ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গুম হওয়াদের অধিকাংশই বিএনপি ও ছাত্রদলের সঙ্গে জড়িত ॥ রিজভী

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১২ জুলাই ২০১৭

গুম হওয়াদের অধিকাংশই বিএনপি ও ছাত্রদলের সঙ্গে জড়িত ॥ রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীদের চোখে পানি না আসলেও গুম ও খুন ও নির্যাতনের শিকার হওয়াদের স্বজন ও সহকর্মীদের চোখের পানিতে এখন দেশ ভাসছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, হবিগঞ্জ সদর থানা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরব আলীকে পুলিশ গ্রেফতার করে থানায় নিলেও তার বিরুদ্ধে কোন মামলা কিংবা তাকে আদালতে হাজির করছে না। ফলে তার ওপর পুলিশী অত্যাচারে প্রাণনাশের আশঙ্কা করছে তার পরিবার। অবিলম্বে তাকে আদালতে হাজির করার আহ্বান জানাচ্ছি। রুহুল কবির রিজভী বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা হান্নান মিয়া হান্নু, ফয়সল সরকার, সফিউদ্দিন শফি, তানভীর আহম্মেদ, মোঃ শহীদ ও অলোককে গাড়ি পোড়ানোর বানোয়াট মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে এই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার করে মুক্তি দাবি করছি। রিজভী বলেন, বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার আন্দারমানিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৩ জুলাই। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আব্দুর রহমানের ওপর স্থানীয় সন্ত্রাসীরা হামলা, বাড়িঘর ভাংচুর ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকায় ভোটারদের মধ্যে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং ভয়ভীতিমুুক্ত পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি জোর আহ্বান জানাচ্ছি। বিএনপির মুখপাত্র বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির কাছে গুম ও নিখোঁজদের তালিকা চেয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, বিএনপি নেতারা এখন প্রেস ব্রিফিং করে আর কাঁদে, আর কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, আপনাদের নেতাকর্মীদের লুটপাটের টাকায় সুইস ব্যাংক জোয়ারের পানির মতো উপচে উঠেছে। তাই অন্যের আহাজারিতে আপনাদের মনে আনন্দ ধরে। বর্তমানে দেশে উজানের পানিতে ভয়াবহ বন্যায় যখন দেশের মানুষ ভাসছে তখন আপনারা সংসদে বসে বিচারপতিদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধারে মেতে আছেন। সংসদে বসে মানুষের গীবত গাইছেন, যদি আপনারা প্রকৃত অর্থে জনপ্রতিনিধি হতেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতেন তাহলে বন্যার্ত মানুষের নিকট ত্রাণ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। রিজভী বলেন, গুম হওয়া মানুষের স্বজনদের বেদনার্ত কান্নার আওয়াজ ওবায়দুল কাদের সাহেবদের কানে ঢোকে না। এমনকি সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারও কর্ণকুহরেই যেন এদের কান্নার শব্দ প্রবেশ করেনা। হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর স্বজনরা জানতেও পারেননি তারা এখন জীবিত নাকি মৃত। পিতার অপেক্ষায় তার সন্তান, স্বামীর অপেক্ষায় স্ত্রী, সন্তানের অপেক্ষায় মা-বাবা। এ অপেক্ষার যেন শেষ নেই। বুক ভরা বেদনা নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা। রুহুল কবির রিজভী বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে নিরাপত্তাজনিত আতঙ্ক। শুধু গুম আর অপহরণই নয়, বরং আওয়ামী লীগ ও তাদের পেটোয়া বাহিনীর হাতে নির্যাতিত লাখ লাখ মানুষ এখন কাঁদছে। তিনি বলেন, বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা ও তার সন্তানরা এখনও ইলিয়াস আলীর অপেক্ষায় আছেন। এদের রোদনভরা অপেক্ষার খবরে তো ওবায়দুল কাদের সাহেবদের চোখের পানি ঝরবে না। রিজভী বলেন, ২০১৩ সালের নবেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কেবল ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থান ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে কমপক্ষে ৫০ জনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যায়। সেই থেকে পরিবারগুলো সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি, কার্যালয়ে গিয়ে ধরনা দিয়েছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের বেশিরভাগই বিএনপি বা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে ৭০ দিন গুম করে রাখার পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ফেলে আসা হয়। রিজভী বলেন, প্রতিদিনই অপক্ষোয় থাকেন গুম হওয়া বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম, সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হীরু, হুমায়ুন কবির পারভেজ, তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদল সভাপতি আমিনুল ইসলাম জাকির, তেজগাঁও থানা বিএনপি নেতা সাজেদুল হক সুমন, সাজেদুলের খালাতো ভাই জাহিদুল করিম (তানভীর), পূর্ব নাখালপাড়ার আবদুল কাদের ভূঁইয়া (মাসুম), পশ্চিম নাখালপাড়ার মাজহারুল ইসলাম (রাসেল), মুগদাপাড়ার আসাদুজ্জামান (রানা), উত্তর বাড্ডার আল আমিন, বিমানবন্দর থানা ছাত্রদল নেতা এ এম আদনান চৌধুরী ও কাওসার আহমেদ, সবুজবাগ থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাহাবুব হাসান, খালিদ হাসান (সোহেল) ও সম্রাট মোল্লা, জহিরুল ইসলাম , পারভেজ হোসেন, মোঃ সোহেল, নিজাম উদ্দিন (মুন্না), তরিকুল ইসলাম (ঝন্টু), কাজি ফরহাদ, সেলিম রেজা (পিন্টু), ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন কুসুমসহ অনেকের হতভাগ্য পরিবার। রিজভী বলেন, সর্বশেষ আক্রোশের শিকার হয়েছেন বিশিষ্ট লেখক, কলামিস্ট, কবি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার। তিনি এখন এতটাই মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত যে, মানুষজন ও আত্মীয়স্বজনদের চিনতেও নাকি কষ্ট হচ্ছে। অথচ তার অপহরণ ঘটনাকে এখন নাটক বানাতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সরকার ফরহাদ মজহারের অপহরণের ঘটনাকে সাজানো নাটক বললেও মানুষকে বিশ্বাস করাতে পারবে না। মানুষ যা বোঝার তা ইতোমধ্যেই বুঝে গেছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সকল রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে- দুদু সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিএনপি নেতাদের নামে থাকা সকল রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার ও রাজবন্দীদের মুক্তি দিতে হবে বলে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদিন ফারুকের মুক্তির দাবিতে ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠন আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এম জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, দলের সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলনের সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির প্রমুখ।
×