ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকিতে সৌদি শ্রমবাজার

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ১৪ জুলাই ২০১৭

ঝুঁকিতে সৌদি শ্রমবাজার

সাম্প্রতিককালে মালয়েশিয়ার পর এবার সমূহ ঝুঁকির মুখে পড়েছে সৌদি আরবের শ্রমবাজার। সে দেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের অবৈধ কর্মীদের ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে ফিরে যেতে হবে নিজ নিজ দেশে। দুই বছর আগে সৌদি সরকার বৈধভাবে বসবাসের অনুমতি তথা আকামা পরিবর্তনের যে সুযোগ দিয়েছিল তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ‘এ নেশন উইদাউট ভায়োলেটর’ কর্মসূচী। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে ২৬ হাজার বাংলাদেশী কর্মী সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন প্রথম দফায়। দ্বিতীয় দফায় এসেছেন বৈধ কাগজপত্রবিহীন প্রায় ২০ হাজার শ্রমজীবী। তবে আরও অনেক বাংলাদেশী কর্মী সে দেশে জীবন-জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে রয়ে গেছেন। সৌদি গেজেটের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ১৩ লাখ বাংলাদেশী বিভিন্ন পেশায় অবস্থান করছেন সে দেশে। তাদের মধ্যে ৬০ হাজার নারী কাজ করছেন গৃহকর্মী হিসেবে। তাদের অবস্থাও যে ভাল এমন কথা বলা যাবে না। আরও একটি অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায় যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বৈধ-অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশীরা কখনও বিপদে পড়ে স্থানীয় বাংলাদেশ দূতাবাসের শরণাপন্ন হলে প্রায়শই তারা তেমন কোন সাহায্য-সহযোগিতা পান না। সৌদির বাংলাদেশ দূতাবাস অবশ্য বর্তমান সঙ্কট সম্পর্কে বলছে, কয়েক লাখ অবৈধ বাংলাদেশী কর্মীকে বৈধ হতে গেলে আরও সময় প্রয়োজন। বর্তমান সরকারের আমলে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক উষ্ণ ও আন্তরিক হয়েছে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর সে দেশ সফরের পর। সৌদি সরকারের আহ্বানে বাংলাদেশ ৪৯টি মুসলিম দেশ সমন্বয়ে গঠিত জঙ্গী ও সন্ত্রাসবিরোধী সামরিক জোটে যোগও দিয়েছে। সে অবস্থায় সে দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের ব্যাপারেও সরকারী আনুকূল্যই প্রত্যাশিত। তবে এর জন্য অবশ্যই উচ্চ পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা ও আলাপ-আলোচনা চালাতে হবে জরুরীভিত্তিতে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা সেক্ষেত্রে জরুরী পদক্ষেপ নেবে বলেই প্রত্যাশা। পাশাপাশি মালয়েশীয় সরকারের উচ্চ পর্যায়েও জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া বাঞ্ছনীয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। ২০২২ সালে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে কাতারে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩ লাখ শ্রমিক নেয়ার কথা বিভিন্ন পর্যায়ে। ধনী দেশ বিধায় কাতারের শ্রমবাজার যে আকর্ষণীয় সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। তদুপরি দেশটি রূপকল্প-২০৩০’র আওতায় বিশ্বের সেরা দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশÑ কুয়েত, সৌদি আরব, বাহরাইন ও অন্যত্র বাংলাদেশের শ্রমবাজার প্রায় সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় এবং সিরিয়া-ইরাক-ইয়েমেনকে কেন্দ্র করে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করায় সঙ্কট আরও ঘনীভূত হয়েছে। এ অবস্থায় আপাতত ভরসা কাতার। তবে সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে একঘরে হয়ে পড়ায় কাতারের শ্রমবাজারও রয়েছে নাজুক অবস্থায়। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে মনে রাখা দরকার যে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় কোন দেশেরই অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয়। বরং তেলের দাম বেশ নেমে যাওয়ায় অনেক দেশেরই জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে লক্ষ্য করা যায় নেতিবাচক প্রবণতা। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার রাজনৈতিক এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই নাজুক। সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় বলতেই হয়, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশই বিনিয়োগের জন্য সর্বাধিক উত্তম ও উপযোগী। দেশে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি বেশ ভাল, প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সরকারী-বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে প্রচুর অলস অর্থ পড়ে আছে। ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে সুদহার কমানোর কথাও বলা হচ্ছে। সে অবস্থায় সরকারকে একটি নমনীয় সুদহার নির্ধারণ করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে।
×