ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তুহিন রহমান

পুনর্জাগরণের লড়াইয়ে রুনি

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ১২ জুলাই ২০১৭

পুনর্জাগরণের লড়াইয়ে রুনি

আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর দিয়াগো ম্যারাডোনাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার অন্ত নেই। খামখেয়ালি কাজকর্মের জন্য তিনি সর্বদাই থাকেন মিডিয়ার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সর্বকালের সেরা এই ফুটবলারের সঙ্গে ক্রিকেটের আলোচিত চরিত্র শের্ন ওয়ার্নের মিল খুঁজে পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ক্রিকেটের সেরা লেগ স্পিনারের উল্টাপাল্টা কর্মকা-ের দরুন তাকে অভিহিত করা হয় ‘ক্রিকেটের ম্যারাডোনা’ হিসেবে। তবে ম্যারাডোনা একটি দিক থেকে ওয়ার্নের চেয়ে নিষ্কলুষ। অনেক সমালোচনা থাকলেও আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বরের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি কখনই। কিন্তু শেন ওয়ার্ন ক্রিকেটের পাশাপাশি এই বিষয়েও কম আলোচিত হননি। চারিত্র্যিক নোংরামির কারণে স্ত্রী সিমোনের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় ওয়ার্নের। ক্রিকেটের নষ্ট বালকের এমন অপকর্মের পর চাউর হয় গলফ সম্রাট টাইগার উডসের কাহিনী। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। যার জের ধরে বিবাহ বিচ্ছেদও হয়েছে উডস-এলিনের। এরপর ক্রীড়াঙ্গনে স্ক্যান্ডালের এই ধারা বজায় রাখেন ইংলিশ ফুটবলার জন টেরি। ২০১০ বিশ্বকাপের আগে পরনারীর সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক ফাঁস হওয়ার পর অধিনায়কত্ব হারান। এর সূত্র ধরেই আরেক ইংলিশ তারকা অ্যাশলে কোলের চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তিনিও নাকি চুপিসারে অসংখ্য মেয়ের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত! এরপর ২০১০ সালেই এই ঘটনাকে প্রবাহিত করেন তারকা ফুটবলার ওয়েন রুনি। মেজাজী এই তারকারও নাকি অনৈতিক সম্পর্ক আছে! ক্যারিয়ারের উঠতে সময়ে এমন খবরে বেশ বিচলিত হয়েছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকা। তবে বিষয়টি তিনি ভালভাবেই সামলে নিয়েছেন। যার প্রমাণ মিলছে সাম্প্রতিক সময়ে। গত বছর ইংল্যান্ডের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন। নতুন বছরের প্রথম মাসে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়েও সর্বোচ্চ গোলের কীর্তিগাথাও রচনা করেছেন। দু’টি ক্ষেত্রেই তিনি পেছনে ফেলেছেন কিংবদন্তি স্যার ববি চার্লটনকে। তবে ইংল্যান্ডের এই কিংবদন্তি ফুটবলারের এখনকার সময়টা মোটেও ভাল যাচ্ছে না। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে ব্রাত্য হয়ে ফিরেছেন শৈশবের ক্লাব এভারটনে। এখানেই তিনি শুরু করবেন নিজের পুনর্জাগরণের মিশন। রুনি গত বছর থেকে ম্যানইউতে ব্রাত্য হয়ে ওঠেন! বিশেষ করে জোশে মরিনহো কোচ হয়ে আসার পর। সাইডলাইনে বসে থাকতে হয় সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ককে। তখন থেকেই রেড ডেভিলস ছাড়ার চিন্তাভাবনা শুরু। নতুন বছরে এ ডালপালা আরও জোরালো হয়। সপ্তাহখানেক আগে শোনা যায় শৈশবের ক্লাব এভারটনে ফিরছেন। অবশেষে সেটাই সত্যি হয়েছে। রবিবার এভারটনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি সম্পন্ন করেছেন ৩১ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। নতুন ক্লাবে আসার পর রুনি জানিয়েছেন, তিনি খুব খুশি। দলটির কোচ রোনাল্ড কোম্যানও উচ্ছ্বসিত। রুনির হাত ধরে এখন ট্রফি জয়ের ভাবনা করছেন তিনি। গত মৌসুমজুড়ে ইউনাইটেডের কোচ মরিনহোর কাছে উপেক্ষিত রুনি নিজের ক্যারিয়ার শুরু করা এভারটনের সঙ্গে দুই বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। তবে দলবদলের আর্থিক বিনিময়ের পরিমাণ প্রকাশ করা হয়নি। এভারটন থেকে শীর্ষ গোলদাতা রোমেলু লুকাকুকে ইউনাইটেড দলবদ্ধ করার ঘোষণার একদিন পর রুনির এই দল বদলের চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। শৈশবের ক্লাবে ফেরার পর রুনি বলেন, কয়েকদিন আগে আমি বলেছিলাম ইউনাইটেড ছাড়া এভারটনই প্রিমিয়ার লীগের একমাত্র ক্লাব, যেখানে আমি খেলতে চাই। তাই এই দলবদল সম্পন্ন হওয়ায় আমি খুশি। সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক বলেন, ট্রফি জয়ের লক্ষ্য নিয়ে ১৩ বছর আগে আমি ইউনাইটেডে যোগ দিয়েছিলাম। ক্লাবের ইতিহাসে সফল সময় কাটাতে পারায় আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। আমার এভারটনে ফিরে আসার কারণ হচ্ছে আমি বিশ্বাস করি ক্লাবটির কোচ রোনাল্ড কোম্যান এমন একটি দল গঠন করছেন যে দলটি কিছু একটা অর্জন করতে সক্ষম হবে। সেই সম্ভাবনাকে বাস্তব রূপ দেয়ার জন্য আমি এখন মাঠে নামার অপেক্ষায় আছি। কারণ বাল্যকালে এই ক্লাবটি আমাকে সমর্থন জুগিয়েছে। জয়ের জন্য মুখিয়ে থাকার মানসিকতা সম্পন্ন খেলোয়াড় হিসেবে রুনিকে দলে ভিড়িয়েছেন উল্লেখ করে এভারটন কোচ কোম্যান বলেন, আমরা যা চাই রুনির মধ্যে তার প্রতিফলন দেখেছি। আমাদের এ রকম জয় করার মানসিকতা সম্পন্ন খেলোয়াড় দরকার। সে জানে কিভাবে শিরোপা জয় করতে হয়। রুনি নিজ গৃহে ফিরে আসার এই সিদ্ধান্ত নেয়ায় আমি সত্যিই আনন্দিত। সে এভারটনকে ভালবাসে এবং এখানে ফেরার জন্য সে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। বর্তমানে তার বয়স মাত্র ৩১ বছর। তার খেলার মান নিয়েও আমার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। তার এখানে আসাটা দারুণ হয়েছে। রুনির ম্যানইউ ছাড়াতে অনেকে অবাক হয়েছেন। কেননা রেড ডেভিলসদের অনেক স্বর্ণালী সাফল্যের সারথী তিনি। ক্লাবটির ইতিহাসে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতাও। এরপরও দলটিকে অনেকটা ব্রাত্য হয়ে এভারটনে ফিরে আসলেন রুনি। ২০০৪ সালে ১৮ বছর বয়সে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নাম লিখিয়েছিলেন তিনি। সে সময় ছেড়ে আসেন এভারটন, যেখানে ১৯৯৬ সালে শুরু হয়েছিল তার ফুটবলের হাতেখড়ি। ম্যানইউ কোচ মরিনহোর কাছে উপেক্ষিত রুনিকে আবারও টেনে নিল সেই গুডিসন পার্ক। ম্যানইউতে পর্তুগীজ লৌহমানব কোচ হয়ে আসার পর থেকে অধিকাংশ সময় সাইডবেঞ্চে বসে থাকতে হচ্ছে সাবেক ইংলিশ অধিনায়ককে। গত মৌসুমে ৩৯ ম্যাচ খেলেছেন, করেছেন ৮ গোল। গত জানুয়ারিতে স্টোক সিটির বিরুদ্ধে ১-১ গোলের ড্রর ম্যাচে স্যার ববি চার্লটনকে টপকে হয়ে যান ক্লাবের শীর্ষ গোলদাতা। কিন্তু মরিনহো তার দিকে সুনজর দেননি। মৌসুমের শুরুতে নিয়মিত একাদশে থাকলেও সেপ্টেম্বরের পর থেকে তিনি ছিলেন উপেক্ষিত। ক্যাপিটাল ওয়ান কাপ ও ইউরোপা লীগ ফাইনালে তাকে মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে। এভাবে দর্শক হয়ে বসে থাকতে কারই বা ভাল লাগে! এরপরই রুনি ছেলেবেলার ক্লাবে ফিরতে জোর তৎপরতা শুরু করেন। কারণ সামনের মৌসুমে নতুন সেন্টার ফরোয়ার্ড ও এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার যোগ দিলে তার ভাগ্য আরও প্রতিকূল হয়ে যেত। এসব কারণেই এভারটনে ফিরে আসলেন রুনি। শৈশবের ক্লাবে রুনির জার্সি নম্বরও উন্মোচিত করেছে। রোমেলু লুকাকু চলে গেছেণ গুডিসন পার্ক থেকে। তারই ১০ নম্বর জার্সিটি এবার উঠছে রুনির গায়ে।
×