ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বহুমুখী তৎপরতা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৩ জুলাই ২০১৭

চট্টগ্রামে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বহুমুখী তৎপরতা

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে কিনা সেই নিশ্চয়তা না থাকলেও তৃণমূল পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে এবং উচ্চপর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে বহুমুখী তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি পিছিয়ে নেই বিএনপি নেতারাও। বড় দু’দলের নেতারা নিজ নিজ এলাকার কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা প্রায় নিয়মিতই ছুটছেন স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকায়। চলছে কুশল ও শুভেচ্ছা বিনিময়। রঙিন পোস্টার এবং ডিজিটাল ব্যানার-ফেস্টুন টাঙিয়ে এলাকাবাসীর দোয়া এবং আশীর্বাদ কামনা করছেন। চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার সর্বত্রই আগেভাগে শুরু হয়ে গেছে নেতাদের প্রাথমিক প্রস্তুতির কাজ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনও দেড় বছর বাকি। আগামী বছরের ডিসেম্বর অথবা ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। বিএনপি যদি অংশগ্রহণ করে তবে এ নির্বাচন হবে অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, কঠিন এবং হাড্ডাহাড্ডি। উভয় দলই চাইবে তাদের শক্তিশালী ও তৃণমূলে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী। তৃণমূলের জনমত যাই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত দু’দলের নেত্রীর সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত। তবে নেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য প্রয়োজন তৃণমূলে জোর তৎপরতা। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা এখন থেকেই বেশ সক্রিয়। নির্বাচনী এলাকায় বিগত রোজার ঈদে দেখা গেছে নেতাদের সরব উপস্থিতি। অনেক নেতাই ঈদ উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে গরু জবাই করে মেজবান দিয়েছেন। অনুসারীরা সারাদিনই নেতার বাড়িতে গিয়ে দেখা সাক্ষাত করেছেন। কোন কোন নেতার বাড়িতে কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল অনেকটা শোডাউনের মতো। নেতারাও ঈদকে উপলক্ষ করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে করেছেন কুশল বিনিময়। লক্ষ্য একটাই, কর্মী সমর্থকদের সমর্থন আদায় করা। চট্টগ্রাম মহানগরীর চার আসনের প্রতিটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভের দৌড়ে রয়েছেন বর্তমান এমপিরা ছাড়াও একাধিক করে প্রার্থী। বর্তমানে নগরীতে এমপি হিসেবে রয়েছেন চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালি-চান্দগাঁও) আসনে জাসদের মঈনউদ্দিন খান বাদল, চট্টগ্রাম-৯ (বাকলিয়া-কোতোয়ালি) আসনে জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-ডবলমুরিং) আসনে ডাঃ আফসারুল আমীন এবং চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে এমএ লতিফ। এ চার আসনের মধ্যে জাসদের মঈনউদ্দিন খান বাদল জোটের প্রার্থী হিসেবে এবং জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন বাবলু আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতায় এমপি হন। আগামী নির্বাচনে যদি জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতা না হয় তবে কোতোয়ালি আসনে দেখা যাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। সে হিসেবে বিবেচনায় থাকছেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। তবে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিনপুত্র আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও কোতোয়ালি আসনে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক বলে জানা যায় তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে। ইতোমধ্যেই তিনি এলাকায় যোগাযোগ এবং সাংগঠনিক কর্মকা- বাড়িয়েছেন। বোয়ালখালি-চান্দগাঁও আসনে কয়েকবার নির্বাচন করেছিলেন নুরুল ইসলাম বিএসসি। তবে শেষবার তিনি এমপি হন কোতোয়ালি থেকে। আগামী নির্বাচনেও যদি তিনি কোতোয়ালি থেকে মনোনয়ন পান তবে চান্দগাঁও আসনে জাসদের মঈনউদ্দিন খান বাদলই বহাল থাকতে পারেন প্রার্থী হিসেবে। কেননা, জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতার বিষয়টি এখনও নিশ্চিত না হলেও ১৪ দলীয় জোট ভাঙ্গার আলামত দৃশ্যমান নয়। তবে চান্দগাঁও-বোয়ালখালী নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ তৎপরতা এবং উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি শুরু করেছেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র পুত্র সানোয়ারা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মুজিবুর রহমান। চট্টগ্রাম বন্দর-পতেঙ্গা আসনে দুইবারের এমপি এমএ লতিফ। তবে সেখানে মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক আওয়ামী লীগ নেতা খোরশেদ আলম সুজন। চট্টগ্রাম নগরীর চার আসনে বিএনপির দুই প্রার্থী অনেকটাই নিশ্চিত। তারা হলেন চট্টগ্রাম-১১ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম-১০ আসনে আবদুল্লাহ আল নোমান। নগরীর কোতোয়ালি আসনটি নোমানের নির্বাচনী এলাকা হিসেবে পরিচিত হলেও সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-১০ আসনে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের ডাঃ আফসারুল আমীনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে সেবার প্রার্থী হয়েছিলেন বিএনপিতে যোগদানকারী শিল্পপতি শামসুল আলম। এছাড়া বিএনপি থেকে চট্টগ্রাম-৮ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন এরশাদ উল্লাহ। এবারও তারা দলের মনোনয়ন চাইবেন। তবে চান্দগাঁও-বোয়ালখালী আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ খান এবং বাকলিয়া-কোতোয়ালি আসনে নগর বিএনপির সভাপতি ডাঃ শাহাদাত হোসেনও মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় শেষ পর্যন্ত এ দুই আসনেই প্রার্থিতায় পরিবর্তন ঘটতে পারে। চট্টগ্রাম নগরীর বাইরে রয়েছে ১২ আসন। এ আসনগুলোর মধ্যে আসন সমঝোতায় আওয়ামী লীগের বাইরে এমপি রয়েছেন ২ জন। তারা হলেনÑ হাটহাজারীতে পানি সম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং ফটিকছড়িতে তরিকত ফেডারেশন নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। আগামী নির্বাচনে সমঝোতা না হলে সেখানে আসবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। মনোনয়ন পেতে আগ্রহীরা এলাকায় কর্মী সমর্থকদের মন জয়ের চেষ্টায় আগেভাগেই গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। তবে জেলা পর্যায়ের ১২ আসনের মধ্যে অন্তত ৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। আসনগুলো হচ্ছেÑ হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, বাঁশখালী ও সাতকানিয়া-লোহাগাড়া। সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে গেলবার নির্বাচিত হয়েছেন জামায়াত ঘরানা থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া ড. আবু রেজা নদভী। নদভী এবারও এ আসনে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। তবে দল থেকে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী অনেকে তৎপর রয়েছেন। এ পর্যন্ত যাদের নাম শোনা গেছে তারা হলেনÑ দলের কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন, সাংবাদিক আবু সুফিয়ান এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী লিয়াকত আলী। বাঁশখালী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তার পছন্দের প্রার্থীর চাওয়া অনুযায়ী প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ না হওয়ায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর করে আলোচিত হয়েছেন। এ আসনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থিতায় পরিবর্তন আসার গুঞ্জন রয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও থেমে নেই বিএনপি নেতাদের তৎপরতা। নগরীর বাইরে জেলার ১২ আসনে মনোনয়ন লাভে ইচ্ছুক বিএনপি নেতারাও নিজ নিজ এলাকার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন। বিগত নির্বাচনে অংশ না নিয়ে এবং দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থেকে দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এখন গভীর হতাশায় নিমজ্জিত। নেতারা চাইছেন কর্মীদের চাঙ্গা করতে। তবে মাঠপর্যায়ে সক্রিয়তা উল্লেখ করার মতো নয়। এরপরও বিএনপি নেতৃবৃন্দ মনে করেন, এদেশের নির্বাচনে ‘নৌকা-ধানের শীষ’ প্রতীক মানেই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আমেজ। নির্বাচন এলে ঠিকই লড়াই জমে উঠবে। তফসিল ঘোষণার পর নিষ্ক্রিয়দের সক্রিয় হতে বেশি সময় লাগবে না। তবে সবকিছু নির্ভর করছে শেষ পর্যন্ত দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে কিনা তার ওপর। চট্টগ্রাম নগর বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বললে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের ওপর। তবে আমরা মনে করি, বিগত নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল হয়েছে। আগামী নির্বাচনে নিশ্চয়ই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সেই ভুল আর করবে না।
×