ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় রাজধানীর সব সড়কে যানজটের ভোগান্তি

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৩ জুলাই ২০১৭

বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় রাজধানীর সব সড়কে যানজটের ভোগান্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ খিলগাঁও স্টাফ কোয়ার্টার স্কুলের সামনের সড়কে বিআরটিএ’র মোবাইল কোর্ট চলছিল দুপুরের আগে থেকেই। অল্প সময়ের মধ্যে খবর ছড়িয়ে যায় চারদিকে। সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী থেকে রামপুরামুখী প্রায় সবগুলো পরিবহন বিকল্প সড়কে চলার চেষ্টা করে। ফ্লাইওভারে না উঠে সড়কের নিচ দিয়ে গাড়ি আসে। রামপুরা যেতে খিলগাঁও মোড় হয়ে তালতলা সড়ক ব্যবহার করতে গিয়েই সমস্যার সৃষ্টি হয়। মোবাইল কোর্ট এড়ানোর চেষ্টায় বাসাবো বৌদ্ধ মন্দির থেকে খিলগাঁও রেলগেট পর্যন্ত প্রচ- যানজটের সৃষ্টি হয়। মালিবাগ, তালতলা, শাজাহানপুর থেকে শুরু করে আশপাশের অলিগলিতের যানজট ছড়িয়ে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন ও যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মোবাইল কোর্ট এড়াতে যানবাহনগুলো বিকল্প সড়ক ব্যবহার করায় যানজটের ভোগান্তির কথা কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে জানানো হলেও তারা এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেননি। বেলা সাড়ে চারটার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। থেমে থেমে বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতার কারণে বুধবার রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সব সড়কেই যানজটের ভোগান্তি হয়েছে। বাংলামোটর থেকে মালিবাগ মোড় কিংবা মৌচাক যেতে সময় লেগেছে প্রায় দুই ঘণ্টা। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাধারণ যাত্রীরা। যানজটে দীর্ঘ সময় ভুক্তভোগী বিপ্লবী সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলামোটর মোড় থেকে মৌচাক যেতে অনেক সময় লাগছে। এক ঘণ্টার বেশি পেরিয়ে গেলেও এখনও গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি। তিনি ট্রাফিক বিভাগের অবহেলার অভিযোগ এনে বলেন, রাজধানীর যানজট নিরসনে ঢিলেঢালা কার্যক্রম চলছে। দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিরা কোন খোঁজখবর রাখেন না। মেয়ররাও মানুষের দুর্দশা কমাতে আন্তরিক নন। তাই অল্প জলাবদ্ধতায় মাত্রা ছাড়ায় দুর্ভোগ। মঙ্গলবার দিনভর ও রাতের বৃষ্টিপাতে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ কারণে বুধবার সকাল থেকেই দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় নগরবাসীকে। আষাঢ়ের শেষ সময়ে এসে সারাদেশেই মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, আপাতত বৃষ্টি থামার কোন সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ নগরবাসীর কপালে দুঃখ আরও আছে। তবে তা বেশিদিন নয়। শনিবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হবে এমন আভাস দিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। এরমধ্যে শেষ হচ্ছে বর্ষা মৌসুম। তাই আগামী সপ্তাহ থেকে বৃষ্টিপাত কমতে পারে। যদিও শ্রাবণ ও ভাদ্র পর্যন্ত কোন কোন সময় বৃষ্টি হতে দেখা যায়। তবে পরিমাণে কম। এবার আগাম বর্ষা শুরু হয়। বৃষ্টিপাত অব্যাহত। তাই কবেনাগাদ বৃষ্টি হ্রাস পাবে তা সঠিক বলা মুস্কিল। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে বুধবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ঢাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১০৩ মিলিমিটার। বৃষ্টিপাতের এই পরিমাণ অন্য সব বিভাগীয় শহরের চেয়ে বেশি। তাই জলাবদ্ধতা ও দুর্ভোগ স্বাভাবিক বিষয়। বৃষ্টিপাতের কারণে রাজধানীর ধানম-ি, ২৭ নম্বর, মোহাম্মদপুর সড়ক, মীরপুর, আগারগাঁও, মতিঝিল, কাওরান বাজার, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, মালিবাগ, শান্তিনগর, রাজারবাগ, মৌচাক রেলগেট, সিদ্ধেশ্বরী, নয়া পল্টন, ফকিরাপুল, কমলাপুর, টিটিপাড়া, সংসদ ভবন এলাকা, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। রাজধানীর চারপাশ দিয়ে বয়ে চলা বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা নদীতে এখন থৈ থৈ পানি। রাজধানীর নিম্নাঞ্চলগুলোতেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সবুজবাগ থেকে মতিঝিল অফিসে যাচ্ছিলেন সোহেল। তিনি জানান, পানির দুর্ভোগ পোহাতে পোহাতে অফিসে যেতে হয়েছে। গাড়ি সঙ্কট। তাই কখনো কখনো রিক্সা বা পায়ে হেঁটে পথ চলতে হয়। গাবতলী থেকে সকালে কাওরান বাজার যাচ্ছিলেন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মী বিপ্লব পাল। তিনি বললেন, সকাল সাড়ে সাতটায় বাসে ওঠেন কাওরান বাজারে যাওয়ার জন্য। দুই ঘণ্টায় তিনি জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে পৌঁছেন। সংসদ ভবনের সামনে থেকে ফার্মগেট মোড় পর্যন্ত জ্যাম থাকায় সেখান থেকে তিনি হেঁটেই কাওরান বাজারের দিকে রওনা দেন। তিনি বলেন, বাস থেকে নেমে হেঁটে যাওয়ারও উপায় নেই। কারণ, রাস্তার দুই পাশে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। রামপুরা ব্রিজ থেকে মালিবাগ রেলগেট, মৌচাক, মালিবাগ মোড়সহ শান্তিনগর পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা। ছোট বড় অসংখ্য খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে এই সড়কে। জমেছে হাঁটু পানি। স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। ফলে তিন কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে সময় লাগছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। দুর্ভোগ এড়াতে মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার বিকল্প সড়ক ব্যবহার করছে যানবাহনগুলো। কিন্তু বাস যাত্রীদের মালিবাগ রেলগেট এলাকায় দীর্ঘ সময় গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কাওরান বাজারে কাজী নজরুল ইসলাম এ্যাভিনিউয়ে পয়ঃনিষ্কাশন লাইনের কাজ চলতে থাকায় সেখানে প্রায় হাঁটু পানি জমে যায়। সেখানে ফুটপাথও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ইট-বালু রাখা হয়েছে রাস্তার ওপর। তাই হেঁটে চলাচলকারী লোকজনকে বাধ্য হয়ে মাঝপথ দিয়ে যেতে হচ্ছে। এ কারণে সড়কের ওই জায়গায় যানবাহনের গতি কমে যাচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে ব্যাপক যানজট। মালিবাগে প্রায় কোমড়সমান পানি থাকায় সেখানকার একটি বেসরকারী স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অভিভাবক নাসরিন জাহান জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ মুঠোফোনে অভিভাবকদের কাছে বার্তা পাঠিয়ে স্কুল বন্ধের কথা জানিয়েছে। নগরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় ঘোর বর্ষাতেও চলছে সেবা সংস্থাগুলোর খোঁড়াখুঁড়ি। কাজ শেষ হয়নি যথাসময়ে। কবে শেষ হবে তাও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। এরমধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়েছে। সাধারণ মানুষের বক্তব্য, জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে শীত মৌসুম বা শুকনো মৌসুমে সেবা সংস্থাগুলোর কাজ শেষ করার। এতে প্রতি বছরের ভোগান্তি শেষ হবে। মীরপুর ১০ নম্বর থেকে তালতলা পর্যন্ত চলা বাহন পরিবহনের চালক মিলন জানালেন, যানজটের কারণে পাঁচ ঘণ্টায়ও গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। তুরাগ পরিবহনের চালক আশরাফ জানান, টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত যেতে সময় লেগেছে প্রায় ছয় ঘণ্টা। টঙ্গী থেকে মহাখালী, বাড্ডা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত সড়কে সীমাহীন যানজটের ভোগান্তি বলেও জানান তিনি। বলাকা পরিবহনের চালক আশরাফ জানান, যাত্রাবাড়ী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা যেতে আসতেই দিন শেষ। টঙ্গী এলাকায় সড়কে পানি জমে খালে পরিণত হয়েছে। ভোগান্তিও বেড়েছে সবার।
×