ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উৎপাদন বন্ধ বিচ হ্যাচারির অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১৪ জুলাই ২০১৭

উৎপাদন বন্ধ বিচ হ্যাচারির অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অস্বাভাবিকহারে দর বাড়ছে পুুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য খাতের কোম্পানি বিচ হ্যাচারি। তবে বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দর কমেছে দশমিক ৬০ টাকা অর্থাৎ ৩.০৬ শতাংশ করে। প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ও ব্যবসায় পরিবর্তনের খবরেই অব্যাহতভাবে দর ওঠানামা করছে। তবে বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তাদের বক্তব্য, একটি চক্র নিজেদের ফাইদা হাসিল করার জন্য গুজব ছড়িয়ে শেয়ারের দর বাড়াচ্ছে। তারা নিজেরাই শেয়ার কেনাবেচার মাধ্যমে কারসাজি করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ঠকাচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে বিচ হ্যাচারির উৎপাদন। যে কারণে শেয়ারধারীদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যার কারণে প্রতিষ্ঠানটি জেড ক্যাটাগরিতে নেমে গেছে। গত ২০০২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় বিচ হ্যাচারি লিমিটেড। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার মহেশখালীপাড়া এলাকায় ৯ দশমিক ২ একর জমির ওপর কোম্পানির হ্যাচারি। কোম্পানিটি চিংড়ির পোনা উৎপাদন ও বিপণন করে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। সম্প্রতি হঠাৎ করেই এ শেয়ারের দর বাড়তে শুরু করে। কোন সংবেদনশীল তথ্য না থাকলেও নেপথ্যে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা পরিবর্তন হচ্ছে এমন খবর। অচিরেই প্রতিষ্ঠানটির র‌্যাংগস গ্রুপ কিনে নিচ্ছে পুঁজিবাজারে এমন খবর ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রেণুু উৎপাদন বন্ধ করে প্রতিষ্ঠানটির অন্য ব্যবসায় ঝুঁকে যাওয়ার খবর। যার জের ধরে প্রতিনিয়ত বাড়ছে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর। আর এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারী না বুঝে বিনিয়োগ করছে অতিমূল্যায়িত এ শেয়ারে। এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সচিব নূর ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানটির মালাকানা অথবা ব্যবসায় পরিবর্তন আসছে এমন কোন খবর আমাদের কাছে নেই। কোন একটি চক্র এই শেয়ার নিয়ে কারসাজি করছে। সম্ভবত তারাই এই গুজব কাজে লাগিয়ে নিজেদের ফাইদা হাসিল করার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি শেয়ারের দর উর্ধমুখী থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের কাছে এমন কোন সংবেদনশীল তথ্য নেই যাতে শেয়ারের দর বাড়তে পারে। ব্যবসায় পরিবর্তন আসছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন এ বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। অন্যদিকে এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে এমন খবর জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের অন্য এক উর্ধতন কর্মকর্তা। তিনি জানান, তাদের কাছে খবর রয়েছে মালিকানা পরিবর্তনের গুজব ছড়িয়ে একটি চক্র এই শেয়ার কেনাবেচা করে স্বার্থসিদ্ধি করছে। সম্প্রতি উৎপাদন বন্ধ থাকা এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর বেড়েছে প্রায় ৮৪ শতাংশ। দুই মাসের ব্যবধানে ১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে দর চলে এসেছে ২৩ টাকায়। যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দর। মঙ্গলবার দিন শেষে প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয় ২১ টাকা ৭০ পয়সায়। অন্যদিকে গত দুই বছরের লেনদেনের চিত্রে দেখা গেছে, শেয়ার সর্বনিম্ন ৮ টাকা দরে কেনাবেচা হতে দেখা যায়। ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর বোনাস শেয়ার প্রদান করেছে এ কোম্পানিটি। জেড ক্যাটাগরির এই প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৪৬.৩৯ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া ৩৪.৯৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে পরিচালকদের কাছে। বাকি ১৮.৬৪ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বিনিয়োগকারী মৌলভিত্তির বিচার না করে যদি গুজবে কান দিয়ে রেলদেন করেন তবে এটা তাদের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। পূর্বে বহুবার তারা এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছেন। এটা থেকে তাদের শিক্ষা নিয়েছেন।
×