ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রিয়াজ, মিশা ও খসরুকে বয়কট করল প্রদর্শক সমিতি

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১২ জুলাই ২০১৭

রিয়াজ, মিশা ও খসরুকে বয়কট করল প্রদর্শক সমিতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সম্প্রতি ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত যৌথ প্রযোজনার দুই চলচ্চিত্র বস-টু ও নবাব নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে চলচ্চিত্র অঙ্গন। এ দুই ছবি মুক্তির জের ধরে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হতে হয় মধুমিতা প্রেক্ষাগৃহের মালিক ও চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদকে। ওই ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে চলচ্চিত্র অভিনেতা রিয়াজ ও মিশা সওদাগর এবং প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরুকে দেশের সকল সিনেমা হলে বয়কট ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সুবাদে অভিনেতা রিয়াজ ও মিশা সওদাগর অভিনীত কোন চলচ্চিত্র সিনেমা হলে প্রদর্শিত হবে না। একইভাবে খোরশেদ আলম খসরু প্রযোজিত কোন ছবি প্রদর্শিত হবে না প্রেক্ষাগৃহে। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বয়কটের এ ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। এ বয়কটের বিষয়ে রিয়াজ, মিশা সওদাগর ও খোরশেদ আলম খসরুর সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা কেউ ফোন ধরেননি। তাই এ বিষয়ে তাদের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মিশা সওদাগর এ বিষয়ে ফেসবুকে দেয়া ছোট্ট একটি স্ট্যাটাসে বলেছেন, ‘ভাল উপলব্ধি’। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইফতেখার উদ্দিন নওশাদের ওপর হামলার দায়ে অভিযুক্ত তিন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট তিনজনকে বয়কটের পাশাপাশি যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রসহ নানা বিষয় উঠে আসে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী শোয়েব রশিদ। এছাড়াও বক্তব্য রাখেনÑ সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল, কার্যনিবাহী সদস্য আলমগীর শিকদার লোটন ও সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন। প্রদর্শক সমিতির পক্ষে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ব্যবসায়িক স্বার্থ বিবেচনায় ঈদে যৌথ প্রযোজনার দুই ছবি বস-টু ও নবাবের পক্ষে অবস্থান নেয় চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। এ কারণে সেন্সর বোর্ডের সামনে প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও সেন্সর বোর্ডের সদস্য ইফতেফার উদ্দিনের ওপর হামলা চালায় অভিনেতা রিয়াজ, মিশা সওদাগর ও প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু এবং তাদের সহযোগীরা। এ হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধনের পাশাপাশি তথ্যমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হয়। তথ্য সচিব, আইন সচিব, ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ওই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। তবে আজ এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি এবং পুলিশও কোন মামলা নেয়নি। পুলিশের সামনেই ওই হামলার ঘটনা ঘটলেও এ বিষয়ে সরকারী কর্তাব্যক্তিরা আশ্চর্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করেছে। শুধু তথ্যমন্ত্রী নিন্দা জানিয়েছিলেন। ওই জঘন্য ঘটনার পর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। সেই সূত্র ধরেই সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, রিয়াজ, মিশা সওদাগর ও খসরুকে সিনেমা হলে বয়কট করা হবে। সেই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে রিয়াজ ও মিশা সওদাগর অভিনীত কোন ছবি সিনেমা হলে চালানো হবে না। এছাড়া খসরু প্রযোজিত কোন চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে না প্রেক্ষাগৃহে। এ বিষয়ে আগামী ২৬ জুলাই সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় সকল সদস্যদের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র চালানোর বিষয়ে প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের আগ্রহ সংক্রান্ত বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নওশাদ উদ্দিন ইফতেখার বলেন, আমরা চাই ভাল ছবি। ভাল ছবি দর্শক টানে এবং দর্শক টানলেই সিনেমা হল বাঁচবে। বর্তমানে শাকিব খান অভিনীত ছাড়া অন্য কোন ছবি তেমনভাবে দর্শক টানতে পারে না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রকে গ্রহণ করছি। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সারা বছর যদি আয়নাবাজির মতো ভাল কাহিনীনির্ভর ছবি পাওয়া যেতে তাহলে আমরা যৌথ প্রযোজনার ছবির প্রতি ঝুঁকতাম না। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণ আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যৌথ প্রযোজনার ছবি কিভাবে হবে বা কোন নীতিমালায় হবে, সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। এ বিষয়ে এফডিসির প্রিভিউ কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। আমাদের কাজ হচ্ছেÑ শুধু চলচ্চিত্র প্রদর্শন। প্রদর্শক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিঞা আলাউদ্দীন বলেন, একটা সময় দেশে প্রতিবছর গড়ে শতাধিক ছবি মুক্তি পেত। তখন যেসব প্রযোজক ছিলেন তারা এখন আর এ শিল্পে নেই। ২০০২ সাল থেকে অশ্লীল ছবি এবং উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির প্রেক্ষাগৃহ ব্যবসায় ধস নামে। একের পর এক বন্ধ হতে থাকে সিনেমা হল। তখন হল বাঁচাতে আমরা ভারতীয় ছবি আমদানির জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ রাখি। সেটিও নানা জটিলতায় বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের ভরসার জায়গা হয়ে ওঠে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র।
×