ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্দেশের আওতায় রয়েছে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের নাগরিক

২৫ জুলাইয়ের মধ্যে সৌদি ত্যাগ করতে হবে কয়েক লাখ অবৈধকে

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১২ জুলাই ২০১৭

২৫ জুলাইয়ের মধ্যে সৌদি ত্যাগ করতে হবে কয়েক লাখ অবৈধকে

ফিরোজ মান্না ॥ সৌদি আরবে অবস্থানকারী বিভিন্ন দেশের অবৈধ কর্মীদের আগামী ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে নিজ নিজ দেশে ফিরতে হবে। এই সময়ের মধ্যে অবৈধরা নিজ নিজ দেশে না ফিরলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে দেশটির কর্তৃপক্ষ। প্রথম দফা ৯০ দিনের সময় শেষ হওয়ার পর সৌদি কর্তৃপক্ষ অবৈধ কর্মীদের বৈধতার জন্য আরও ২৪ দিন সময় বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে এই সময়ের মধ্যে কয়েক লাখ অবৈধ বাংলাদেশী কর্মী বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন কিভাবে? বৈধ হতে গেলে আরও এক থেকে দেড় মাস সময়ের প্রয়োজন হবে বলে বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে। কিন্তু সৌদি কর্তৃপক্ষের কঠোর হুঁশিয়ারি কোন অবৈধ কর্মীকে ২৪ জুলাইয়ের পরে সৌদি থাকতে দেয়া হবে না। এমন এক পরিস্থিতিতে কয়েক লাখ বাংলাদেশী কর্মীকে দেশে ফিরতে হতে পারে। বিএমইটির ডিজি সেলিম রেজা বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চলছে। বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব থেকে বিপুলসংখ্যক কর্মী যাতে ফেরত না আসে তার জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বসবাসের অনুমতি (ইকামা) ছাড়াই অবস্থান, অনুমতি ছাড়া কাজ করা ও অবৈধ অনুপ্রবেশের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে গত ২৯ মার্চ থেকে তিন মাসের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিল সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ‘এ নেশন উইদাউট ভায়োলেটরস’ কর্মসূচীর আওতায় এই সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ এক মাস বাড়ানো হয়েছে বলে দেশটির ডিরেক্টর জেনারেল অব পাসপোর্ট মেজর জেনারেল সুলাইমান বিন আবদুল আজিজ আল-ইয়াহইয়া জানিয়েছেন। যারা এখনও এই সুযোগ নেননি কিংবা আউট পাস ও এক্সিট ভিসা নেয়ার পরও সৌদিতে আছেন, তাদের ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে সৌদি আরব ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের পাঁচ লাখের বেশি অবৈধ অভিবাসী সাধারণ ক্ষমার সুযোগে সৌদি আরব ত্যাগ করেছেন বলে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো খবর দিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশী ২৬ হাজার কর্মী প্রথম দফা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর দেশে ফিরে এসেছেন। এবার ২৫ জুন থেকে ২৪ জুলাই সময় বৃদ্ধি কার্যকর হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। যারা বৈধ হতে পারবে না তাদের আউট পাস নিয়ে দিশে ফেরার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে। ঘোষণায় বলা হয়েছে, অবৈধ কর্মীরা আউট পাস সংগ্রহ করে দেশে ফিরতে চাইলে তাদের বিনা শাস্তিতে দেশে ফেরার সুযোগ দেয়া হবে। এদিকে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, বৈধ কাগজপত্রহীন ১৯ হাজার ৮৩৩ বাংলাদেশী ইতোমধ্যে সাধারণ ক্ষমার সুযোগে দেশে ফিরেছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আউট পাস ও এক্সিট ভিসা সংগ্রহ করে দেশে ফেরত না গেলে এক লাখ সৌদি রিয়াল জরিমানা ও দুই বছর কারাদ- হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে সৌদি অভিবাসন দফতর। সৌদি আরবের নিয়ম অনুযায়ী কোন অবৈধ অভিবাসী ধরা পড়লে তাকে জরিমানা বা শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। দেশে ফেরত পাঠানোর আগে তার আঙ্গুলের ছাপ রেখে দেয়া হয়। ভবিষ্যতে আর যেন তারা সৌদি আরবে কাজের জন্য আসতে না পারেন। সাধারণ ক্ষমার সুযোগ যারা নেবেন, তাদের কোন শাস্তি ছাড়াই দেশে ফেরার সুযোগ দেয়া হবে। তাদের আঙ্গুলের ছাপও নেয়া হবে না। তারা ভবিষ্যতে কাজ নিয়ে বৈধভাবে সৌদি আরবে আসার সুযোগ পাবেন। দুই বছর আগে সৌদি সরকার ইকামা পরিবর্তনের যে সুযোগ দিয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় এই ‘এ নেশন উইদাউট ভায়োলেটরস’ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রায় ২৫ লাখ অবৈধ অভিবাসী ও অবৈধ কর্মী আগের ওই সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে বাংলাদেশীও ছিলেন। সৌদি গেজেটের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১৩ লাখ বাংলাদেশী সৌদি আরবে বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন। এর মধ্যে ৬০ হাজার নারী কাজ করছেন গৃহকর্মী হিসেবে। সূত্র জানিয়েছে, ২৪ জুলাইয়ের পরে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির ১৯টি এজেন্সি একযোগে এ অভিযান পরিচালনা করবে। যেসব অবৈধ অভিবাসীর কাগজপত্র নেই, অর্থাৎ যেসব বিদেশী হজ বা ওমরাহ করতে এসে থেকে গেছে, তাদের শীঘ্রই নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। শ্রম আইন লঙ্ঘনকারী বিদেশীদের কাজে নিয়োগ না দেয়ার জন্যও সৌদি নাগরিকদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে আইন লঙ্ঘনকারী কারও বিষয়ে তথ্য জানা থাকলে তা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানাতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানানোর জন্য হট লাইন চালু করবে দেশটির কর্তৃপক্ষ। আরব নিউজ জানিয়েছে, ২০১৩ সালে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে ইকামা পরিবর্তনের সুযোগ দিয়েছিল সৌদি সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের ‘নেশন ফ্রি অব ভায়োলেটরস’ কর্মসূচী। আগেরবার প্রায় ২৫ লাখ অবৈধ অভিবাসী ও অবৈধ কর্মী সাধারণ ক্ষমার সুযোগ পেয়েছিল। ওই সময় সাত লাখের বেশি বাংলাদেশী কর্মী বৈধ হয়েছিল।
×