ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘পাক আর্মি ও রাজাকাররা বাবা চাচাসহ ৫৯ জনকে হত্যা করে’

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৪ জুলাই ২০১৭

‘পাক আর্মি ও রাজাকাররা বাবা চাচাসহ ৫৯ জনকে হত্যা করে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার আকমল আলী তালুকদারসহ চার রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের তৃতীয় ও চতুর্থ সাক্ষী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। তৃতীয় সাক্ষী অধির মালাকার জবানবন্দীতে বলেন, পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা আমাদের পাঁচগাঁও গ্রামের বিভিন্ন বাড়িঘর থেকে আমার বাবা, চাচাসহ প্রায় ৫৯ জনকে ধরে নিয়ে আটকে রাখে। আটকৃতদের বাজারের পুকুর পাড়ে নিয়ে সানঘাটে লাঠি ও বাঁশ দিয়ে পেটায়। পরে তাদের গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া পাকিস্তানী আর্মিরা আমার মা, কাকিসহ চারজনকে আমার বাবার ঘরে ইজ্জতহানি করে। একই ভাবে চতুর্থ সাক্ষী সুখময় শব্দকরও জবানবন্দীতে বলেন, তার বাবা, কাকাসহ প্রায় ৬৯ জনকে পাকি আর্মি ও রাজাকাররা গুলি করে হত্যা করে। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাদের জেরা করেন। মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যর জন্য ৩০ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল খালেক ম-লসহ চার রাজাকারের মামলার পরবর্তী দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ আগস্ট। এদিকে, মহেশখালীর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামি আব্দুল মজিদ মারা যাওয়ার পরও তাকে পলাতক দেখানোর বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে দুই মাস পর আদেশ প্রদান করা হবে। বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বৃহস্পতিবার এ আদেশ লো প্রদান করে। মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার আকমল আলী তালুকদারসহ চার রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের তৃতীয় সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম অধির মালাকার। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬০ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম পাঁচগাঁও, থানা রাজনগর, জেলা মৌলবীবাজার। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১২ বছর। তখন আমি পাঁচগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম এবং বাবার সঙ্গে আমি কৃষিকাজ করতাম। একাত্তরের ২৩ বৈশাখ রোজ শুক্রবার ফজরের নামাজের আগে আমাদের বাড়ির দক্ষিণে ও আলাউদ্দিন চৌধুরীর বাড়ির সামনে একটি গুলির শব্দ শুনে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ওই সময় কয়েকজন রাজাকার ও ১৫-২০ জন পাকিস্তানী আর্মি আমাদের বাড়ির উঠানে দেখতে পাই। এ সময় রাজাকার আলাউদ্দিন চৌধুরী আমার বাবাকে বলে, স্যার এসেছে তোমরা বের হও। শান্তির জন্য সরকার বাজারের পুকুর পাড়ে মিটিং হবে। এর পর পাকিস্তানী আর্মি আমার বাবা নারায়ণ মালাকার, কাকা রঙ্গু মালাকার ও বিধু মালাকারকে আমাদের বাড়ির পূর্ব দিকে সরকার বাজারের পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়। রাজাকাররা আমার মা প্রভাষিনী, কাকি শান্তি রানী ও বাসন্তী রানী, আমার বড় বোন সুদেবী রানীকে দেখিয়ে দিলে পাকি আর্মিরা তাদের ইজ্জতহানি করে। সাক্ষী আরও বলেন, এ সময় পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা আমাদের বাড়িতে লুটপাট করে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমি পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে তা দেখতে পাই। পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা আমার বাবা, চাচা, প্রতিবেশী বিমল মালাকার, সুবল মালাকার, বাদল মালাকার, সুরেশ মালাকার, অভি শব্দকরসহ প্রায ৫৯-৬০ জনকে ধরে আটক করে রাখে। পরবর্তীতে তাদের গুলি করে হত্যা করে। মৃত আসামি পলাতক ব্যবস্থা নেয়ার আর্জি আসামির মৃত্যুর দুই মাস পর তাকে পলাতক দেখিয়ে প্রতিবেদন দেয়ায় প্রতিবেদক মহেশখালী থানার (এসআই), কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) ও মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন সংস্থা।
×