ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৩৮ জনের পরিবার চিহ্নিত ;###;চাপের মুখে কেউ কেউ দেশে ফেরার চেষ্টা করছে ;###;তাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে রেড এ্যালার্ট জারি ;###;নিখোঁজ দুই শতাধিক

ইরাক-সিরিয়ায় নিহত অন্তত ২০ ॥ আইএসে এক শ’ বাংলাদেশী তরুণ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৪ জুলাই ২০১৭

ইরাক-সিরিয়ায় নিহত অন্তত ২০ ॥ আইএসে এক শ’ বাংলাদেশী তরুণ

গাফফার খান চৌধুরী ॥ প্রায় এক শ’ বাংলাদেশী দেশের বাইরে গিয়ে জঙ্গী সংগঠন আইএসে যোগ দিয়েছে বলে তথ্য রয়েছে গোয়েন্দাদের হাতে। এর মধ্যে অন্তত বিশ জনের মৃত্যু ঘটেছে। ৩৮ জনের পরিবারকে চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দারা। এখনও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দুই শতাধিক তরুণ-তরুণী নিখোঁজ রয়েছে। বিদেশে অবস্থানকারী জঙ্গীদের আমৃত্যু দেশে ফেরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। নিখোঁজ বাকি তরুণ তরুণীদের মোস্টওয়ান্টেড হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাদের ছবিযুক্ত তালিকা পাঠানো হয়েছে বিমানবন্দর ও দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিবিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। পাশাপাশি একই তালিকা আমেরিকা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে আদান-প্রদান করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, আইএসে যোগদানকারীদের মধ্যে অন্তত ২০ বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছে। তবে চারজনের পরিচয় জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আইএসে যোগদানকারী জীবিত ও মৃত বাংলাদেশীদের পবিরারের ওপর সম্প্রতি গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়া আইএস জঙ্গীরা ইরাক ও সিরিয়া থেকে পালাচ্ছে। তাদের কেউ কেউ দেশে ফেরার চেষ্টা করছে বলে তথ্য রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। বাংলাদেশী আইএস জঙ্গীদের দেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতেই সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেসব বাংলাদেশী আইএসের হয়ে যুদ্ধ করেছে তাদের যেকোন মূল্যে দেশে অনুপ্রবেশ ঠেকানো হবে। এরা দেশে ঢুকতে পারলে আবার জঙ্গীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করবে। এরা দেশ ও জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে নিখোঁজ যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা প্রায় দুই শ’। নিখোঁজদের কারও বয়সই পনেরো বছরের নিচে নয়। সর্বোচ্চ প্রায় ৫০ বছর বয়সীও রয়েছে। এর মধ্যে শ’খানেক যুবক-যুবতী জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েছে। অধিকাংশই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। এদের মোস্টওয়ান্টেড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা ইরাক ও সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, নিখোঁজদের মধ্যে বনানীর তাওসীফ হোসেন; খিলগাঁও চৌধুরীরপাড়ার ডাঃ রোকনুদ্দীন খন্দকার, তার স্ত্রী নাইমা আক্তার, তাদের দুই মেয়ে রেজওয়ানা রোকন ও রামিতা রোকন, ছেলে সাদ কায়েস; তেজগাঁওয়ের মোহাম্মদ বাশারুজ্জামান; বাড্ডার জুনায়েদ খান; চাঁপাইনবাবগঞ্জের নজিবুল্লাহ আনসারী; ঢাকার আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম, ইব্রাহীম হাসান খান; লক্ষীপুরের এটিএম তাজউদ্দিন; ঢাকার ধানম-ির জুবায়েদুর রহিম; সিলেটের মোহাম্মদ ডাঃ সাইফুল্লাহ ওজাকি; মোহাম্মদপুরের জুন্নুন শিকদার (জঙ্গীবাদে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে একবার গ্রেফতার হয়ে জামিনে মুক্ত) আইএসে যোগ দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ডাঃ সাইফুল্লাহ ওজাকি ছিল জাপান প্রবাসী। সপরিবারে জাপানে থাকত। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে আইএসে যোগ দিয়েছিল। আইএসের হয়ে এক সম্মুখযুদ্ধে ডাঃ সাইফুল্লাহ ওজাকি নিহত হয়। ওজাকির মৃত্যুর খবর পরবর্তীতে তার পরিবারের কাছ থেকেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ব্যাপারে তার পরিবারের সদস্যদের জবানবন্দীও নেয়া হয়েছে। জবানবন্দী থেকে বোঝা যায়, ওজাকির পরিবার ধর্মের প্রতি অতিরিক্ত ভক্তি ও শ্রদ্ধাশীল। ওজাকির মৃত্যুতে তার পরিবার মোটেও বিচলিত নয়। ওজাকির পরিবারের সদস্যরা মনে করেন, আল্লাহর রাস্তায় গিয়ে ওজাকির মৃত্যু হয়েছে। মহান আল্লাহ ওজাকিকে কবুল করেছেন। ওজাকির স্ত্রী-সন্তানরা আইএসের কাছে ভাল রয়েছে বলে ওজাকির পরিবারের দাবি। গোয়েন্দা সূত্রটি বলছে, সর্বশেষ নিখোঁজদের তালিকায় রয়েছে রিদওয়ান ইসলাম তুহিন, আব্দুর রহমান মাসুদ, ডাঃ আরাফাত আল আজাদ ওরফে আবু খালিদ আল বাঙ্গালী ওরফে ডাঃ তুষার, প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার মৃত সাইফুর রহমানের ছেলে তাহমিদ রহমান সাফি ওরফে আবু ইছা, অবসরপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ আবু মূসার ছেলে মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইমুন হাছিব মোনাজ, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মোহাম্মদ ইকবালের জামাতা একেএম তুরকিউর রহমান, সায়মা আক্তার মুক্তা ও তার বোন রাবেয়া আক্তার টুম্পা। এছাড়া ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ অধ্যাপক ড. রেজাউর রাজ্জাকও নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি আইএসে যোগ দিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদের ছাড়াও ২০১০ সালে ইয়েমেনে যাওয়া এক ছাত্রী তাছমুদা হায়দার, রেজোয়ান শরীফ ও মাইনুদ্দিন শরীফের অবস্থান জানা যায়নি। তারাও নিখোঁজ রয়েছে। ওই সময় বেসরকারী নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থী নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সদস্য ইয়েমেনে গিয়েছিল। এদের মধ্যে তেহজীব করিম ব্রিটিশ এয়ারলাইন্স উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনার দায়ে গ্রেফতার হয়ে ২০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়। আর নাফিস আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে ৩০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়। ওই সময় গ্রেফতার হয় রেজোয়ান ও মাইনুদ্দিন। পরবর্তীতে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর তথ্য পাওয়া গেলেও আজও তাদের হদিস মেলেনি। দেশে আসার পর থেকেই তারা নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়া গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ শিশুপার্ক, ঢাকা ক্লাব ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে হামলা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য রেকির সময় গ্রেফতার হয়ে জামিনে ছাড়া পাওয়া রাইয়ান মিনহাজ ওরফে রাইমু ওরফে আরমি (২৪), আহম্মেদ শাম্মুর রাইহান ওরফে চিলার (২৩) ও তৌহিদ বিন আহম্মেদ ওরফে রিয়াজ ওরফে কাচ্চি (২৪) আজও নিখোঁজ। এরা কোন না কোনভাবে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশ হয়ে আইএসে যোগ দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকে গিয়ে আইএসে যোগদানকারীর সংখ্যা ৩৮ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সূত্র বলছে, নিখোঁজ দুই বোন সায়মা আক্তার মুক্তা ও রাবেয়া আক্তার টুম্পা সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগদান করে। গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের করফা গ্রামের মৃত সোলেমান শেখের মেয়ে সায়মা আক্তার মুক্তা ও রাবেয়া আক্তার টুম্পা স্বামী-সন্তানসহ কয়েক বছর ধরে নিখোঁজ। মুক্তা ও টুম্পার বিয়ে হয়েছিল খুলনার পাকুড়তিয়া গ্রামের একেএম আবুল হাসনাতের দুই ছেলে সাইফুল হক সুজন ও শরীফুল হক ইমনের সঙ্গে। জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়া দুই ভাইকে দুই বোন বিয়ে করে। প্রসঙ্গত, জঙ্গী সংগঠনগুলোতে নিজেদের মধ্যে বিয়ে হওয়ার প্রবণতা বেশি। এদের মধ্যে মুক্তার স্বামী সুজন ২০১৫ সালে সিরিয়ায় আইএসের আস্তানায় বিমান হামলায় নিহত হয় বলে ২০১৬ সালে টুঙ্গীপাড়া থানার ওসি মাহমুদুল হক জানান। গোয়েন্দা সূত্রটি বলছে, সম্প্রতি আইএসের মুখপত্র হিসেবে আমাক নিউজ এজেন্সি আরও এক বাংলাদেশী আইএস যোদ্ধার মৃত্যুর খবর দেয়। এছাড়া টুম্পা ও মুক্তার মধ্যে সিরিয়ায় যুদ্ধ ময়দানে একবোনের মৃত্যু হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। সব মিলিয়ে আইএসে যোগদানকারী বাংলাদেশীদের মধ্যে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত কোন দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ওই সূত্রে জানা গেছে, যেসব বাংলাদেশী আইএসে যোগ দিয়েছে তাদের আমৃত্যু বাংলাদেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইএসের আধিপত্য শেষেরদিকে। বিভিন্ন দেশ থেকে ইরাক ও সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দেয়া যোদ্ধারাও পালাতে শুরু করেছে। তাদের অনেকেই নিজ দেশ ও পার্শ্ববর্তী দেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। তাদের প্রবেশ ঠেকাতে বিশ্বের প্রতিটি দেশ যেসব দেশের নাগরিক আইএসে যোগ দিয়েছে সেসব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তাদের তালিকা চেয়েছে। আমেরিকা, ভারত, জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি তাৎক্ষণিক তথ্যের ভিত্তিতে যার যার দেশে ওই সময়ই অভিযান পরিচালনার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় যেসব বাংলাদেশী আইএসে যোগ দিয়েছে তাদের ছবিযুক্ত তালিকা পাঠানো হয়েছে দেশের সব বিমানবন্দর, সীমান্ত পয়েন্ট ও পার্শ্ববতী দেশ ভারতের কাছে। ছদ্মবেশে কোন বাংলাদেশী আইএস যোদ্ধা যাতে ভারতে প্রবেশ করে, পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে এজন্যই এমন সতর্কতা। সীমান্তে ও বিমানবন্দরে এ ব্যাপারে সর্বক্ষণিক রেড এলার্ট বলবৎ থাকবে। আইএসে যোগদানকারীদের পরিবারের ওপর নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) আব্দুর রশীদ মনে করেন, যেসব বাংলাদেশী আইএসে যোগ দিয়েছে এবং যারা আইএস বা এ ধরনের জঙ্গীবাদকে সমর্থন করে সরকারের উচিত তাদের প্রতিহত করা। অন্যথায় দেশে জঙ্গীবাদ আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, যারা জঙ্গীবাদে জড়িত তারা যেকোন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশেষ করে যেসব বাংলাদেশী বিদেশের মাটিতে আইএসের হয়ে যুদ্ধ করেছেন তারা দেশ ও জাতির জন্য বড় ধরনের হুমকি। কারণ তারা দেশে প্রবেশ করতে পারলে, তারা তাদের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করবে। আর অতীত ইতিহাস বলছে, আইএসের যোদ্ধারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে পারলে, নিশ্চিতভাবে নব্য জেএমবি মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। কারণ নব্য জেএমবির সদস্যরাই আইএসের সমর্থক। দুনিয়া কাঁপানো গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলার সঙ্গে জড়িতরাও ছিল নব্য জেএমবির সদস্য। আইএসের নামে তাদের ছবি প্রকাশিত হয়। যেসব নিখোঁজ ব্যক্তি দেশ ত্যাগ করে আইএসে গিয়ে যোগ দিয়েছে তাদের অনেকেরই যাওয়ার আগে নব্য জেএমবিকে গাড়ি-বাড়ি বিক্রি করে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করার সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম ঢাকা শিশু হাসপাতালের ডাঃ রুকুনুদ্দিন ও আজিমপুরে পুলিশের অভিযানে নিহত নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তানভীর কাদেরী। ডাঃ রুকুনুদ্দিন সপরিবারে নিখোঁজ হওয়ার আগে নিজের বাড়ি-গাড়ি বিক্রি করে নব্য জেএমবিকে প্রায় কোটি টাকা দিয়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে গেছে। একইভাবে তানভীর কাদেরীও নিজের উত্তরা ফ্ল্যাট ও গাড়ি বিক্রি করে সব টাকা নব্য জেএমবিকে দিয়েছে। রাজধানীর রূপনগরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত মেজর (অব) জাহিদের একইভাবে নব্য জেএমবিকে অর্থায়ন করার সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। বিদেশে জঙ্গীবাদে জড়িত থাকা বাংলাদেশীদের দেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি ইউনিটকে লিখিতভাবে সতর্ক করা হয়েছে বলে জনকণ্ঠকে জানান ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, তাদের তালিকা বিমানবন্দর, সীমান্ত পয়েন্টসহ প্রয়োজনীয় সব জায়গায় দেয়া আছে। এমনকি জঙ্গীদের পরিবারের বিষয়েও তাদের নজরদারি আছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) আব্দুর রশীদ অতীত ইতিহাস টেনে বলছেন, জঙ্গীবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে লন্ডনে গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেফতার হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মাওলার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারলে হয়ত কোনদিনই বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীরের মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের জন্ম হতো না। আইএসে যোগ দেয়া বাংলাদেশীরা দেশে অনুপ্রবেশ করতে পারলে এদেশেও যে একদিন আইএস মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে না; তা সুনিশ্চিত করে বলা কঠিন। কারণ, আফগান ফেরত যোদ্ধাদের বাংলাদেশে ফেরত আসার পর থেকে দেশের অতীতের জঙ্গীবাদের ইতিহাস তেমনই ইঙ্গিত দেয়। প্রসঙ্গত, নব্বই দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মাওলা কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে লন্ডনে যান পড়াশোনা করতে। সেখানেই তিনি হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। যদিও আজও ব্রিটেনে হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ নয়। তিনি দেশটির নাগরিকত্বও লাভ করেছিলেন। কিন্তু জঙ্গীবাদে জড়িত থাকার কারণে তিনি কঠোর গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে ছিলেন। নজরদারির মতো অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আবার পুরনো কর্মস্থল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এরপর থেকেই তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ২০০২ সালের ডিসেম্বরের শেষদিকে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের বাংলাদেশ শাখা গঠনের চেষ্টা করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর শিক্ষক অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদ, পরবর্তীতে ঢাকার বনানীর বেসরকারী নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শেখ তৌফিককে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গী সংগঠনটির কমিটি গঠন করেন। ২০০৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্যেই সংগঠনটির তৎপরতা শুরু হয়। সংগঠনটিকে কার্যক্রম চালাতে নিজেদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁটাবন ঢালে খায়রুন্নেছা ভবনে অফিস খুলে দিয়েছিল ছাত্রশিবির। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৫৩ দেশে জঙ্গী সংগঠন হিসেবে দলটি নিষিদ্ধ। ২০০৮ সালে পাকিস্তান সরকার সে দেশে সংগঠনটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে।
×