ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষ ফুটবলার গড়ার পরিকল্পনা ব্রাদার্স ইউনিয়নের

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১৩ জুলাই ২০১৭

দক্ষ ফুটবলার গড়ার পরিকল্পনা ব্রাদার্স ইউনিয়নের

রুমেল খান ॥ বাংলাদেশের ফুটবলকে কিছু দেয়ার জন্যই ব্রাদার্স ইউনিয়ন ফুটবলে এসেছে। কোন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা তাদের জন্য মুখ্য বিষয় বা লক্ষ্য নয়, ভাল ও সুন্দর খেলা এবং ভাল ফুটবলার উপহার দেয়াই ক্লাবটির আসল উদ্দেশ্য। প্রথম বিভাগ, চ্যাম্পিয়নশিপ লীগ, পাইওনিয়ার লীগ থেকেই মূলত ব্রাদার্স ইউনিয়ন খেলোয়াড় বেছে নিয়ে প্রচুর তারকা ফুটবলার তৈরি করে থাকে। এদের অনেকেই পরে আবাহনী-মোহামেডান এবং জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পায়। এখন দেশের ফুটবলে ক্রান্তিকাল চলছে। তারপরও ব্রাদার্স চেষ্টা করছে প্রতিশ্রুতিশীল-প্রতিভাবান ফুটবলার তৈরি করতে। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দলের হয়ে খেলা রুবেল মিয়া ও জুয়েল রানা ব্রাদার্সেরই সৃষ্টি। এদের মতো আরও অনেক খেলোয়াড় ব্রাদার্স আবিষ্কার করতে চায়। বিভিন্ন কারণে ব্রাদার্স কখনই তাদের ফুটবলারদের বেশি অর্থ দিতে পারে না। কিন্তু তারপরও ব্রাদার্সই দেশের ফুটবলে ফুটবলার তৈরির কারখানা হিসেবে সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ। কোন তরুণ ফুটবলার যদি ফুটবলের বেসিক শিখে নিজের ভবিষ্যত ক্যারিয়ার গড়তে চায়, তাহলে ব্রাদার্সই হতে পারে তার একমাত্র অবলম্বন। তারাই পরে আবাহনী-মোহামেডান-শেখ জামালের মতো বড় দলের জার্সিতে মাঠ মাতাবে। পাইপলাইনে দক্ষ পর্যাপ্ত ফুটবলার না থাকলে কি হয় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। একই খেলোয়াড়দের নিয়ে বছরের পর একই দল। নতুন মুখ দেখা যায় কদাচিৎ। এদের অনেকেই আবার ধারাবাহিক নৈপুণ্যের অভাবে হারিয়ে যায়। এর মূল কারণ লুকিয়ে আছে ক্লাব ফুটবলে। কোন ক্লাবই খেলোয়াড় তৈরি করতে চায় না। তারা সবাই চায় রেডিমেড তৈরি খেলোয়াড় দলে ভিড়িয়ে সাফল্য কুড়াতে। কিন্তু ইউরোপের প্রতিটি ফুটবল দেশের ক্লাবগুলো এর বিপরীত। তারা ক্লাব দলের পাশাপাশি ফুটবল একাডেমির কার্যক্রমও সাফল্যের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছে। একেবারে ছোটবেলা থেকেই শিশুদের ফুটবল শিখিয়ে কয়েক বছর উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে দক্ষ-প্রতিভাবান ফুটবলার হিসেবে। এরাই পরে ক্লাবের মূল দলে খেলার সুযোগ পায়, অথবা তাদের ভাল দামে অন্য ক্লাবে বিক্রি করে লাভবান হয় একাডেমিগুলো। আজকের বিশ্বখ্যাত আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসি তো বার্সেলোনা যুব একাডেমি থেকেই উঠে এসেছেন। এ প্রসঙ্গে ব্রাদার্সের সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরাও চাই একটি ফুটবল একাডেমি করতে। এখানে ভর্তি করানো হবে ৮-১৪ বছর বয়সী ক্ষুদে ফুটবলারদের। একটি বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ ব্যাপারে অনেকদূর আলোচনা এগিয়ে গেছে। আশাকরি আগামী ৫/৭ মাসের মধ্যেই আমাদের একাডেমি তৈরির কাজ করতে পারব।’ বাংলাদেশের ফুটবলারদের পরিবার অধিকাংশই কম শিক্ষিত বা অশিক্ষিত, দরিদ্র এবং বাসস্থান সঙ্কটে ভুক্তভোগী। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই ব্রাদার্স একাডেমি তৈরির পরিকল্পনা করেছে। এই একাডেমিতে কেবল ফুটবলাররা থাকবেই না, তাদের খাওয়া-দাওয়া এবং স্কুলের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্বও নেবে ব্রাদার্স। এ রকম পরিবারের মেধাবী-দরিদ্র ফুটবলারদেরই বেশি প্রাধান্য দেয়া হবে। ‘এতে করে তারা তাদের মা-বাবা তথা পরিবারকে ভালমতো সাপোর্ট দিতে পারবে বলে আশাকরি।’ যোগ করেন নজরুল। শুধু একাডেমিই নয়, গোপীবাগে অবস্থিত ‘দ্য অরেঞ্জ ব্রিগেড’ খ্যাত ব্রাদার্স ইউনিয়ন তাদের ক্লাব প্রাঙ্গণেই প্রতিষ্ঠা করতে চায় একটি স্পোর্টস ইউনিভার্সিটিও। বিকেএসপিগুলো থেকে যেসব ফুটবলার পাস করে বের হবে তাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া ও খেলাধুলা চালিয়ে যাবার ব্যাপারে অগ্রাধিকার বেশি থাকবে। নজরুল বলেন, ‘আশাকরি আগামী এক বছরের মধ্যেই এই পরিকল্পনাটি বাস্তবে রূপ নেবে। যেহেতু আমাদের ক্লাব প্রাঙ্গণে এখনও অনেক ফাঁকা জায়গা আছে, সেহেতু এখানেই স্পোর্টস ইউনিভার্সিটি স্থাপন করতে চাই।’ এই বয়সভিত্তিক ফুটবল একাডেমি এবং স্পোর্টস একাডেমির সঙ্গে কি ভবিষ্যতে সম্পৃক্ত থাকবেন দলটির নতুন কোচ জিওভান্নি? এ প্রসঙ্গে ব্রাদার্সের সাবেক ফুটবলার এবং বর্তমানে ম্যানেজার আমের খান জনকণ্ঠকে জানান, ‘জিওভান্নির সঙ্গে এখনও এ ব্যাপারে আমাদের কোন আলোচনা হয়নি। তবে তিনি বিষয়টি শুনছেন। তিনি যদি একাডেমি ও স্পোর্টস একাডেমির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে চান তাহলে দুইপক্ষের মধ্যে আলোচনা-সমঝোতা ও চুক্তি হতে হবে। তবে এগুলো ভবিষ্যতের ব্যাপার।’
×