ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তাজকিয়া নূর মুন

খেলোয়াড় বিবাদে উত্তাল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ১২ জুলাই ২০১৭

খেলোয়াড় বিবাদে উত্তাল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া

বেতন-ভাতা ও লভ্যাংশ বণ্টন নিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) ও দেশটির খেলোয়াড়দের মধ্যকার অচলাবস্থা আরও জটিল রূপ নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার্স এ্যাশোসিয়েশন (এসিএ) আন্দোলনের সামনে থাকলেও বর্তমান খেলোয়াড়দের হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারকা ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। এতনি এ নিয়ে কথা বলেননি স্টিভেন স্মিথ। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক এবার এসিএর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করলেন। কঠোর ভাষায় জানিয়ে দিলেন, দাবি-দাওয়া প্রশ্নে এতটুকো ছাড় দেবেন না তারা। তুঙ্গে ওঠা দ্বন্দ্বের সময়টাতে পরিবার নিয়ে মার্কিন মুলুকে অবকাশ যাপনে ছিলেন। এসিএ-এর গুরুত্বপূর্ণ সভায় স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারলেও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সতীর্থদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়া এ-দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর বাতিল হয়ে গেছে, শঙ্কায় অসিদের বাংলাদেশ সফর, দুই বড় দেশ ভারত-ইংল্যান্ডও সমস্যা মেটাতে সিএর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে, এমন পরিস্থিতিতে আরও কঠোর স্টিভেন স্মিথ। ইনস্টাগ্রামে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক লিখেছেন, ‘ক্রিকেটারা অনেকদিন ধরেই যা বলে আসছে সেটা হলো- আমরা লভ্যাশং ভাগাভাগির অংশটি কোনভাবেই ছেড়ে দেব না। এসিএ- বেশকিছু পরিবর্তনের কথা বলেছে। যেখানে বর্তমান মডেলকে আরও উন্নত করতে চান তারা। আমরা সেই পরিবর্তনের পক্ষেই আছি। যাতে তৃণমূল পর্যায়ের ক্রিকেট আরও এগিয়ে যায়।’ যুক্তি দেখিয়ে তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমার ক্যারিয়ার থেকেই ঘরোয়া ক্রিকেটে উন্নয়নের সুফলটা আপনি দেখবেন। ২০১১ সালে যখন আমি বাদ পড়ি, তখন যদি ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল কিছু করে না দেখাতাম তাহলে আজকের অবস্থানে আসতে পারতাম না। আমরা যা নিয়ে লড়াই করছি তা হলো, ক্রিকেটারদের ন্যায্য পাওনা। ক্রিকেটই যাদের জীবন।’ অসিদের পেশাদার ক্রিকেটারদের সংগঠন এসিএ- অনেক দিন ধরেই কিছু পরিবর্তন আনার কথা বলছে। ক্রিকেটারদের নিয়ে আগের সমঝোতা চুক্তি চান না তারা। সেই পরিবর্তনের পক্ষে একাত্মতা ঘোষণা করেন অধিনায়ক। স্মিথ উল্লেখ করেন, ‘এসিএ- বেশকিছু পরিবর্তনের কথা বলেছে। যেখানে বর্তমান মডেলকে আরও উন্নত করতে চান তারা। আমরা পরিবর্তনের পক্ষে আছি। যাতে করে তৃণমূল পর্যায়ের ক্রিকেট আরও এগিয়ে যায়। এসিএর- এই আন্দোলনে নেতা হিসেবে ওয়ার্নার, মেগ ল্যানিং এ্যালেক্স ব্ল্যাকওয়েল এবং আমি যে কারণে লড়াই করছি- সেটা হলো ক্রিকেটারদের ন্যায্য পাওনা, যারা এই ক্রিকেটের সঙ্গেই সম্পৃক্ত।’ সমঝোতা চুক্তি নিয়ে বেশ কয়েকবারই আলোচনায় বসেছে দুইপক্ষ। যদিও কোন ফল আসেনি। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) নীতি মেনে নিতে না পারায় জাতীয় দলসহ চুক্তিবদ্ধ অধিকাংশ খেলোয়াড় সর্বশেষ চুক্তিতে সাইন করেননি। ফলে ১ জুলাই থেকে জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা ‘বেকার’ হয়ে পড়েছেন। এই তালিকায় আছেন ২৩০ ক্রিকেটার। এÑ দল জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে একাত্ম ঘোষণা করায় এরই মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর বাতিল হয়ে গেছে। বলতে গেলে পরিস্থিতি অনেকটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আগামী মাসে বাংলাদেশে আসার কথা অস্ট্রেলিয়ার। এরপর ভারতে ওয়ানডে সিরিজ। সিএ-এসিএ কঠোর অবস্থান দেখে ভারত এরই মধ্যে বিকল্প হিসেবে নিউজিল্যন্ড ও শ্রীলঙ্কাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছে! অতি দ্রুত সমস্যার সমাধাণ না হলে এ্যাশেজে অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে ইংল্যান্ডও। ইংলিশরা বিষয়টি অস্ট্রেলিয়ার ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় আবার সরকারের হস্তক্ষেপ চাইছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাতিল হয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। স্টিভেন স্মিথদের বাংলাদেশ সফর নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। ওদিকে বিষয়টির ওপর দৃষ্টি রাখছে ক্রিকেটের অঘোষিত তিন মোড়লের অপর দুই দেশ ভারত আর ইংল্যান্ড। হোম সিরিজের জন্য প্রতাপশালী ভারত নাকি এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বিকল্প ভেবে রেখেছে। আর দ্বন্দ্বের আশু সমাধান চাইছে ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি), নইলে তারা ঐতিজ্যের এ্যাশেজে (টেস্ট সিরিজ) নাও খেলতে পারে! ইসিবির এক মুখপাত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলো এমন খবর জানিয়েছে। পূর্ব নির্ধারিত সূচী অনুযায়ী আগস্টে বাংলাদেশ সফরের পরই ওয়ানডে খেলতে ভারত যাওয়ার কথা অস্ট্রেলিয়ার। কিন্তু খেলোয়াড় দ্বন্দ্বে অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার পরিবর্তে নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ আয়োজনের কথা ভাবছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। ইতোমধ্যেই নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কাকে এ ব্যাপারে জানিয়েছে তারা। এমনকি তাতে রাজিও আছে ওই দুই বোর্ড। ফলে নবেম্বরর-ডিসেম্বরে হতে পারে নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রস্তাবিত এই দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। এ প্রসঙ্গে শ্রীলঙ্কার পক্ষ থেকেও সাড়া পাওয়া গেছে। একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘সফরের সূচী নিয়ে কাজ চলছে। সফরে টেস্ট ওয়ানডে দুটিই থাকবে।’ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়ার আগেই নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সিরিজ খেলতে চায় ভারত। বলা হচ্ছে, সিরিজগুলো হবে ভারতের পাওনা সিরিজ। কারণ জুলাই-সেপ্টেম্বেেরই শ্রীলঙ্কা সফরে তিনটি টেস্ট, ৫টি ওয়ানডে ও একটি টি২০ খেলার কথা দুই দলেরই। আর চলমান ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর শেষেই আগামী জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে যাবে ভারত। নিউজিল্যান্ডের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানা না গেলেও বছরের শেষ দিকে সম্ভাব্য এই সফরে শুধু সীমিতওভারের ম্যাচই থাকবে। টেস্ট না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলেই জানা গেছে। সেই হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২০১৭-২০১৮ পাঁচ টেস্টের এ্যাশেজের আগে বেশকিছুটা সময় আছে। ২৩ নবেম্বর’ ১৭ শুরু হওয়ার কথা ঐতিহ্যের এই দ্বিপক্ষীয় সিরিজ। ইসিবির মুখপাত্রের বক্তব্য, ইংল্যান্ড বিষয়টির দ্রুত সমাধান চায়, যাতে তারা আগে থেকেই প্রস্তুত হতে পারে। নইলে তারাও ভারতের মতো বিকল্প ভাবতে বাধ্য হবে! ইংল্যান্ড বিষয়টি অস্ট্রেলিয়ার ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে। ক্রীড়ামন্ত্রী তাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘সিরিজের আগে এখনও অনেক সময়। এর মধ্যে একটা সমাধান হয়ে যাবে।’ ক্রিকেটপ্রেমীরাও নিশ্চই এমনটা আশা করছেন।
×