ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

৯০ কন্টেনার পণ্য আমদানি কিভাবে ঘটল?

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ১৪ জুলাই ২০১৭

৯০ কন্টেনার পণ্য আমদানি কিভাবে ঘটল?

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মিথ্যা ঘোষণায় ৯০ কনটেনারে পণ্য আমদানির আড়ালে হাজার কোটি টাকা পাচারের যে অভিযোগ উঠেছে তাতে যোগসাজশ রয়েছে ব্যাংক, কাস্টমস ও বন্দরের অসাধু কর্মকর্তাদের। প্রথম প্রজম্মের একটি ব্যাংক, চট্টগ্রাম কাস্টমস ও বন্দরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতার কারণেই ৯০ কন্টেনার পণ্য আমদানির আড়ালে হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এমন তথ্য মিলেছে শুল্ক গোয়েন্দার তদন্তে। এতে দায়ী করা হয়েছে, কনটেনার স্ক্যানিংয়ে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান এসজিএসকেও। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম প্রজম্মের ওই ব্যাংকের নয়াপল্টন ও মতিঝিল বৈদেশিক বাণিজ্য শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা খোরশেদ আলমের নামে এ্যাকাউন্ট ও এলসি খোলা থেকে সব ধরনের অনিয়ম করেছেন। দেশের সবচেয়ে বড় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে বেড়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। এরপরেও এখানে নীরবে ঘটে চলেছে মিথ্যা ঘোষণার অবৈধ পণ্য আমদানি এবং এর আড়ালে মুদ্রা পাচার। তবে সবকিছু ছাপিয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মুদ্রা পাচারের ঘটনা ধরা পড়েছে শুল্ক গোয়েন্দার তদন্তে। আটক ১২ কন্টেনারের আড়ালে আরও ৭৮টির মাধ্যমে পাচার হয়েছে হাজার কোটি টাকা। প্রশ্ন উঠেছে শুধু ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে আর সই জালিয়াতি করে এত বিশাল অংকের টাকা পাচার করা সম্ভব কিনা? অনুসন্ধান বলছে, এই পুরো কার্যক্রমকে সফল করতে স্তরে স্তরে কাজ করছে বন্দর, কাস্টমস ও ব্যাংকের নয়াপল্টন ও মতিঝিল শাখার অসাধু কর্মকর্তারা। জাহাজ থেকে মাল খালাসের সময় কনটেনারের ভেতর কি আছে তা দেখেনি দায়িত্বরত কাসটমস কর্মকর্তারা। এরপর বেসরকারী সংস্থা এসজিএসের নিয়ন্ত্রণাধীন উচ্চ প্রযুক্তির স্ক্যানারে এসব কনন্টেনার পরীক্ষা করার কথা। কাগজে কলমে স্ক্যান রিপোর্ট থাকলেও এসজিএস বলছে তা সেখানে হয়নি! তাদের দাবি কেউ তাদের পাসওয়ার্ড হ্যাক করে ভুয়া ই-মেইল পাঠিয়েছে কাস্টমসকে। স্ক্যান রিপোর্ট পাওয়ার পর গেট দিয়ে একে একে বেরিয়ে গেছে ৭৮ কনন্টেনার। অনুসন্ধানে গিয়ে পাওয়া যায় কাস্টমসে ছাড় করার পর খুব স্বাভাবিকভাবে কোন নজরদারি ছাড়াই কনন্টেনারগুলো বন্দর দিয়ে বেরিয়ে গেছে। তবে কাস্টমস বলছে, এসজিএসের স্ক্যানিং মেইল পেয়েই এগুলো ছাড় করা হয়েছে। আবার কাস্টমসের ছাড়পত্র পাওয়ায় আপত্তি করেননি বন্দরের গেট ডিভিশনের দায়িত্বরত কর্মীরাও। এভাবেই ৭৮ কনন্টেনার ছাড়ে পদে পদে ঘটেছে অনিয়ম। চট্টগ্রাম কাস্টমস জানায়, পণ্যগুলো শিল্পের যন্ত্রপাতি ঘোষণায় মাত্র ১ শতাংশ শুল্ক হওয়ায় তা পরীক্ষা করা হয়নি। গন্তব্য ব্যাংকের নয়াপল্টন শাখায় গিয়ে দেখা গেছে, ভুয়া আমদানিকারক সাজিয়ে খোরশেদ আলমের নামে এ্যাকাউন্ট খুলেছেন এক সিনিয়র অফিসার। যিনি খোরশেদ আলমের সব পরিচিতি, কাগজপত্র পরীক্ষা না করেই এবং যার নামে কোন ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান না থাকা সত্ত্বেও তা যথাযথ এবং পরিদর্শন করা হয়েছে বলে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। এরপর ঋণপত্র খোলা, দেশে আমদানিকারক ও সিংঙ্গাপুরের রপ্তানিকারক যমনাজ ইন্ডাস্ট্রিজ সম্পর্কে তথ্য যাচাই করার পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গেই ছিলেন একই শাখার আরেক কর্মকর্তা। ঘটনা জানাজারি পর এখন ব্যাংক কর্মকর্তারা একে অন্যের উপর দায় চাপাচ্ছেন। তবে তাদের দেয়া লিখিত বক্তব্যে অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে। একই অবস্থা মতিঝিল ফেডারেশন শাখায়। যেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ছিল ক্রেডিট রিপোর্ট যাচাই করার, অথচ তারা কেউই দায়িত্ব পালন করেননি।
×