ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লন্ডনে তামিমের স্ত্রী হিজাব পরিহিত থাকা অবস্থায় কয়েক ব্যক্তি তাদের ধাওয়া করে বলে গুঞ্জন শোনা যায়। কিন্তু এ সব ঘটনা অস্বীকার করলেন তিনি

‘ভয়ে নয় ব্যক্তিগত কারণেই ফিরেছি’ ॥ তামিম

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১৩ জুলাই ২০১৭

‘ভয়ে নয় ব্যক্তিগত কারণেই ফিরেছি’ ॥ তামিম

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘হেট ক্রাইমে’র শিকার তামিম। বুধবার সকাল থেকেই এ বিষয়টি চাউর হয়ে গেল। এই শিকারে ভয় পেয়েই, আতঙ্ক থেকে, নিজের নিরাপত্তা নিয়ে দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন তামিম। তাও সবার মুখে মুখে। কিন্তু তামিম বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, ব্যক্তিগত কারণেই ইংল্যান্ড থেকে দ্রুত দেশে ফিরছেন তিনি। বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ১১টার দিকে এক পোস্ট করেন তামিম। সেই পোস্টেই তামিম সব ব্যাখ্যা দেন। জানান, ‘আমি আমার সব ভক্ত ও শুভাকাক্সক্ষীকে জানাতে চাই যে, এসেক্সে আমার মৌসুম আগেই শেষ করে দেশে ফিরছি ব্যক্তিগত কারণে। কিছু সংবাদ মাধ্যম রিপোর্ট করেছে যে আমরা হেইট ক্রাইমের শিকার হয়েছি। এটি আসলে সত্যি নয়।’ ভবিষ্যতে আবার ইংল্যান্ডে খেলতে যেতে চান তামিম। তাই বলেছেন, ‘ক্রিকেট খেলার জন্য আমার প্রিয় জায়গাগুলোর একটি ইংল্যান্ড। আগে চলে যেতে হওয়ার পরও এসেক্স আমার প্রতি ছিল দারুণ সৌজন্যময়। সব ভক্ত ও শুভাকাক্সক্ষীকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি তাদের ভাবনা ও নানা বার্তার জন্য। ভবিষ্যতেও ইংল্যান্ডে খেলার অপেক্ষায় থাকব আমি।’ তামিম নিজেই তার দেশে ফিরে আসার বিষয়টি পরিষ্কার করে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এসেক্সের হয়ে এক ম্যাচ খেলেন তামিম। খেলার কথা ছিল মোট আট ম্যাচ। রবিবার একটি ম্যাচ খেলেন। ৭ রান করে আউট হন। কিন্তু হঠাৎ করেই তামিম দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। কেন? এ নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা হয়। শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যম, এমনকি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও ‘হেট ক্রাইমে’র বিষয়টি তুলে ধরে। ভয় থেকেই যে তামিম দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তা জানাজানি হয়ে যায়। সোমবার রাতে সপরিবারে রাতের খাবার খেয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে মাসব্যাপী ভাড়া করা বাসায় ফিরছিলেন তামিম। তখন কয়েকজন তামিমদের ধাওয়া করে। দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যান তারা। বেঁচে যান। এ ঘটনার পর আতঙ্কিত না হয়ে উপায় আছে? তামিমও আতঙ্কগ্রস্ত হন। তার পরিবারও আতঙ্কে থাকেন। মুহূর্তেই দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। মঙ্গলবার রাতে লন্ডন থেকে দেশে ফেরার বিমান ধরেন। বুধবার দেশে ফিরেনও। বুধবার সকালেই পোস্ট করেন তামিম। তাতে বুঝিয়ে দেন, আসলে যেসব বিষয় নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে তা সত্যি নয়। তামিমের এমন পোস্টে খুশি হন বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার এ্যালান উইলকিনস। তামিমের এমন বিবৃতিতে স্বস্তিও প্রকাশ করেন। বলেন, ‘স্রষ্টাকে ধন্যবাদ। ব্যাপারটা খোলাসা করার জন্য তামিমকে ধন্যবাদ। আশাকরি, সব ঝামেলা মিটে যাবে।’ প্রথমবার ২০১১ সালে নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে পাঁচটি ম্যাচ খেলেছিলেন তামিম। এবার একটি ম্যাচ খেলার পর ১৩ জুলাই চেমসফোর্ডে সমারসেটের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবেন বলে কথা ছিল। এরপর আরও ৬টি ম্যাচ খেলার জন্য এসেক্সের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ তামিম। ১৬ জুলাই চেমসফোর্ডে গ্ল্যামারগন, ১৯ জুলাই ওভালে সারে, ২১ জুলাই চেমসফোর্ডে হ্যাম্পশায়ার, ২৩ জুলাই কার্ডিফে গ্ল্যামারগন, ২৭ জুলাই লর্ডসে মিডলসেক্স এবং ২৯ জুলাই চেমসফোর্ডে গ্লস্টারশায়ারের বিরুদ্ধে খেলার কথা ছিল তামিমের। কিন্তু সবকটি ম্যাচ খেলতে পারলেন না। এসেক্সের হয়ে খেলতে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা ও পুত্র আরহাম ইকবাল খানকে নিয়ে ৭ জুলাই ইংল্যান্ডে যান তামিম। দেশে ফেরার কথা ছিল আগামী মাসের শুরুতে। একমাসের জন্য একটি বাসাও ভাড়া নিয়েছিলেন তামিম। কিন্তু এক সপ্তাহও থাকতে পারলেন না। মঙ্গলবারই তামিমের কাউন্টি ক্লাব এসেক্স তাদের ওয়েবসাইটে দেয়া এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ব্যক্তিগত’ কারণে তামিম ক্লাব ছেড়ে যাচ্ছেন। আমরা তার মঙ্গল কামনা করছি। এই সময়ে তামিমের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি সম্মান জানালে আমরা খুশি হব।’ তখন থেকেই হঠাৎ করে তামিমের দেশে ফেরা নিয়ে শুরু হয়ে যায় আলোচনা। বেশ কিছুদিন ধরেই ইংল্যান্ডের রাস্তাঘাটে ভিন্ন মত ও বর্ণের মানুষের ওপর কে বা কারা এ্যাসিড ছুড়ে মারছে। গত ২১ জুন ইস্ট লন্ডনের বেকটনেও এমন ঘটনা ঘটেছে। রেশম খান ও জামিল মুক্তা নামে দু’জনের ওপর এ রকম আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। পথচলতি মানুষের ওপর গাড়ি তুলে দেয়ার ঘটনা তো আছেই। ধারণা করা হচ্ছে, তামিমের স্ত্রী হিজাব পরিহিত থাকায় তাদের পিছু নেয় কয়েকজন। এমন অবস্থায় ইংল্যান্ডে থাকাটা অস্বস্তিকরই। তাই তামিম ফিরে এসেছেন। কিন্তু তামিম নিজে এসব বিষয় উড়িয়ে দিয়েছেন। ব্যক্তিগত কারণই এখানে মুখ্য। অন্য কোন বিষয় নেই। তামিম তাই বোঝাতে চেয়েছেন।
×