন্তু তারপরও তারা সক্ষমতা হারাচ্ছে। ড. এন্ড্রেয়া যিনি গবেষক দলের প্রধান তার মতে, এ অবস্থা কেবল মৌমাছির ওপর প্রভাব ফেলবে তাই নয়, এটি উদ্ভিদের জীবনকেও বিপর্যস্ত করে তুলবে। আর পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
×