ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১১ জনের নামে মামলা

সাতক্ষীরায় গণধর্ষণের পর গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যা

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৪ জুলাই ২০১৭

সাতক্ষীরায় গণধর্ষণের পর গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ স্বামীর একাধিক বিয়ের প্রতিবাদ করায় যাত্রাদলের নায়িকা ধর্মান্তরিত গৃহবধূ টুম্পা খাতুনকে গণধর্ষণের পর তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে হত্যার অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১১ জনের নামে মামলা দায়ের হয়েছে। জেলার আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমসহ ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন আশাশুনির পিরোজপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেন সরদারের ছেলে শহীদুল ইসলাম। ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক সাতক্ষীরার জেলা ও দায়রা জজ জোয়ার্দার আমিরুল ইসলাম অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আশাশুনি থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। আসামিরা হলেন আশাশুনি উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের গহর গাজীর ছেলে নিহত টুম্পার স্বামী সাইফুল্লাহ গাজী (৩৮), একই গ্রামের ওমর আলী সরদারের ছেলে রিপন সরদার (৩০), এছহাক সরদারের ছেলে আবু মুছা (৩০), গদাইপুর গ্রামের মোজাহার সরদারের ছেলে খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম, দুর্গাপুর গ্রামের করিম বক্সের ছেলে কামরুল ইসলাম (৪৫), তার ভাই আনারুল ইসলাম (৩৫), আছির উদ্দিনের ছেলে লাভলু গাজী (৩৫), খালেক সরদারের ছেলে মহসিন সরদার (২৪), শহর আলীর ছেলে খায়রুল ইসলাম (২৮) চেউটিয়া গ্রামের লতিফ সরদারের ছেলে কবীর হোসেন (৩৬) ও খুলনা জেলা শহরের সোনাডাঙা গোবর চাকা মেইন রোডের আবুল হোসেনের ছেলে চিশতি ওরফে চুন্নু চোরা (৪০)। এছাড়া আরও অজ্ঞাতনামা পাঁচ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলার অভিযোগ অনুযায়ী ৫ বছর আগে গোপালগঞ্জ জেলা সদরের বটবাড়ি গ্রামের মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাসের মেয়ে সোমা বিশ্বাসকে (২৫) ফুসলিয়ে নিয়ে খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমের সহযোগিতায় ধর্মান্তরিত করে টুম্পা খাতুন নাম দিয়ে তাকে বিয়ে করেন একই উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের মাদকাসক্ত সাইফুল্লাহ। বর্তমানে তাদের মরিয়ম নামে দু’বছর দু’মাসের একটি মেয়ে আছে। সাইফুল্লার প্রথম স্ত্রী বর্তমানে খাজরা সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য তমেনা। এছাড়া দু’মাস আগে ওই যাত্রাদলের এক নারীকে ও আড়াই মাস আগে অন্য একটি যাত্রাদলের মেয়েকে বিয়ে করে সাইফুল্লাহ। বর্তমানে তার ছয় স্ত্রী। এ নিয়ে নিহত টুম্পার সঙ্গে সাইফুল্লার বিরোধ চলছিল। ক্রমাগত বিয়ে করার প্রতিবাদ করায় নির্যাতন চলত টুম্পার ওপর। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে সে। গত ৯ জুন রাত তিনটার দিকে টুম্পা তার স্বামীর বাগদা চিংড়ির হ্যাচারির ঘরে স্বামী সাইফুলের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল। এ সময় সে বাসার পাশে কয়েকজনকে কথা বলতে শোনে। অভিযোগÑ স্বামীর উপস্থিতিতে এরপরই শাহনেওয়াজ ডালিমসহ ১৪/১৫ জন টুম্পাকে গণধর্ষণ করে। পরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে ও কাঁথা জড়িয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। ১০ জুন টুম্পাকে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও পরে তাকে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ জুন সকালে টুম্পা খাতুন মারা যায়। নিজেরা বাঁচতে আসামিরা পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশ করে টুম্পা খাতুনের লাশ পিরোজপুরে দাফন করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। আদালত মামলায় মৃত্যুর কারণ সঠিকভাবে নিরূপণ করার জন্য লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করার কথা বলা হয়েছে। মামলার বাদী নিজেকে নিহত টুম্পা খাতুনের ধর্ম ভাই বলে উল্লেখ করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৪(১)/৯(২)/৯(৩)/৩০ ধারায় মামলা হয়েছে।
×