ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

উটাহ ইউনিভার্সিটির সমীক্ষা

প্রাচীন রোমান স্থাপত্য সময়কে অতিক্রম করে টিকে রয়েছে যেভাবে-

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ১৪ জুলাই ২০১৭

প্রাচীন রোমান স্থাপত্য সময়কে অতিক্রম করে টিকে রয়েছে যেভাবে-

প্রাচীন রোমান স্থাপত্য এতটাই উৎকৃষ্ট ও মনোমুগ্ধকর যে, প্রতিবছর বহু পর্যটকের ভিড় ইতালির পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করে চলেছে। রোমের ফোরাম, কলোসিয়াম, পিসার হেলালে টাওয়ার, সেন্ট ক্যাথেড্রাল গীর্জাসহ বহু স্থাপত্য নিদর্শন এখনও অনেক মানুষের বিমুগ্ধ দৃষ্টির উপজীব্য। দুই হাজারেরও বেশি সময় ধরে ঝড়ঝঞ্ঝা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় উপেক্ষা করে এসব অট্টালিকা ও স্থাপনা কিভাবে এত সুদৃঢ় অবয়ব নিয়ে টিকে আছেÑ তা নিয়ে মানুষের কৌতূহলের সীমা নেই। কেননা, আধুনিককালের উন্নত প্রযুক্তিতে নির্মিত বিভিন্ন ভবন ও অট্টালিকা শতাধিক বছরেই যে রূপ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েÑসেখানে রোমান প্রযুক্তিতে কী এমন গোপন বিষয় ছিল যাতে এগুলো এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে? অবশেষে একদল মার্কিন খনিবিদ্যা বিশারদ এর জবাব উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। চলতি সপ্তাহে ‘আমেরিকান খনিবিদ্যা বিশারদ’ নামের এক জার্নালে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে। বলা হয়েছে যে, আধুনিক কালের অট্টালিকাগুলো সাগরের নোনা পানির সংস্পর্শে এলে যেমন দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং স্বল্প সময়ে ধসে পড়ে, রোমান ভবনগুলো ছিল তার সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সেগুলো নির্মাণের সময়ে সিমেন্ট হিসেবে আগ্নেয়ভস্ম বা ছাই, চুন ও সাগর জলের সঙ্গে এ্যালুমিনিয়াম টোবার মোরাইট মিশিয়ে যে যৌগ তৈরি হতো তা দিয়ে নির্মিত স্থাপনা হাজার হাজার বছরের পরমায়ু নিয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। অক্ষয় এ অট্টালিকাগুলো আরও দীর্ঘায়ু হতোÑ যদি ইতালি আগ্নেয়গিরি ও ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা না হতো। ভিসুবিয়াসের ধ্বংসলীলার সাক্ষী পক্ষেই ও হারকিউলিয়াম নগরীর কথা আমরা জানি। এ ছাড়া অনেকদিন ধরে একটি ধারণা প্রচলিত ছিল পিসার হেলানো টাওয়ারটি ভূমিকম্পের জন্যই হয়তো কাত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালের গবেষণায় জানা গেল, এটিও রোমান স্থাপত্যবিদদের অভিভূত করা পা-িত্যের আরেক নিদর্শন, যা হাজার বছরের সাক্ষী হিসেবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে দাঁড়িয়ে আছে। রোমান স্থাপত্যবিদরা ভবন ও অট্টালিকাসমূহে জলবায়ু, সাগরের লোনা জল ও বৃষ্টিপাতের বিরূপ প্রভাবকে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার মূল কারণ বলে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই তারা এগুলোর ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে স্থাপত্যসমূহকে রক্ষাকল্পে আগ্নেয়ভস্মের সঙ্গে এর আগে উল্লেখিত উপাদান ছাড়াও ভবন প্রাচীরের ফাটল রোধকল্পে এতে সিলিকা অক্সাইড মিশিয়ে দিতেন যার ফলে ভবনগুলো হাজার বছরের পরমায়ু নিয়ে বেঁচে থাকে। এ ব্যাপারে উটাহ ইউনিভার্সিটির মূল গবেষক মেরী জ্যাকসন বলেন, রোমানরা হাজার বছরেরও বেশি আগে আামদের সিমেন্টমিশ্রিত কংক্রিটের চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী পাথুরে কংক্রিটের ব্যবহার জানত। মেরী জ্যাকসন বলেন, আমরা যদি তাদের ফর্মুলা অনুসরণ করে আমাদের নির্মাণকাজ শুরু করি তবে আমাদের স্থাপনাগুলোও হাজার বছরের দীর্ঘায়ু লাভ করবে। কিন্তু রোমানদের মতো আমাদের প্রচুর পরিমাণে আগ্নেয়গিরির লাভা বা ভস্ম নেইÑ যা ছিল তাদের নির্মাণশৈলীর মূল উপাদান। জ্যাকসন আরও বলেন, পৃথিবীতে প্রচুর আগ্নেয়ভস্ম বা ছাই না থাকলেও তার বিকল্প উদ্ভাবন করা দরকার। কেননা, বর্তমানে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহ এবং তা তৈরি করতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ কার্বন-ডাই অক্সাইড নিঃসৃত হয়- তা পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে এবং তা বৈশ্বিক জলবায়ুর জন্য ক্ষতিকর হয়। -টাইম
×