স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া আপীল বিভাগের রায় নিয়ে সংসদে বিচারাঙ্গন, প্রধান বিচারপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সম্পাদকসহ বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রিত সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে মঙ্গলবার সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্যদের বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বানও জানানো হয়।
এদিকে এই কর্মসূচীর পর পরই সহসভাপতি অজিউল্লাহর নেতৃত্বে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটিতে থাকা আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কর্মকা-ের অভিযোগ তোলেন।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় রবিবার সংসদে বিচার বিভাগ নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন আইনপ্রণেতারা। প্রধান বিচারপতি এবং এই মামলার এ্যামিকাস কিউরিদের নিয়েও সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ, জাসদ ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি আবার এর উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, সংসদ সদস্যরা সংসদ পরিচালনার বিধিবিধান সম্ভবত ভুলে গিয়েছিলেন। যে ব্যক্তি তার সম্পর্কে সমালোচনার জবাব দিতে পারবে না, অর্থাৎ সংসদে উপস্থিত নেই, তার সম্পর্কে সংসদে কোন আলোচনা করা যায় না। অথচ সংসদ সদস্যরা দুজন প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। এমনকি প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছেন, যা সুস্পষ্টভাবে আদালত অবমাননার শামিল।
এসব বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত, প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি ও দেশের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সম্পর্কে সংসদে আপত্তিকর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এসব বক্তব্য প্রত্যাহার করতে স্পীকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
দুপুরে এই সংবাদ সম্মেলনের পর পরই একইস্থানে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হন সমিতির সহসভাপতি অজি উল্লাহ। তিনি বলেন, আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের সংবাদ সম্মেলন ছিল রাজনৈতিক আদর্শগত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ধরনের সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিচার বিভাগের কোন স্বার্থ রক্ষা হয়নি, হবেও না। বরং তা বিচার বিভাগের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের বিষয়ে জনগণের মাঝে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করবে।
সরকার সমর্থক আইনজীবীদের এই নেতা বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর মামলা চলাকালে এই সংশোধনীর বিষয়ে সংসদে কোন আলোচনা হয়নি। এতে প্রতীয়মাণ হয় যে, সংসদ বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় কোন হস্তক্ষেপ করেনি, রায়কে প্রভাবিত করার চেষ্টাও করেনি। রায়ের গঠনমূলক সমালোচনা কখনই বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয়। আর সংসদের ভেতরে আলোচিত কোন বিষয় নিয়ে সমিতির ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করা রাজনেতিক উদ্দেশ্য হাসিল ছাড়া আর কিছুই নয়। সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক রাষ্ট্রের দুটি স্তম্ভের মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছেন বলেও দাবি করেন সহসভাপতি অজি উল্লাহ।
তিনি বলেন, সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন এবং সংবাদ সম্মেলনে তাদের দেয়া বক্তব্য সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির বক্তব্য নয়।
উল্লেখ্য, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান কমিটিতে শীর্ষ দুটিসহ আটটি পদে বিএনপি সমর্থকরা রয়েছেন। ছয়টি পদে রয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থকরা।
