ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিবন্ধিত সব দলের হালনাগাদ তথ্য নেই ইসিতে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৩ জুলাই ২০১৭

নিবন্ধিত সব দলের হালনাগাদ তথ্য নেই ইসিতে

শাহীন রহমান ॥ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর হালনাগাদ তথ্য নির্বাচন কমিশনে নেই। ফলে একাদশ নির্বাচন নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আগে যোগাযোগের জন্য কমিশনকে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, সংলাপ সামনে রেখে অনেক দলের ইসিতে দেয়া আগের ঠিকানায় যোগাযোগ করে কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় দলগুলোর সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগাযোগের জন্য সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ের মধ্য থেকে যে কোন একজনের নাম, ঠিকানাসহ যোগাযোগের বিস্তারিত নির্বাচন কমিশনকে জানাতে চিঠি দেয়া হচ্ছে। চিঠিতে সাত কর্মদিবসে দলগুলোর ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে দায়িত্বশীল ব্যক্তির নাম দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনে দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির নিবন্ধন থাকলেও দলটির নিবন্ধনের হালনাগাদ তথ্য নেই। গত বছর ১৯ মার্চ দলটির ষষ্ঠ কাউন্সিল হলেও ইসিতে চিঠি দিয়ে তা হালনাগাদ করা হয়নি। ফলে নিবন্ধনের তালিকায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব উল্লেখ করা হয়েছে। তবে দলটির সঙ্গে যোগাযোগের বিস্তারিত ঠিকানা উল্লেখ থাকলেও ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য হালনাগাদ তথ্য ইসিতে নেই। ফলে দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে ইসিকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৬ জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত রোডম্যাপ প্রকাশ করা হবে। রোডম্যাপের গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে রাজনৈতিক দলসহ সুশীল সামাজ, গণমাধ্যমের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন। ৩১ জুলাই থেকে সংলাপ শুরু হচ্ছে। প্রথমেই সুশীল সমাজের সঙ্গে সংলাপে বসছে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া রোডম্যাপে নির্বাচনের আগে আইনী কাঠামোগুলো পর্যালোচনা ও সংস্কার, কর্মপরকিল্পনার ওপর পরামর্শ গ্রহণ, সংসদীয় এলাকার নির্বাচনী সীমানা পুনঃনির্ধারণ, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ ও বিতরণ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা এবং নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, ৩০ জুলাই থেকে সংলাপের চূড়ান্ত দিনক্ষণ নির্ধারিত থাকলেও ওইদিন সিইসি সংলাপে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। তিনি ওদিন লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন। এ কারণে পরদিন ৩১ জুলাই বিকেল তিনটায় সুশীল সমাজের সঙ্গে সংলাপ দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু হচ্ছে আগস্ট থেকে। তা চলবে অক্টোবর পর্যন্ত। ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইসিতে নিবন্ধন রয়েছে এমন রাজনৈতিক দলের বাইরে কোন রাজনৈতিক দলকে সংলাপে ডাকার সম্ভাবনা নেই। এখন পর্যন্ত ৪০ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন রয়েছে। তবে ৪০ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন থাকলেও সবগুলো দলের হালনাগাদ তথ্য ইসিতে নেই। তারা বলেন, হালনাগাদ তথ্য না থাকার কারণেই মূলত সংলাপের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ‘ফোকাল পয়েন্ট’ হিসেবে একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির নাম চেয়ে চিঠি দেয়া হচ্ছে। দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির নিবন্ধন রয়েছে নির্বাচন কমিশনে। গত বছর ১৯ মার্চ দলটির ষষ্ঠ কাউন্সিল হয়। কাউন্সিলের পর দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মির্জা ফখরুল ইসলাম মহাসচিব হিসেবে দলটির দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু দলের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ইসিকে বিষয়টি অবহিত করা হয়নি। এ কারণে ইসিতে দলটির নিবন্ধের তালিকায় এখনও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা বলেন, কাউন্সিলের পর দলের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের নাম চিঠি দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করতে হবে। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ৪০ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নিবন্ধন পাওয়া দলগুলোর নিবন্ধনের নম্বর, নিবন্ধনের তারিখ, সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নাম, প্রতীকের নাম, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা, ফ্যাক্স নম্বর, ফোন নম্বর এবং মোবাইল নম্বর সংরক্ষিত রয়েছে। তবে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৪০ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের এসব তথ্য থাকলেও অনেক রাজনৈতিক দলের হালনাগাদ তথ্য নেই। ফলে জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বিধায় দলগুলোকে চিঠি দেয়া হচ্ছে দায়িত্বশীল ব্যক্তির নামসহ যোগাযোগের জন্য ঠিকানা কমিশনের পাঠানোর জন্য। এই পরিপেক্ষিতে ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বুধবার সব দলের সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়ে ‘ফোকাল পয়েন্ট’ হিসেবে একজনের নাম, ফোন নম্বর ও যোগাযোগের ঠিকানা চেয়েছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে সেসব তথ্য ইসি সচিবালয়ের পাঠাতে বলা হয়েছে। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করার প্রয়োজনে আপনার দলের ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে (সভাপতি/ প্রেসিডেন্ট/ আমির/ আহ্বায়ক/ চেয়ারম্যান অথবা সমপর্যায়ের পদাধিকারী এবং সাধারণ সম্পাদক/মহাসচিব/ সেক্রেটারি জেনারেল অথবা সমপর্যায়ের পদাধিকারীর মধ্য থেকে যে কোন একজন) একজনের নাম, ফোন নম্বর, মোবাইল নম্বর, ফ্যাক্স নম্বর, ই-মেল ও পত্র যোগাযোগের ঠিকানা সাত কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পাঠাতে হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, সব দলের হালনাগাদ তথ্য কমিশনের কাছে না থাকায় চিঠি দিয়ে ‘ফোকাল পয়েন্ট’ খোঁজার এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন সময়ে এসব দলের নির্ধারিত ঠিকানায় চিঠি দিয়ে তারা সাড়া পাননি। কয়েকটি দল আগের ঠিকানা বাদ দিয়ে এখন দলের চেয়ারম্যানের বাসার ঠিকানা ব্যবহার করছে। এছাড়া সব দলের কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা কমিটি বহাল রয়েছে কিনা, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। দলগুলো নিবন্ধনের শর্ত ঠিকভাবে পালন করছে তাও দেখা দরকার বলে কমিশনের কর্মকর্তারা মনে করছেন। ইসির কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগ্রহী নতুন দলের কাছে নিবন্ধনের আবেদন চাওয়া হবে অক্টোবরে। পাশাপাশি নিবন্ধতি ৪০ দল শর্তগুলো মেনে চলছে কিনা, তা নিরীক্ষা করা হবে। ইসির ‘নিবন্ধন যাচাই কমিটি’ এ বিষয়ে কাজ করবে বলে কমিশনের একজন উপসচিব জানিয়েছেন। জানা গেছে, অক্টোবর থেকে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে দলের নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে। অক্টোবর থেকে জানুয়ারির মধ্যে পুরনো দলগুলোর অবস্থা যাচাই করা হবে। ইতোমধ্যে ন্যাশনাল পিপলস পার্টিরে (এনপিপি) নিবন্ধনের শর্ত পূরণের বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য চেয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে রবিবার চিঠি দিয়েছে ইসি। ইসির সহকারী সচিব রৌশন আরা বেগম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, নিবন্ধন বিধির ৯ ধারা অনুসারে নিবন্ধনের শর্ত প্রতিপালন সম্পর্কে কমিশনকে অবহিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে অনুযায়ী শর্ত পূরণের হালনাগাদ তথ্য ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ইসিকে জানাতে হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, নিবন্ধন বিধিমালার ৯ ধারা অনুযায়ী, দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নতুন কমিটির সদস্যদের তালিকা ও সভার কার্যবিবরণী কমিশনে দাখিল করতে হবে। কমিশন সময়ে সময়ে যেসব তথ্য-দলিল চাইবে তা দেয়ার পাশাপাশি যেসব বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইবে তা দিতে হবে।
×