ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হব না আতঙ্কিত;###;জাস্টিন গোমেজ

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ চিকুনগুনিয়া

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ১৩ জুলাই ২০১৭

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ চিকুনগুনিয়া

চিকুনগুনিয়া একটি আফ্রিকান শব্দ। এর অর্থ ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে যাওয়া। জ¦রে হাড়ের জয়েন্টগুলো ফুলে যাওয়ার জন্য এই নামকরণ। ২০০৮ সালে প্রথম বাংলাদেশে চিকুনগুনিয়ার অস্তিত্ব ধরা পড়ে এবং ২০১১ সালে দ্বিতীয়বার সংক্রমণ ঘটে। আর এ বছর এসে এটি আরও প্রবল হয়ে ওঠে। বর্তমানে চিকুনগুনিয়া এখন একটি আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। এটি হচ্ছে মশাবাহিত ভাইরাসজনিত একটি রোগ। আমাদের অতি পরিচিত ডেঙ্গুর সঙ্গে এর বেশ কিছুটা মিল রয়েছে। ডেঙ্গুর মতোই এ ভাইরাসটিও এডিস ইজিপ্টাই এবং এডিস অ্যালবপ্টিকাস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। মনুষ ছাড়াও বানর, পাখি এবং ইঁদুরেও এ ভাইরাসের জীবনচক্র বিদ্যমান। অনেকের এই ভাইরাস জ¦র সেরে যাওয়ার পরও দেখা যায় দীর্ঘদিন ধরে শরীর ভাল যায় না। সাধানরণত যে কোনো ভাইরাস কিংবা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ ভাল হয়ে যায়। অথচ দেখা যাচ্ছে জ¦র সেরে গেলেও রোগী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ও দুর্বলবোধ করছেন, বিশেষ করে শরীরের বিভিন্ন গিটে গিটে ব্যথা, দুর্বলতা এবং ক্লান্তি খুব ভোগায়। এ সকল ক্ষেত্রে ডেঙ্গু হিসেবে সন্দেহ করা হলেও এ রোগটি সম্ভবত ডেঙ্গু নয়, বরং এটি চিকুনগুনিয়া নামক মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। সাধারণত চিকুনগুনিয়া ভাইরাস আক্রন্ত মশা কামড় দেয়ার তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে লক্ষণ দেখা দেয়। সাধারণত এ জ¦র ১০১ ডিগ্রী থেকে ১০৪ ডিগ্রী পর্যন্ত ওঠে আর জয়েন্টে প্রচ- ব্যথা থাকে। এছাড়াও বমি, মাথা ব্যথা, মাংসপেশী ব্যথা, জয়েন্ট ফুলে যাওয়া, দুর্বলতার সমস্যা দেখা দেয় দেয়। ত্বক চুলকায়। জ¦র এবং ব্যথায় কাতর হয়ে অনেকের মধ্যে অবসাদের প্রভাব দেখা যেতে পারে। ফলে কোন কাজেই মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। অনেক ক্ষেত্রে চোখ লাল হয়ে যাওয়া বা চোখের মধ্যে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। আবার অনেক সময় চোখের ব্যথা এতটাই বেড়ে যায় যে আলোর দিকে তাকাতে সমস্যা হয় এবং উপসর্গগুলো বেশিদিন থাকে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে জ¦র ভাল হয়ে গেলে কয়েকদিন দুর্বলতা বা ক্লান্তি লাগতে পারে কিন্ত সাধারণম এত দীর্ঘ সময়ে শরীর ব্যথা বা অন্য লক্ষণগুলো থাকে না। আবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর শরীরে বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তক্ষরণ হয়, যা অনেক সময় খুব ভয়াবহ হতে পারে। কিন্তু চিকুনগুনিয়া রোগে ডেঙ্গুর মতো রক্তক্ষরণ হয় না এবং রক্তের প্লাটিলেট খুব বেশি হ্রাস পায় না। এখন পর্যন্ত চিকুনগুনিয়ার কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। জ¦র হলে এক সপ্তাহ সাবধানে থাকতে হয় যেন মশা না কামড়ায়। কারণ, মশা কামড় দিলে মশার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া দেহে ছড়াবে। মশা নিয়ন্ত্রণ ও ঘুমানোর সময় মশারি টাঙিয়ে ঘুমানো, লম্বা হাতল-যুক্ত জামা ও ট্রাউজার পরে থাকা, বাড়ির আশপাশে পানি জমতে না দেয়া ইত্যাদি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। শুধু স্ত্রী মশা দিনের বেলা কামড়ায়। আর এরা একবার একের অধিক ব্যক্তিকে কামড়াতে পছন্দ করে। এদের একবার রক্ত খাওয়া শেষে ডিম পাড়ার পূর্বে তিন দিনের বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। আর এদের ডিমগুলো পানিতে এক বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। অল্প পরিমাণ জমে থাকা পানিও ডিম পরিস্ফুটনের জন্য যথেষ্ট। এডিস মশা স্থির পানিতে ডিম পাড়ে তাই বলে বালতি, ফুলের টব, গাড়ির টায়ার প্রভৃতি স্থানে যেন পানি জমতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এসব নিয়ম মেনে চললে চিকুনগুনিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। নটর ডেম কলেজ, ঢাকা থেকে
×