ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অনাথ হাবিবার রাজকীয় বিয়ে আজ

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৪ জুলাই ২০১৭

অনাথ হাবিবার রাজকীয় বিয়ে আজ

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ মা-বাবা নেই। বড় হয়েছে শিশু আশ্রমে। আদর ¯েœহ করার মতো যেন কেউ নেই। শিশু পরিবারের বাসিন্দা ‘অনাথ’ হাবিবা। এখন আঠারো বছরে পা দিয়েছে। শুক্রবার সে হাবিবারই বিয়ে। তার এ বিয়ে নিয়ে রীতিমত হৈ চৈ পড়েছে। এর অবশ্য কারণ আছে। সমাজের অন্য ১০টি সাধারণ মেয়ের মতো তার বিয়ে নয়। রাজসিক বিয়ে হবে হাবিবার। এখন আর সে স্বজনহারা নয়। হাবিবার ‘বাবার’ ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান। তার ব্যক্তিগত উদ্যোগেই আজ শুক্রবার হাবিবার বিয়ে। নববধূ সাজানোর সকল প্রস্তুতি চলছে। বাবা হিসেবে মেয়ের বিয়েকে স্মরণীয় করে রাখতে সব ব্যবস্থাই করেছেন পুলিশ সুপার। ব্রাহ্মণবাড়িয়া তো বটেই, আলোচিত এ বিয়ের কথা এখন সবার মুখে মুখে। তার দীর্ঘদিনের আবাসস্থল সরকারী শিশু পরিবারেও বিরাজ করছে এখন উৎসব আমেজ। কসবা উপজেলার সোনারগাঁ গ্রামের বাসিন্দা ও জেলা পুলিশ কনস্টেবল মোঃ জাকারিয়া আলমের সঙ্গে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে হাবিবার বিয়ে। বিয়েতে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক, সংসদ সদস্য র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এবং সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা, রাজনীতিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণী-পেশার তিন শতাধিক মানুষ উপস্থিত থাকবেন। বিয়ের সব খরচাপাতির ব্যবস্থা করেছেন পুলিশ সুপার। হাবিবার সঙ্গে বিয়ে দেয়ার জন্য জাকারিয়াকে পুলিশে চাকরির ব্যবস্থাও তিনিই করেছেন। বিয়ের জন্য দাওয়াতপত্র বিতরণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সূত্র জানায়, ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারী শিশু পরিবার ছাড়তে হচ্ছে হাবিবাকে। তাই তাকে পুনর্বাসনের জন্য শিশু পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বিয়ের জন্য ভাল ছেলের সন্ধান পেলে তার চাকরির ব্যবস্থা করারও আশ্বাস দেন তিনি। পরে হাবিবার জন্য পছন্দ করা পাত্র জাকারিয়াকে সম্প্রতি জেলা পুলিশে কনস্টেবল পদে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন পুলিশ সুপার। পরে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্বও নিজ কাঁধে তুলে নেন তিনি। সরকারী শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক রওশন আরা জানান, বিয়ের আয়োজনসহ সবকিছুই এসপি করছেন। এ বিয়ে সমাজের একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, শিশু পরিবার ছেড়ে দিতে হবে ভেবে হাবিবা অনিশ্চয়তায় ভুগছিল। প্রথমে ভেবেছিলাম মেয়েটির জন্য চাকরির ব্যবস্থা করব। কিন্তু পরবর্তীতে তাকে ভাল পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ জন্য একটি ছেলেকে পুলিশের চাকরি দেয়া হয়েছে। সরকারী শিশু পরিবারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ হয় হাবিবার আর আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় বিয়ের অনুষ্ঠান। এখানে বর যাত্রীসহ অন্তত তিন শতাধিক অতিথি উপস্থিত থাকবেন। সন্ধ্যায় এসপির সরকারী বাসভবন থেকে হাবিবাকে তার বরের হাতে তুলে দেবেন। বিয়েতে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক সোনার গহনার সেট এবং সংসদ সদস্য র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বর-কনের থাকার জন্য ঘর নির্মাণ করে দেবেন। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রাজনীতিবিদ, সরকারী কর্মকর্তা, সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে উপহার হিসেবে দেয়া হবে আরও স্বর্ণালঙ্কার, টিভি-ফ্রিজসহ নানান আসবাবপত্র।
×