ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাশ

বিক্রমের সিনেমেটিক বিপর্যয়

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১৩ জুলাই ২০১৭

বিক্রমের সিনেমেটিক বিপর্যয়

শুরুটা একটা সিনেমেটিক গল্পের মতই। গল্পে নায়ক একজন জনপ্রিয় অভিনেতা। বাড়ির গৃহবধূ থেকে কলেজে পড়া তরুণী সকলেই তার অভিনয় এবং গ্লামার দুটোতেই মুগ্ধ। ব্যক্তিগত জীবন তিনি আর পাঁচটা সেলিব্রেটির মতোই উপভোগ করেন! সপ্তাহে দু-তিনটে ওভার নাইট পার্টি তার জন্য খুবই সাধারণ। কিন্তু, তার এমন স্বাভাবিক কর্মযজ্ঞে হঠাৎ ঘটলো ভয়নক বিপত্তি! সেদিন ও ছিল ওভার নাইট পার্টি সঙ্গে রঙিন দুনিয়ার আর এক চকচকে সুন্দরী সেলিব্রেটি। রাত বাড়ছে, সঙ্গে বাড়ছে পার্টির জৌলস, নাচ গান ও চলছে হরদম। মধ্যরাত অনেক আগেই পার হয়েছে। সম্ভাবত শরীর আর পেরে উঠছিল না। এখন বাড়ি ফেরা যাকে! অসমাপ্ত পার্টি ছেড়ে সুন্দরী মডেল সঙ্গে নিয়ে গাড়ি করে রওনা হলেন। সময় তখন শেষ রাত (প্রায় চারটা)! গাড়ি চলছে জোর গতিতে, ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কি.মি বেগে। তবে, নায়কের মতো একটু বেশামাল ছিল গাড়ির গতিবিধি। ক্ষণিকটা পথ যাবার পর ফাঁকা রাস্তায় আইল্যান্ডের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ঘটল ভয়ানক দুর্ঘটনা। মুহূর্তেই দুমড়ে মুচড়ে চুরমাড় হয়ে গেল নায়কের সুন্দর সাদা গাড়িটি। নিশ্চই! এমন ঘটনার জন্য নায়ক কিংবা সঙ্গের আরোহী কেউই প্রস্তুত ছিল না। ভয়ানক দুভাগ্য! দুর্ঘটনার জায়গাতেই প্রাণ হারালেন নায়কের বাড়ি ফেরার সহযাত্রী জনপ্রিয় মডেল। গাড়িতে থাকা পাঁচটা এয়ার ব্যাগ তাকে রক্ষা করতে পারেনি তাজা প্রাণটি অকালে ঝরে গেল প্রাণহীন রাস্তায়। মুহূর্তেই খবর হলো চরাচর। নায়কও আহত হলেন, আঘাত ছিল গুরুতর! ভর্তি ছিলেন হাসপাতালের আইসিউতে। অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় থানায় দায়ের হলো পুলিশ কর্তৃক অপমৃত্যু মামলা। সঙ্গত কারণে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় নায়ককে। নায়ক নিজেকে নির্দোষ এবং এটা একটা অনাকক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এটা প্রমাণে জোর চেষ্টা করে। এতক্ষণ যে গল্পটা বলছি, পাঠক নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন এটি কোন কাল্পনিক সিনেমেটিক গল্প নয়। এটি এখনকার সময়ের বিনোদন জগতের অন্যতম আলোচিত ঘটনা। কেউ যদি না শুনে থাকেন তবে তার কাছে পুরো ঘটনাটি সিনেমা বলে মনে হবে। আসলে নিয়তি কাকে কখন কোথায় নিয়ে যায় তা কেউ বলতে পারে না। এক্ষেত্রে নায়ক অর্থাৎ, বিক্রম চট্টোপাধ্যায় এবং দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো জননন্দিত মডেল সনিক সিংহ চৌহানের বেলায় নিয়তি ছিল বড়ই নির্মম! এমন সুন্দর মেয়েটি অকালে চলে গেল এটা তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব কেউই কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। সবাই বলছে, না সনিকার এভাবে চলে যাবার কথা ছিল না, ও অনেক ভাল কাজ করছিল সামনে ওর উজ্জ্বল ভবিষ্যত। ও কেন চলে যাবে আর কেনই বা এটা হলো... এমন প্রলাপ সনিকার কাছের মানুষের। দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল গত ২৯ এপ্রিল শেষ রাতে। কলকাতার রাসবিহারী রোডে। ঘটনা ঘটার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তিনবার থানায় তলব করা হয়েছিল দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া বিক্রমকে। দফায় দফায় তাকে প্রশ্ন করা হয়েছে। তদন্তের শেষে জেরায় তাকে প্রায় তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রথমেই তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল গাড়ি চালানোর সময় তিনি মদ্যপ ছিলেন কি না? উত্তরে বিক্রম নিজেকে স্বাভাবিক বলেছিলেন। পরে অবশ্য স্বীকার করেছেন, সামান্য ড্রিংস তিনি করেছিলাম। ওটা ছিল তার জন্য খুবই স্বাভাবিক। এসব জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে মামলা করে থানা পুলিশ। মামলাগুলো ছিল স্বাভাবিক জামিনযোগ্য মামলা। যে কারণে বিক্রম আগেই কোর্ট থেকে জামিন পেয়েছিলেন। কিন্তু বিপত্তি ঘটল যখন সনিকা চৌহানের তিন বান্ধবী স্বেচ্ছায় কোর্টে গিয়ে জবানবন্দি দিল। নতুন নতুন প্রশ্নের উদয় হলো। সনিকার বান্ধবীদের দেয়া জবান অনুযায়ী বিক্রম পরো পুরি মদ্যপ ছিলেন এবং বেপরোয় গাড়ি চালিয়েছেন। কিছু দূর আসার পর গাড়ি থামিয়ে একটি জায়গায় প্রায় চল্লিশ মিনিট সময় কাটিয়েছেন তারা, আবার গাড়িছুট। এ যাত্রা গাড়ির গতি ছিল হাওয়াই জাহাজতুল্য। ঘটনার সবটাই ধরা পড়ছে সিসি টিভির ফুটেজে। এতসব অপরিষ্কার ঘটনার কারণে বিক্রমের বিরূদ্ধে দায়ের করা হয় অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা, যা কিনা জামিন আযোগ্য মামলা। ঘটনার ৭০ দিন পর অর্থাৎ গত ছয় জুলাই রাত সাড়ে বারোটার দিকে কাসবার একটা হলের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয় বিক্রম চট্টোপ্যাধায় কে। তিনি এখন কলকাতার টালিগঞ্জ থানায় অপরিষ্কার ছেঁড়া কম্বলে দিন কাটাচ্ছেন। বাড়িতে তার মা চিন্তায় অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। শেষে ঘটনার দৃশ্যপটে কি কি ঘটতে পারে কিংবা কাহিনী কত ডিগ্রী এঙ্গেলে ঘুরে যেতে পারে সেটাই এখন অপেক্ষা করে অবলোকন করতে হবে। তবে বিক্রম ভক্তরা এই ঘটনায় বিক্রমকে কি ভাববেন? দিন যত গড়ছে ততই ধাঁধার মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন বিক্রম ভক্তরা।
×