ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিল্প করিডর

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ১৩ জুলাই ২০১৭

শিল্প করিডর

দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের দু’পাশে শিল্প করিডর গড়ে তোলার কাজ শুরু হচ্ছে। এমনিতেই দেশে অপরিকল্পিতভাবে অনেক শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। তাই সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে দেশের মহাসড়কের দুই পাশে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কর্মকা- চালুর। যাতে গড়ে উঠবে শিল্প-কারখানা এবং তা ভারত ও মালয়েশিয়ার আদলে হতে যাচ্ছে। এতে স্বল্প ব্যয়ে এবং খুব কম সময়ে পণ্য পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত হবে যেমন তেমনি বিনিয়োগ আকর্ষণে হবে সহায়ক। মহাসড়ক ঘিরে সড়ক, রেল, বন্দর সুবিধার পাশাপাশি বিমানবন্দর থাকার ব্যবস্থার পরিকল্পনাও নেয়া হচ্ছে; যাতে উৎপাদিত পণ্য সহজে আনা-নেয়া করা যায়। তবে শুধু শিল্পাঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে পর্যটন অঞ্চল ও শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং আবাসনের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে; যাতে এক জায়গায় সব সেবা একসঙ্গে পেতে পারেন উদ্যোক্তা। এ জন্য নির্দিষ্ট এলাকাকে চিহ্নিত করে শিল্প করিডর অঞ্চল ঘোষণা ও সংরক্ষণের কাজ শুরু করা হচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয় এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ব্যাপকহারে পরিকল্পিত শিল্পায়ন গড়ে তোলার জন্যই এই পদক্ষেপ। শিল্পায়নের কোন বিকল্প নেই উন্নত দেশের পথে যেতে হলে। পরিবহন, যোগাযোগ ও অন্যান্য সুবিধা বিবেচনা করেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকার মনে করছে, বাংলাদেশের বাণিজ্য সংযোগ স্থাপনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডরের অদক্ষতাই দেশের শিল্প সম্প্রসারণে বড় বাধা। এই করিডর দিয়ে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আমদানি-রফতানি বাণিজ্য পরিচালিত হয়। দিন দিন এর পরিমাণ বাড়ছে। যেহেতু টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও রফতানিমুখী হতে হবে দেশকে, তাই এক্ষেত্রের সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তথা বিডা এ লক্ষ্যে কাজ করছে। সমীক্ষা অনুযায়ী পাঁচটি রুট বাছাই করা হয়েছে। বিধিমালায় খসড়াও প্রণীত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা-বেনাপোল মহাসড়কের দুই পাশে এই করিডর তৈরি হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে অন্যত্রও গড়া হবে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে এই মূহূর্তে জমি অধিগ্রহণ। যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হবে, তাদের এই প্রকল্পের সুফল অনুধাবনের ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষকে খেপিয়ে জবরদস্তি করে করিডর গড়া যাবে না। জনগণকে আস্থায় নিয়ে করতে হবে। একই সঙ্গে তাদেরও প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা সঙ্গত। তা না হলে এই প্রকল্প সফল হবে না। ভবিষ্যতে আন্তঃদেশীয় মহাসড়কের উভয়পাশও হবে এই করিডরের অন্তর্ভুক্ত। পরে আঞ্চলিক করিডরের পরিকল্পনা রয়েছে; যেখানে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও চীন সংযুক্ত হবে। মহাসড়কের দু’পাশে পরিকল্পিতভাবে শিল্প-কারখানা স্থাপন করা হবে। তবে পুরো মহাসড়কেই নয়। মাঝখানে বাদ যাবে। মহাসড়কের উভয়পাশে জমি অধিগ্রহণ করে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং অন্যান্য শিল্প স্থাপনের উপযোগী করে উদ্যোক্তাদের মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হবে জমি। আমদানি বিকল্প শিল্প এলাকা, শতভাগ রফতানিমুখী শিল্প, বাণিজ্যিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, আবাসন ও স্বাস্থ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানÑ এই চার ভাগে করিডরকে ভাগ করা হবে। দীর্ঘ মেয়াদে ভাড়া কিংবা ইজারা হিসেবে উদ্যোক্তা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সহায়ক সেবাসহ জমি বরাদ্দ দেয়া হবে। বেপজা ও বেজা কর্তৃপক্ষ করিডরের আওতায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। এ উদ্যোগ বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ বৈকি। সার্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের উন্নয়ন বিপ্লবের সূচনা করবে এই করিডর অঞ্চল। শিল্পায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ উন্নয়নের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাই বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই করিডর একটি বড় প্রয়োজনীয় ধারণা হতে পারে। এতে বিনিয়োগ খরা কাটবে। উদ্যোক্তারাও আগ্রহী হবেন বিনিয়োগে।
×