ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারপতি আনোয়ারুল হকের ইন্তেকাল

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৪ জুলাই ২০১৭

বিচারপতি আনোয়ারুল হকের ইন্তেকাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সঙ্ঘটিত মানবতা-বিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক আর নেই। (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মোঃ শহীদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা, আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক এবং যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগ ও তদন্ত সংস্থা। গত ৫ জুলাই সিঙ্গাপুর ক্যান্সার হাসপাতাল থেকে বিচারপতি আনোয়ারুল হককে ঢাকায় আনা হয়। এরপর তাকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাবেক এই আইন সচিব দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। ২১ দিন পর কেমোথেরাপি দেয়ার জন্য তার আবারও সিঙ্গাপুর যাওয়ার কথা ছিল। বিচারপতি আনোয়ারুল হককে সিঙ্গাপুর থেকে আনার পর ওইদিনই তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। শহীদুল ইসলাম ঝিনুক জনকণ্ঠকে জানান, এর আগে চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়েছিল। সেখানে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর তাকে দেশে আনা হয়। ওইদিনই ফের অবস্থার অবনতি হলে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আজ শুক্রবার বাদ জুমা সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হবে। বিচারপতি আনোয়ারুল হক ১৯৫৬ সালের ১ আগস্ট নরসিংদী জেলায় প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও এলএলএম ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর ১৯৮০ সালে ১৫ নবেম্বর তিনি আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। এরপর ১৯৮১ সালে ১ ডিসেম্বর তিনি মুনসেফ হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি ডিস্ট্রিক জাজ হিসেবে পদোন্নতি পান। পরবর্তীতে ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর তিনি হাইকোর্ট ডিভিশনের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর ২০১২ সালে তিনি স্থায়ী নিয়োগ পান। পরে তিনি ২০১২ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর সদস্য বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ বিচারপতি নিজামুল হককে চেয়ারম্যান, বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ এ কে এম জহির আহমেদকে সদস্য করে গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরপর আরও তিনজনকে যোগ করে প্রথম ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ টি এম ফজলে কবীরকে চেয়ারম্যান করে ২০১২ সালের ২৩ মার্চ দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। তিন সদস্যের দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই বিচারক হন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং ট্রাইব্যুনালের নিবন্ধক মোঃ শাহীনুর ইসলাম। বিচারপতি ফজলে কবীরের স্থলে প্রথম ট্রাইব্যুনালে সদস্য করা হয় বিচারপতি আনোয়ারুল হককে। পরে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ারুল হককে চেয়ারম্যান করে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। সদস্য করা হয় বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দীকে। বিচারপতি আনোয়ারুল হক অসুস্থ থাকায় এখন দুই সদস্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম চলছে।
×