ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অসাধু চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ॥ কালো তালিকায় ১৬০০০

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৪ জুলাই ২০১৭

অসাধু চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ॥ কালো তালিকায় ১৬০০০

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবৈধভাবে চাল মজুদ করে বাজার অস্থিতিশীল করায় ১৬ হাজার মিল মালিককে তিন বছরের জন্য ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার নিজ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ সময় মন্ত্রী জানান, কালো তালিকাভুক্ত এসব মিলারের কাছ থেকে আগামী তিন বছর সরকার চাল কিনবে না। কামরুল বলেন, বাজারে চালের দাম বাড়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা হাওড়াঞ্চলে অকাল বন্যার পর থেকেই চাল মজুদ করেছিল। আমরা যে ক্রয়মূল্য (৩৪ টাকা) দিয়েছিলাম, বাজারের মূল্যের সঙ্গে বিরাট ফারাক ছিল। ফলে আমরা সংগ্রহ করতে পারিনি। অসাধু চাল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, যেসব মিল মালিক অসাধুভাবে চাল মজুদ করেছে তাদের আমরা তিন বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করেছি। তাদের কাছ থেকে আমরা আর চাল কিনব না। টানা কয়েক বছর বাম্পার ফলনে চালের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও এবার বোরো মৌসুমে আগাম বন্যায় সরকারী হিসাবে ছয় লাখ টনের মতো ধান নষ্ট হয় হাওড়ে। পাশাপাশি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীতে ১০ টাকা কেজি দরে সাড়ে সাত লাখ টন চাল বিতরণ করায় সরকারী মজুদ কমে আসে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে চালের দাম বাড়তে শুরু করলে সরকার উদ্যোগী হয়। সরকারী পর্যায়ে চাল আমদানির জন্য দরপত্র দেয়ার পাশাপাশি বেসরকারী পর্যায়ে আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। রোজার মধ্যে চালের দাম বৃদ্ধি পেলে পাইকার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ছিল, স্থানীয় পর্যায়ের শিল্প গ্রুপগুলো অটোমিল করে সারা দেশের চালের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে সরকার চেষ্টা করেও তখন চালের মূল্য স্বাভাবিক অবস্থায় নামিয়ে আনতে পারেনি। দেশে এক সময় সনাতন পদ্ধতির চাতাল থেকে চাল উৎপাদন হলেও এখন চালের বড় অংশের সরবরাহ আসে অটো রাইস মিল থেকে। বাংলাদেশ অটো মেজর হাস্কিং রাইস মিল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, এই সংখ্যা ১৬ হাজারের মতো। বাংলাদেশে সরকারীভাবে তালিকাভুক্ত চালকলের সংখ্যা জানতে চাইলে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বদরুল হাসান পরে বলেন, দেশে প্রায় ২০ হাজার মিল আছে, যাদের মধ্যে ১৬ হাজার মিলকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সরকারীভাবে তালিকাভুক্ত চার হাজার মিল থেকে চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা সম্ভব কিনাÑ এ প্রশ্নে বদরুল বলেন, সরকার অভ্যন্তরীণভাবে ১০ থেকে ১২ লাখ টন চাল সংগ্রহ করে। এই পরিমাণ চাল দুই থেকে আড়াই হাজার মিল থেকেই সংগ্রহ করা যাবে। খাদ্যমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, বেসরকারীভাবে ভারত থেকে চাল আসার পর মজুদকরীরা এখন ধরে রাখা চাল বাজারে ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারীভাবে ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা চালের প্রথম চালানে ২০ হাজার মেট্রিক টন চাল নিয়ে একটি জাহাজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে এসেছে জানিয়ে কামরুল বলেন, কিছু কাস্টমসে কাজ আছে, সেগুলো যদি আজকে (বৃহস্পতিবার) শেষ হয় তাহলে কালকে সকাল থেকে খালাস করতে পারব। আর যদি শেষ হতে বিলম্ব হয় তাহলে রবিবার খালাস হয়ে যাবে। ভিয়েতনাম থেকে সরকারীভাবে মোট আড়াই লাখ টন চাল আমদানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় চালানে ১৮ জুলাই ২২ হাজার টন এবং ৩০ জুলাই ২১ হাজার টন ও ৩০ হাজার টনের চালান দেশে আসবে বলে জানান কামরুল। ভিয়েতনামে বাকি চাল জাহাজে তোলা শুরু হয়ে গেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আগামী ১৫ থেকে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে সব চাল লোডিং শেষ হবে, এরপর আসতে যতটুকু সময় লাগে। সরকারীভাবে চাল আনতে চারটি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবারও আরেকটি দরপত্র হয়েছে। দরপত্র ৪০ দিনের মধ্যে চাল সরবরাহ করতে বলা হচ্ছে। ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকেও সরকারীভাবে চাল আসছে। সাড়ে চার লাখ মেট্রিক টন চাল পাইপ লাইনে আছে। যে চালগুলোর বেশিরভাগ এই মাসের মধ্যে পেয়ে যাচ্ছি। আগস্টের মধ্যে সাড়ে চার লাখ টন চাল আমাদের ঘরে চলে আসবে। আমরা আশা করছি, এর কোন ব্যত্যয় ঘটবে না। চাল আমদানির জন্য আবারও দরপত্র আহ্বান করা হবে বলে জানান তিনি। তিনি জানান, আগামী ১৬ জুলাই ভারতের একটি প্রতিনিধি দল এবং ২৮ জুলাই থাইল্যান্ডের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা আসবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তাদের সঙ্গে বসে দরদাম ঠিক করে জি টু জি ভিত্তিতে চাল আনা হবে। এছাড়া কম্বোডিয়া সমঝোতা চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আগস্টে কম্বোডিয়া যাব। সেখান থেকেও জি টু জি ভিত্তিতে চাল আনতে পারব। মিয়ানমারও আমাদের চাল দিতে আগ্রহী। মজুদ কম থাকায় চালের দাম বেড়েছেÑ এমন প্রশ্নে কামরুল বলেন, এটা যারা বলেছে তারা ভুল ব্যাখ্যা করছে। আমরা শুধু সরকারী বিতরণ ব্যবস্থায় চাল সরবরাহ করি। বর্তমানে চালের মজুদ কত এই প্রশ্নে কামরুল বলেন, পর্যাপ্ত মজুদ আছে। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত মজুদ আছে, এখন এই মুহূর্তে ত্রাণ তৎপরতা ছাড়া খরচ করার অন্য কোন খাত নাই। সেপ্টেম্বরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী আসবে। যে কোন ব্যাপারে সহায়তা দেয়ার মতো যথেষ্ট পরিমাণ চাল মজুদ আছে, মজুদ কেবল বাড়ছেই। মজুদ কতটুকুÑ আবারও এমন প্রশ্নে কামরুল বলেন, আমি আর কিছুই বলতে চাই না। আমি বলতে চাই, ট্যারিফ উঠিয়ে দেয়ার পর ঈদের পর থেকে ভারত থেকে বেসরকারীভাবে ৮৪ হাজার টন চাল দেশে এসেছে। এখন আমাদের কোন রকম সমস্যা নাই, অভ্যন্তরণীভাবেও চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। কামরুল বলেন, আমাদের মজুদ আগস্টের মধ্যে হ্যান্ডসাম করতে পারব এবং আগামী মাসের মধ্যে ৮ থেকে ১০ লাখ টন মজুদ আমাদের হবে। আগস্ট- সেপ্টেম্বরের মধ্যে মজুদ কমপক্ষে ১২ লাখ টন করতে চাচ্ছি। সাংবাদিকদের এ নিয়ে আর নেতিবাচক খবর পরিবেশনের সুযোগ থাকবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখন থেকে মজুদ সংক্রান্ত বিষয়ে আপনাদের ইতিবাচক খবরই আশা করছি। তিনি বলেন, আমরা যথাসময়ে চাল আমদানি প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আমরা ট্যারিফ উঠিয়ে দেয়ার জন্য আগেই চিঠি লিখেছিলাম, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের স্বার্থের কথা চিন্তা করেছেন। কৃষকরা যেন তাদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পান, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী ট্যারিফটা দেরিতে উঠিয়েছেন এবং ট্যারিফটা যথাসময়ে উঠিয়েছেন। যথাসময়ে ট্যারিফ উঠানোর যে প্রতিক্রিয়া, সে প্রতিক্রিয়া আমরা লক্ষ্য করছি, বাজার ক্রমান্বয়ে নিম্নমুখী হচ্ছে।
×