ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী

আগামী নির্বাচন সম্পর্কে একটি ব্যক্তিগত জনমত-সমীক্ষা

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১৪ জুলাই ২০১৭

আগামী নির্বাচন সম্পর্কে একটি ব্যক্তিগত জনমত-সমীক্ষা

গত মে মাসে ঢাকায় অবস্থানকালে আগামী সাধারণ নির্বাচন সম্পর্কে একটা ব্যক্তিগত জনমত-সমীক্ষা চালানোর ইচ্ছে হয়েছিল। অর্থাৎ যেখানেই গেছি, নানা পেশার লোকজনের সঙ্গে দেখা হলেই তিনটি প্রশ্ন করেছি। একই ধরনের প্রশ্নের একই ধরনের জবাব পেয়ে বিস্মিত হয়েছি। লন্ডনে ফিরে এসে ঢাকার এক সাংবাদিক বন্ধু, যিনি আওয়ামী লীগের ঘোর সমর্থক, তাকে এই প্রশ্ন তিনটি করেছিলাম। তিনিও একই জবাব দেয়ায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে আগামী সাধারণ নির্বাচন সম্পর্কে একটা ধারণায় পৌঁছতে আমার দেরি হয়নি। এক সিএনজি-চালককে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আচ্ছা আজ যদি আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে পরস্পরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তাহলে কে জিতবেন? সিএনজি-চালক বিনা দ্বিধায় উত্তর দিলেন, ওহ্্ শেখ হাসিনা বহু ভোটে জিতবেন। দ্বিতীয় প্রশ্ন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কোন্্ দলটিকে পছন্দ করেন? জবাব, আওয়ামী লীগকে। তৃতীয় প্রশ্ন, আপনি আগামী নির্বাচনে কোন্্ দলের প্রার্থীকে ভোট দেবেন? সিএনজি-চালকের স্পষ্ট জবাব, আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিকে অবশ্যই দেব না। দরকার হলে বিএনপির প্রার্থীকে দেব। তাকে বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করেছি, আপনি আওয়ামী লীগকে পছন্দ করেন, তাহলে বিএনপি প্রার্থীকে ভোট দেবেন কেন? সিএনজি-চালক বললেন, দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ভাল। বঙ্গবন্ধুর দল তো। কিন্তু এই দলের অনেক মন্ত্রী, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় নেতা ভাল নন। তাদের এবং তাদের আত্মীয়স্বজনের ক্ষমতার দাপট, অত্যাচার, নির্যাতন, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজিতে আমাদের মতো সাধারণ গরিব মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। তার ওপর গু-ামি তো আছেই। কোথাও নালিশ জানিয়ে লাভ হয় না। বরং বিপদে পড়তে হয়। থানা পুলিশ সব তাদের হাতে। প্রায় এই একই ধরনের জবাব পেয়েছি, যাদের কাছে তিনটি প্রশ্ন রেখেছি, তাদের অধিকাংশের কাছ থেকে। আমার বুঝতে বাকি থাকেনি, এই নির্বাচনে যদি শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়, তাহলে শেখ হাসিনা বিশাল ভোটে জিতবেন। যদি সাধারণ মানুষকে তাদের পছন্দের দল বাছাই করতে বলা হয়, তাহলে তারা ঢালাওভাবে আওয়ামী লীগকে পছন্দ করবে। কিন্তু আগামী সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যদি মনোনয়ন বাণিজ্য পরিহার এবং ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির দায়ে জনসাধারণের দ্বারা অভিযুক্ত মন্ত্রী, এমপিদের বর্জন করে জনগণের আস্থাভাজন মানুষকে মনোনয়ন না দেয় তাহলে আগামী সংসদে আওয়ামী লীগ ৬০-এর বেশি আসন ধরে রাখতে পারবে কিনা সন্দেহ। এটা আমার কথা নয়। ঢাকায় এবার যাদের জিজ্ঞাসা করেছি, তাদের অধিকাংশই এই মত ব্যক্ত করেছেন। আওয়ামী লীগে অবশ্য নির্বাচনের আগেভাগেই দল গোছানোর হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গেছে। দলের মন্ত্রী, সাংসদ ও নেতাদের এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের অতীত ও বর্তমানের কার্যকলাপ ঝালাই বাছাই করা হচ্ছে বলে খবর বেরিয়েছে। ইলেক্টেবল প্রার্থীদের, নতুন এবং পুরনো, তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। যাদের পছন্দ করা হচ্ছে, তাদের এখনই নির্বাচন এলাকায় গিয়ে জনসংযোগের কাজ শুরু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে এমন খবর রটিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, ইলেক্টেবল প্রার্থী নন, এমন তালিকাভুক্ত এক বিরাট সংখ্যক মন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও এমপি এবার বাদ পড়বেন। অনেক নতুন মুখ দেখা যাবে। আওয়ামী লীগের এই তৎপরতা ভাল। শুধু বলার কথা, এটা যেন ‘‘শক্ত বাঁধন ফস্্কা গেরো’’ হয়ে না দাঁড়ায়। অর্থাৎ কিছু পুরনো মুখ বাদ দিয়ে নব্যধনী গোষ্ঠীর একদল নতুন মুখের সমাবেশ দেখা না যায়। দেশের রাজনীতির অঙ্গন থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সেনা শাসক জিয়াউর রহমান প্রকৃত রাজনীতিকদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছেন এবং নব্যধনী ব্যবসায়ীতন্ত্রকে এনে প্রতিষ্ঠা দান করেছেন। এই ব্যবসায়ীতন্ত্রের খপ্পর থেকে দেশের রাজনীতিকে মুক্ত করা সহজ কাজ নয়। সহজ কাজ হলে আমেরিকার মতো উন্নত দেশে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো এক লোভী ও নীতিহীন ব্যবসায়ী প্রেসিডেন্ট হয়ে বসতে পারতেন না। আওয়ামী লীগ অবশ্য এবার ঝালাই বাছাই করে নির্বাচনে প্রার্থী দিতে চায়। কিন্তু বাছাই করার পদ্ধতিটা কি? প্রার্থীদের (পুরনো ও নতুন) অতীত ও বর্তমানের কার্যকলাপ সম্পর্কে গোয়েন্দা রিপোর্ট? আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সর্বত্র যে কোটারি-নেতৃত্ব আছে, তাদের সুপারিশ? প্রার্থীর নির্বাচন-তহবিলের আয়তন? না, যোগ্যতার ও সততার বিচার? এই যোগ্যতার বিচার করবে কে? পার্টি হায়ার্কি, না স্থানীয়ভাবে জনগণ তথা ভোটদাতাগণ? কেবল গোয়েন্দা রিপোর্ট ও পার্টি হায়ার্কির বাছাইয়ের ভিত্তিতে যদি প্রার্থীদের মনোনয়ন দান করা হয় তাহলে তো সেই থোড় বড়ি খাড়া। অর্থাৎ আগের ভুলের পুনরাবৃত্তি করা হবে। গোয়েন্দা রিপোর্টের উপায় সব সময় নির্ভর করলে পরিণতি কি দাঁড়ায় আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তার একটা কাহিনী বলি। ১৯৫৩ সালের শেষের দিক। তখন বাংলাদেশ ছিল পূর্ব পাকিস্তান এবং নূরুল আমিনের নেতৃত্বে প্রদেশে বহাল ছিল মুসলিম লীগ সরকার। আমি তখন ‘দৈনিক সংবাদে’ রিপোর্টিং বিভাগে কাজ করি। ‘দৈনিক সংবাদ’ তখন মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিনের মালিকানাধীন কাগজ। প্রদেশে একটি সাধারণ নির্বাচনের তোড়জোড় চলছে। নূরুল আমিন একদিন ‘সংবাদের’ তৎকালীন অফিস ২৬৩ বংশাল রোডে এলেন। উপস্থিত সাংবাদিকদের বললেন, ‘নির্বাচন আসন্ন। তোমরা মুসলিম লীগের পক্ষে জোরেশোরে কলম চালাও।’ তারপর একটু হেসে বললেন, ‘মুসলিম লীগের অবস্থা খুবই ভাল। গোয়েন্দা রিপোর্ট, মুসলিম লীগ শতকরা ৫৩ ভাগ ভোট পেয়ে জয়ী হবে। যুক্তফ্রন্টের অনেক প্রার্থী জামানত রক্ষা করতে পারবে না।’ তারপর ’৫৪ সালের নির্বাচনে কী হয়েছিল ইতিহাস সাক্ষী। নির্বাচনের পর পরাজিত নূরুল আমিন দীর্ঘকাল করাচীতে পলাতক ছিলেন। সেখানে বসে বিবৃতি দিয়েছেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের সরকারী কর্মচারীরাও আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। গোয়েন্দারা ইচ্ছা করে আমাকে ভুল রিপোর্ট দিয়েছে।’ এটা গেল পাকিস্তান আমলের একটি ঘটনা। তার আগের ব্রিটিশ আমলের একটি ঘটনা এখানে বলি। অবিভক্ত ভারতে ব্রিটিশ আমলেও কংগ্রেস অথবা মুসলিম লীগের পার্টি হায়ার্কি নিজেদের খুশিমতো নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দিত না। মাঠ পর্যায়ে ভোটদাতাদের প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ দিত। ১৯৪৬ সালে ব্রিটিশ ভারতে শেষ সাধারণ নির্বাচন হয়। হয় অবিভক্ত বাংলাদেশেও। বরিশাল জেলায় আমার বাড়ি। এই জেলার হিজলা, পাতারহাট, মুলাদি, ভাসানচর ইত্যাদি মিলে তখন একটি নির্বাচন কেন্দ্র। এই কেন্দ্রে প্রাদেশিক আইন পরিষদের (তখন বলা হতো এম,এল,এ) নির্বাচনে মুসলিম লীগের মনোনয়ন প্রার্থীদের মধ্যে প্রধান দুই প্রার্থী ছিলেন চৌধুরী মোহাম্মদ আরিফ এবং মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরী। দু’জনেই মুসলিম লীগের অনুগত এবং জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। মুসলিম লীগ-হায়ার্কি ইচ্ছে করলে নিজেদের পছন্দমতো একজনকে মনোনয়ন দিতে পারত। তা তারা দেননি। তারা পাতারহাটের বিশাল মাঠে স্থানীয় জনগণের এক সমাবেশ ডাকেন। বলা হলো, এই এলাকায় কাকে মুসলিম লীগের মনোনয়ন দেয়া হবে, সে সম্পর্কে জনগণের মতামত নেয়া হবে। ঢ্যাড়া পিটিয়ে এই খবর সকলকে জানানো হয়। মতামত গ্রহণের জন্য কলকাতা থেকে পাতারহাটে আসেন স্বয়ং প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিম। তার সঙ্গে তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা চৌধুরী মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে লাল মিয়া (ফরিদপুরের মোহন মিয়ার ভাই) এবং তৎকালীন মুসলিম ছাত্রলীগ নেতা শাহ্ আজিজুর রহমান। বিশাল জনসভায় তারা জনগণের কাছে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে জানতে চাইলেন, তারা কাকে প্রার্থী হিসেবে চান। গগণবিদারি কণ্ঠে তারা জানান, চৌধুরী মোহাম্মদ আরিফকে। তারপর প্রত্যেক প্রার্থী নাম ঘোষণা করে জনতাকে হাত তুলতে বলা হলো। এই হাত গণনাতেও চৌধুরী আরিফ জয়ী হন এবং লীগের মনোনয়ন পান। দুর্ভাগ্যের বিষয়, স্বাধীনতা উত্তরকালে নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে জনগণ তথা ভোটদাতাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে দাম দেয়া প্রায় গৌণ হয়ে দাঁড়ায়। বঙ্গবন্ধুর আমল পর্যন্ত নির্বাচনকালে দলের প্রার্থী মনোনয়নে মনোনয়ন-বাণিজ্য ছিল না। সেনা শাসক জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ঘোষণা দেন, ‘ও রিষষ সধশব ঢ়ড়ষরঃরপং ফরভভরপঁষঃ ভড়ৎ ঢ়ড়ষরঃরপরধহং’Ñ আমি রাজনীতিকদের জন্য রাজনীতি করা কষ্টকর করে দেব। তারপর সরকারী-বেসরকারী সব ব্যাংকের দরজা খুলে দেন নব্যধনী সৃষ্টির জন্য। প্রকৃত রাজনীতিকদের দেশের রাজনীতি থেকে তাড়িয়ে এই ব্যবসায়ীদের রাজনীতিক হওয়ার সুযোগ করে দেন। নির্বাচনে টাকা ও পেশির জোরে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া ও জয়ী হওয়া সহজ করে দেন। জিয়াউর রহমানের দ্বারা ছড়ানো এই ভাইরাসে আওয়ামী লীগও আক্রান্ত হয়। আগামী সাধারণ নির্বাচন এখনও একটু দূরে আছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের হাতে একটু সময় আছে। আওয়ামী লীগ কি পারে না, দলের মন্ত্রী নন, এমন তিনজন শীর্ষ নেতা দ্বারা একটি টীম গঠন করে ১৯৪৬ সালের মুসলিম লীগের মতো সেই টিমকে সারা দেশ ঘুরে তাদের কাছে একটা রিপোর্ট পেশ করানোর ব্যবস্থা করতে? এই টীম প্রত্যক্ষ জনসংযোগ দ্বারা বর্তমানের মন্ত্রী ও এমপিদের সম্পর্কে জনমত যাচাই করবে এবং স্থানীয়ভাবে ভোটদাতারা তাদের বর্তমান প্রতিনিধিকে অথবা কোন নতুন মুখকে পছন্দ করেন, তা যাচাই করবে। কেবল উন্নয়নের সেøাগান দিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে সুবিধা করতে পারবে কি? দেশে বিশাল উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু সুশাসনের (মড়ড়ফ মড়াবৎহধহপব) অভাবে তার সুফল জনগণের সর্বস্তরে পৌঁছেনি। গরিব মানুষের জন্য কম দামে চাল বিক্রির যে ব্যবস্থা সরকার করেছিলেন, আওয়ামী লীগেরই একশ্রেণীর মন্ত্রী ও এমপির দুর্নীতির দৌরাত্ম্যে সর্বত্র গরিব মানুষ তার দ্বারা উপকৃত হয়নি। সরকার স্কুল ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যবই দেয়ার ব্যবস্থা করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু সেই বই নিয়েও কালোবাজারি ব্যবসায়ের অভিযোগ শোনা গেছে। সরকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের নতুন নতুন ব্যবস্থা করছে। তবুও বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। আরও উদাহরণ দিলে লেখাটা দীর্ঘ হবে। তাই উদাহরণের সংখ্যা বাড়াব না। আগামী নির্বাচনী অভিযানে আওয়ামী লীগের উচিত হবে উন্নয়নের ঢোল বেশি না বাজিয়ে দেশে কিভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে তার বাস্তব রূপকল্প সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা এবং তাকে বিশ্বাসযোগ্য করা। আওয়ামী লীগ সব সময় নির্বাচনে জিতেছে তার বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনী ইশতেহার এবং নির্বাচনী সেøাগান দ্বারা। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতেছিল ‘‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন’’ এই সেøাগান তুলে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতেছে ‘‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার’’ সেøাগান তুলে। এবার তাকে ভোটদাতাদেরÑ বিশেষ করে নতুন ভোটারদের চোখে স্বপ্নের নতুন অঞ্জন পরাতে হবে। সেই স্বপ্ন সুশাসন তথা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার। মন্ত্রী, এমপিদের দৌরাত্ম্য কমানোর। বেকারত্ব দূর ও বেকার যুবকদের নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের এবং উন্নয়নের ফসল জনগণের সর্বস্তরে পৌঁছে দেয়ার। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার যেন ফাঁকা প্রতিশ্রুতির কিতাব না হয়; তা ইস্যুভিত্তিক এবং জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য ইশতেহার হয়। আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী ও এমপি এখন ভাবছেন, তাদের নিজেদের অতীত ও বর্তমান যতই বিতর্কমূলক হোক, শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার তাবিজ গলায় ধারণ করে তারা নির্বাচনে-বৈতরণী পার হয়ে যাবেন। শেখ হাসিনা যেন এই সুযোগটি তাদের না দেন। তারা অবশ্যই জনগণের কাছে যাবেন। তাদের কাছে নিজেদের অভিযোগমুক্ত করবেন, সততা ও যোগ্যতার প্রমাণ দেবেন। নইলে নির্বাচনে দাঁড়াবেন না। আওয়ামী লীগকে তাদের কলঙ্কের বোঝা বইতে দেবেন না। আমাদের সকলকেই এ কথা মনে রাখতে হবে, আগামী সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জয়ী হতেই হবে। নইলে গত দুই দফা ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনা দেশের যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটিয়েছেন তার ধারাবাহিকতা থাকবে না। যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করেছেন তা নস্যাৎ হবে। সব চাইতে বড় কথা, দেশের অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা আবার হুমকির সম্মুখীন হবে। এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিক সমস্ত দুর্বলতা ঝেড়ে ফেলে সত্তরের মতো আবার শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে হবে। দেশের যুবশক্তিকে নতুন স্বপ্ন দেখাতে হবে। ব্রিটেনে যুবশক্তিকে স্বপ্ন দেখিয়ে জেরেমি করবিন লেবার পার্টির ভাঙ্গা দুর্গে আবার জয়ের পতাকা উড়িয়েছেন। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে ব্রিটেনের লেবার পার্টির মতো আবার ম্যাজিক ল্যান্টার্নে আলো জ্বালাতে হবে। নইলে জনগণকে শুধু উন্নয়নের ফিরিস্তি শুনিয়ে তেমন লাভ হবে না। ‘‘কা-ারি হুঁশিয়ার’’। আওয়ামী লীগের জন্য এই সাবধান বাণীটি উচ্চারণ করে রাখছি। [লন্ডন ১৩ জুলাই, বৃহস্পতিবার, ২০১৭]
×