ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সব গণতান্ত্রিক দেশের সংসদে বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা রয়েছে ॥ আইনমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৪ জুলাই ২০১৭

সব গণতান্ত্রিক দেশের সংসদে বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা রয়েছে ॥ আইনমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ ষোড়শ সংশোধনী প্রসঙ্গে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে বিশ্বের সব উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে সংসদের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। সেজন্য ’৭২-এর সংবিধানে যে ৯৬ অনুচ্ছেদ ছিল সরকার সেটি প্রতিস্থাপন করে ষোড়শ সংশোধনী করে। অথচ ’৭২-এর মূল সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ বাদ দিয়ে ’৭৭-এর সামরিক শাসনামলে করা সংশোধনী কেন বহাল রাখা হলো এটি বোধগম্য নয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার বিকেলে ময়মনসিংহে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ১০ তলা নতুন ভবনের উদ্বোধন শেষে এক সুধী সমাবেশে এসব কথা বলেছেন। মন্ত্রী আরও বলেন, জনগণের ওপর প্রভাব পড়ে গুরুত্বপূর্ণ এমন সবকিছু নিয়েই সংসদে কথা বলা যায়। তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পর সংসদে একটি বিতর্ক হয়েছে। এ বিষয়ে সংসদে কথা বলা যাবে না বলে কিছু সুধীজনের মন্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সংসদে বিচারপতিদের কটাক্ষ করে কিছু বলা হয়নি। মন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ৫৩, ৬৪ ও ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংসদে রাষ্ট্রপতি ও বিচারপতিদের কাউকে কটাক্ষ করে কিছু বলা যাবে না। তাহলে কেন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংসদে কথা বলা যাবে না- প্রশ্ন আইনমন্ত্রীর। আইনমন্ত্রী এ সময় চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যেতে রাস্তা পারাপারে একটি ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণ, চীফ জুডিশিয়াল আদালতে আইনজীবীদের বসার ব্যবস্থা, লাইব্রেরীর আধুনিকায়ন, পাবলিক প্রসিকিউটরদের বেতন ও সম্মানী বৃদ্ধি, নির্মাণাধীন আইনজীবী ভবনের কাজ সমাপ্তকরণের প্রতিশ্রুতি দেন। ময়মনসিংহের জেলা ও দায়রা জজ ড. আমির উদ্দিনের সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ধর্মমন্ত্রী আলহাজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, এ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন এমপি, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হক, ৬৪ জেলা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়কারী বিকাশ কুমার সাহা, ময়মনসিংহের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফজলে খোদা নাজির, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা, জেলা বারের সভাপতি এ্যাডভোকেট বাধন গোস্বামী ও ময়মনসিংহ গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহীদ মোঃ কবীর। এসময় ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান, ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোঃ খলিলুর রহমান, পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, পৌর মেয়র ইকরামুল হক টিটু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট ওয়াজেদুল ইসলাম, জেলা বারের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মিজানুর রহমানসহ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, স্থানীয় প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তা, আইনজীবী, রাজনীতিক, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও গণমাধ্যমের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখলেন বিতর্কিত এমপি ময়মনসিংহে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ১০ তলা নতুন ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে ধর্মমন্ত্রী আলহাজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমানসহ আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আইনজীবী ও শহরের বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন। সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখার সুযোগ পান এ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন এমপি। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ না করে পাক সেনাদের গাড়িতে প্রকাশ্যে ঘুরে সহায়তার জন্য বিতর্কিত হন এই এমপি। একাত্তরে এলাকায় অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ ও হত্যার অভিযোগও রয়েছে সরকার দলীয় এই এমপির বিরুদ্ধে। এছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলা চলমান রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবারের সুধী সমাবেশে বক্তব্য দিতে দাঁড়ালে দর্শক সারি থেকে কানাঘোষার এক পর্যায়ে হৈচৈ শুরু হলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে স্লিপ দিয়ে এই এমপিকে বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করতে বলা হয়। এর আগে বক্তব্যের এক পর্যায়ে এ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন এমপি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের উদ্বোধনের বিষয় এড়িয়ে কৌশলে একাত্তরে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করে দীর্ঘ আলোচনা শুরু করেন। তিনি বলেন, একাত্তরে যারা এমএনএ ও এমপি ছিলেন রাষ্ট্রপতি ১৯৭২ সালে ২২ নম্বর এক আদেশে তাদের গণপরিষদ সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেন। তিনি আরও বলেন, একই দিনে রাষ্ট্রপতি ২৩ নম্বর এক আদেশে স্বাধীনতাবিরোধী ২৫ জনসহ মোট ৪৫ জন এমএনএ ও এমপিকে গণপরিষদের সদস্য থেকে বাদ দেন। তবে এমপি থেকে তিনি গণপরিষদ সদস্য হিসেবে ১৯৭২ সালের সংবিধান রচনায় স্বাক্ষর করেন এ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন এমপি। উদ্বোধনী পর্বের সুধী সমাবেশে এ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন এমপি কেন এই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন সেটি অনেকের কাছেই বোধগম্য নয়। প্রসঙ্গ এড়িয়ে আইনমন্ত্রীর সামনে নিজের সাফাই গেয়ে এমন অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য দেয়ায় দর্শক সারি থেকে মন্তব্য করা হয়, ‘ঠাকুর ঘরে কে রে আমি কলা খাই না’।
×