ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা আসছেন আজ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৩ জুলাই ২০১৭

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা আসছেন আজ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে আজ বৃহস্পতিবার তিনদিনের সফরে ঢাকা আসছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা। লঙ্কান প্রেসিডেন্টকে হযরত শাহজালাল (রা) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেলা সাড়ে এগরোটায় স্বাগত জানাবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। সিরিসেনার ঢাকা সফরকালে দুই দেশের মধ্যে দশটিরও বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, তিন দিনের সরকারী সফরে ১৩ থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। তার সফরসঙ্গী হয়ে আসছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী রবি করুনায়েকে, দর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রী অরুনা প্রিয়াদর্শনা, উচ্চশিক্ষা ও জনপথ প্রতিমন্ত্রী মোহন লাল গ্রেরো, কৃষি প্রতিমন্ত্রী ওয়াসানতা আলুইহারে, অর্থ ও গণযোগাযোগ উপমন্ত্রী লাসান্থা আলাগাইয়ানা ও নৌপরিবহন উপমন্ত্রী নিশান্থা মোথোতেইগামাসহ ৭৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল। শাহরিয়ার আলম জানান, এ সফরে দু’দেশের মধ্য দশটিরও বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সইয়ের প্রস্তাব দেয়া হবে যা কোন দেশের সঙ্গে হয়ে ওঠেনি। বর্তমানে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ৮০ মিলিয়ন ডলার। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আগামীকাল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপাক্ষিক বিষয়াবলী যেমন বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, মৎস্য, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল, শিক্ষা, তথ্য প্রযুক্তি, তথ্য ও প্রচার, ভিসা সংক্রান্ত বিষয়াবলীতে পারস্পরিক সহযোগিতা প্রভৃতি গুরুত্ব পাবে। বৈঠক শেষে দশটির বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। এসবের মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে সহযোগিতা, উচ্চশিক্ষা, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল, কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি, দুদেশের বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা, দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে সহযোগিতা, দুই দেশের ফরেন সার্ভিস ইনস্টিটিউটের মধ্যে সহযোগিতা, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিস (বিআইআইএসএস) ও শ্রীলঙ্কার লক্ষণ কাদিরগামার ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্সের মধ্যে সহযোগিতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে চুক্তি ও সমঝোতা সই হবে। বৃহস্পতিবার ঢাকা পৌঁছানোর পর শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মাদানকারী শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এদিন সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করবেন। শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এদিন সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে বঙ্গভবনে সাক্ষাতে মিলিত হবেন মৈত্রীপালা সিরিসেনা। তার সম্মানে রাষ্ট্রপতির দেয়া নৈশভোজে অংশগ্রহণ করবেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট। শনিবার সকালে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এমসিসিআই ও বিডার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার বিজনেস সংলাপে অংশগ্রহণ করবেন। এরপরেই তিনি শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন। তবে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোন বৈঠক হচ্ছে না বলে জানা গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরে দুই দেশের মধ্যে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশ-কলম্বো বন্দর ব্যবহার করবে। এর ফলে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে কোস্টাল শিপিং চুক্তি স্বাক্ষরের পর শিপিং সেক্টর আরও গতিশীল হবে। সমঝোতা স্মারকের পর বাংলাদেশ-কলম্বো বন্দরে ট্যারিপ এবং অন্যান্য সুবিধা পাবে। কলম্বো বন্দর ব্যবহারে পণ্য পরিবহনে সময়ও সাশ্রয় হবে। এই চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে শিপিং সেক্টরে আরও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া বন্দরে শিপমেন্ট বাড়বে এবং শ্রীলঙ্কার ক্যাডেটরা বাংলাদেশের মেরিন একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেবে। এই সমঝোতা স্মারকের ফলে আঞ্চলিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা (বিবিআইএম), বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডর এবং বঙ্গোপসাগরীয় জোট বিমসটেকের আওতায় আঞ্চলিক কানেকটিভিটির ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সই করার জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ এলডিসি দেশের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে এটি হবে বাংলাদেশের প্রথম দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে চীন, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশের মুক্তবাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার বাণিজ্য কার্যক্রম সম্প্রসারণে এই চুক্তি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছে উভয় পক্ষ। মৈত্রীপালা সিরিসেনা এর আগে শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। এছাড়া ২০১১ সালের এপ্রিলে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে ঢাকায় এসেছিলেন। গত মে মাসে শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা ঢাকা সফর করেন। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মেরিটাইমস এ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার এ্যাডমিরাল ( অব.) খুরশেদ আলম, কলম্বোয় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
×