ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আইসিটিতে কর্মসংস্থান

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ১৩ জুলাই ২০১৭

আইসিটিতে কর্মসংস্থান

চলমান জাতীয় সংসদে পরিবেশিত এক তথ্যে জানা যায়, ২০২১ সাল নাগাদ দেশে আইসিটি সেক্টরে ২০ লাখ তরুণ-তরুণী কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো, দেশে একটি তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা। স্বনির্ভর ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ বর্তমান সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। এও অস্বীকার করা যাবে না যে, প্রান্তিক পর্যায়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যেও আইসিটির ভূমিকা ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। বর্তমানে কৃষি, চাষাবাদ, খাদ্যশস্য বিপণন, পরিবহন ও যোগাযোগ এমনকি চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি। অথচ ২০০৯ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন তখন রাজধানীর বাইরে কোন ইন্টারনেট সংযোগ পর্যন্ত ছিল না। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশই কর্মক্ষম। আরও যা আশার কথা তা হলো, দিনে দিনে বাড়ছে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা। ২০৩০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা পৌঁছাবে ৭০ শতাংশে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার এহেন অগ্রগতির খবর প্রকাশিত হয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি) প্রতিবেদনে। সংস্থাটি মঙ্গলবার এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে এই অঞ্চলভুক্ত ৪৫টি দেশের জনসংখ্যাভিত্তিক তথ্য, পরিবর্তনের ধরন ও করণীয় বিষয়েও অল্পবিস্তর আলোকপাত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে জনসংখ্যার সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, কর্মক্ষম জনশক্তিকে কাজে লাগানোর মতো উন্নত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভিন্নধর্মী কাজ, কারিগরি দক্ষতা, সৃজনশীল জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ বাংলাদেশের নেই। বর্তমান সরকার ১৯৯৬ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে সর্বাগ্রে মনোনিবেশ করে খাদ্য উৎপাদনে। পরিকল্পিত কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিদেশে একসময়ে তলাবিহীন ঝুরি হিসেবে অভিহিত দেশটি চাল রফতানি করে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের প্রেরিত রেমিটেন্সের সুবাদে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইতোমধ্যে ২৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিদ্যুত উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে বাংলাদেশ আগামীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে যাচ্ছে। গার্মেন্টস শিল্পে দেশের সুখ্যাতি বিশ্বজোড়া। আয়ও যথেষ্ট। এ খাতে কয়েক লাখ নারীর কর্মসৃজন হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে বিশ্বে। প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কর্মসূচীসহ নারী ও শিশু মৃত্যুর হার প্রতিরোধেও বাংলাদেশের সাফল্য প্রশংসনীয়। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ইতোমধ্যে ৭ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। বেড়েছে মাথাপিছু আয়। নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ থেকে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে ধাবমান বাংলাদেশ। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮ শতাংশ অতিক্রম করা। সেটা অতিক্রম করতে হলে ইউএনডিপি উল্লিখিত ৬৬ শতাংশ কর্মক্ষম জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। অদক্ষ জনশক্তিকে রূপান্তরিত করতে হবে দক্ষ জনশক্তিতে। জোর দিতে হবে কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের ওপর। বাড়াতে হবে শিক্ষার মান। তথ্যপ্রযুক্তি-জ্ঞান-বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের দিকে নজর দিতে হবে। সর্বোপরি কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য জোর দিতে হবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের ওপর। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক বিশ্বে হাত গুটিয়ে বসে থাকার অবকাশ নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ যথার্থ অর্থে গড়ে তুলতে হলে আইসিটি সেক্টরের ব্যাপক উন্নয়ন ও বিকাশ ছাড়া গত্যন্তর নেই।
×