ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুইস ব্যাংকে অর্থ পাচার নিয়ে বিভ্রান্তি নিরসনে সংসদে অর্থমন্ত্রীর বিবৃতি

প্রকাশিত: ০৭:৩৩, ১২ জুলাই ২০১৭

সুইস ব্যাংকে অর্থ পাচার নিয়ে বিভ্রান্তি নিরসনে সংসদে অর্থমন্ত্রীর বিবৃতি

সংসদ রিপোর্টার ॥ সুইস ব্যাংকে অর্থ পাচার নিয়ে জনমনে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূর করতে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, বিদেশে টাকা পাচার হয় না একথা আমি বলব না। তবে যা পাচার হয় তা অতি যৎসামান্য। এটা নজরে নেয়ার মতো নয়। সুইস ব্যাংকে টাকা পাচারের বিষয়টি বাস্তবে মোটেই তেমন কিছু নয়। টাকার যে হিসাব গণমাধ্যমে বেরিয়েছে ওইগুলো সুইস ব্যাংকের সঙ্গে এদেশের লেনদেন হিসাব ও সম্পদের হিসাব। কিন্তু আমাদের সাংবাদিকরা অত্যন্ত অন্যায়ভাবে এই টাকা পাচার বলে দিয়েছেন। সেজন্য দেশে একটা ভুলবোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে রাতে সংসদ অধিবেশনে বিবৃতি দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সংবাদ মাধ্যমে সুইস ব্যাংকের টাকা পাচারের কাহিনী ফলাও করে প্রচারিত হচ্ছে, হয়েছে। বলা হয়েছে যে, ২০১৬ সালের শেষে বাংলাদেশীদের জমাকৃত অর্থের পরিমাণ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে ২০১৬ সালে ৬৯৪ মিলিয়ন ডলার ১৫ সেন্টে উন্নীত হয়েছে। যা ২০১৫ সালে ছিল ৫৮২ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন ডলার। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিদেশে অর্থ যে পাচার হয় না, সেকথা আমি বলব না। কিন্তু সংবাদ মাধ্যমে যে পরিমাণ টাকা পাচার হয়েছে বলে প্রচার করা হয়েছে বিষয়টা বাস্তবে অতিশয়োক্তি বলে বিবেচনা করা চলে। তিনি বলেন, দেশের ব্যবসা বাণিজ্য বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে হয়ে থাকে। সুইজারল্যান্ডেও আমাদের যথেষ্ট লেনদেন ও ব্যবসা বাণিজ্য আছে। সুইজারল্যান্ডে ব্যাংকিং ব্যবস্থা অনেক উন্নত। ফলে নিকটস্থ অন্যান্য দেশের মতো আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের দেনা পাওনার হিসাব সুইস ব্যাংকের মাধ্যমেও হয়ে থাকে। ২০১৩-১৪, ১৫ এবং ১৬ সালে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আমরা দেখেছি যে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের কারণে অনেক লেনদেন হয়েছে। ২০১৬ সালের হিসাব মোটামুটিভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। সুইস ব্যাংকের লেনদেনের হিসাব দুটি ছকে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের খাতে সুইস ব্যাংকগুলোর সম্পদ। আর এক ছকে বাংলাদেশের খাতে সুইস ব্যাংকগুলোর দেনা। ব্যাংকের সম্পদ যেসব অর্থ তারা ঋণ দেয়। তাদের ঘরবাড়ি আছে বলেই তো তারা ঋণ দেয়। আর দেনা হচ্ছে তাদের কাছে ডিপোজিটররা যে টাকা রাখেন, সেটা দেনা। ডিপোজিটরদের টাকা ফেরত দিতে হয়। বাংলাদেশের খাতে সুইস ব্যাংকের সম্পদ হচ্ছে ২০১৬ সালে ১৮২৩ কোটি টাকা। এই সময়ে তাদের দেনা ৫ হাজার ৫৬০ কোটি। অর্থাৎ ১৮২৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে এবং তাদের কাছে জমা হয়েছে ৫ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেন, সুইস ব্যাংকের বিনিময় হার সুইজারল্যান্ডের এক ফ্রাঁ সমান আমাদের ৮৪ টাকা। এতে দেখা যায় ২০১৫ সালে যে দেনা ছিল তা ২০১৬ সালের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম। আর ২০১৫ সালে যে সম্পদ ছিল তার থেকে ২০১৬ সালে ২ শতাংশ কমে গেছে। দেনার ক্ষেত্রে হিসাব এখনও পুরোপুরি চূড়ান্ত হয়নি। আমাদের দেশে সুইস ব্যাংকের দেনা পাওনার পরিমাণ খুব বেশি। এটি অবশ্য ব্যক্তির আমানত। অর্থমন্ত্রী বলেন, সুইজারল্যাান্ডের ব্যাংকের হিসাব ব্যক্তি খাতে মোট দেনা ৩৯৯ দশমিক ৮ কোটি। যা মাত্র ৭ শতাংশ। ব্যক্তি সম্পদ ১৮২৩ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ১৮৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে দেখা যায় বাস্তবে মোটেই অর্থ পাচার নয়। এটা নিয়ে অনেকের মধ্যে ভুলবোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। আমি মনে করি এই বিবৃতিতে তার অবসান হবে। ব্যক্তিখাতে অনেক হিসাব আছে। যারা বিদেশে চাকরি করে অথবা স্থায়ীভাবে বিদেশে কাজ করে। তাদের হিসাব এতে অন্তর্ভুক্ত আছে। তাদের কত টাকা আছে সেই তথ্য দিতে পারছি না। কারণ তাদের পাসপোর্টের হিসাব আমাদের কাছে নেই। পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে সুইস ব্যাংকে টাকা পাচার নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, অর্থমন্ত্রীর এই বিবৃতি আগে দেয়া হলে জনমনে এমন বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতো না। ভ্যাট প্রণয়ন যে ভুল ছিল এই সত্যতা উনি স্বীকার করেছেন। এটা স্বীকারের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রীর মহত্বই প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষ জানে যে অনেকেই সেকেন্ড হোম করে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। দেশের ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে কোন বিবৃতি দেয়া হয় না। এ কারণে জনগণ ধরেই নেয় যে, এসব টাকা লুটপাট হয়েছে। সরকারী বাতিগুলো লালবাতি জ্বলছে। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদই লুটপাটে সাহায্য করছে। সরকারী লোককেই তো পর্ষদে নিয়োগ দেয়া হয়। কত ভাগ দিলে লোন স্যাঙ্কশন করবে সেই কাজেই তারা ব্যস্ত থাকে। সরকারী ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি বেসরকারী ব্যাংকগুলোতেও লুটপাট হচ্ছে। সংসদে একশ’ ঋণখেলাপীর তালিকা দেয়া হয়েছে। আরও বড় বড় ঋণখেলাপী রয়েছে। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে চিকুনগুনিয়া ধরলে বুঝতে পারতেন চিকুনগুনিয়া হলে কি অবস্থা হয়। এজন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে কী কোন জবাবদিহিতা দিতে হয়েছে?
×