ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তালিকা সংবলিত চিঠি পাঠিয়েছে আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারিকে

আগামী নির্বাচনে এক শ’ আসন চাইল জাতীয় পার্টি

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১২ জুলাই ২০১৭

আগামী নির্বাচনে এক শ’ আসন চাইল জাতীয় পার্টি

রাজন ভট্টাচার্য ॥ একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কাছে ১০০ আসন চেয়ে প্রার্থী তালিকা দিয়েছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে এ তালিকা দেয়া হয়। বর্তমান তালিকায় জাপার ৩৪ সংসদ সদস্যের নাম রয়েছে। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, দশম সংসদ নির্বাচনের সময় জাপার পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের কাছে জমা দেয়া ৭০ প্রার্থীর নাম এবারও বহাল আছে। বাকি ৩০ জনের নাম জাপার জোটের শরিক নেতাদের থেকে নেয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, এককভাবে ৩০০ আসনের প্রার্থী তালিকা তারা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছেন। এরমধ্যে সম্ভাবনাময় প্রার্থী হিসেবে ৭০ জনের নাম প্রথম তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে ১৪ দল ও জাতীয় পার্টির মধ্যে সমঝোতায় আসন ভাগাভাগি হবে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে সরকার গঠন করবে এরশাদের জাপা। যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয় তাহলে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে ১৪ দলের সঙ্গে লড়বে দলটি। শক্তিশালী বিরোধী দলের জায়গায় নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে চায় জাতীয় পার্টি। অপর একটি সূত্র বলছে, বিএনপি অংশ না নিলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে জাতীয় পার্টি প্রার্থী ঠিক করবে। যেসব এলাকায় জাপার শক্তিশালী অবস্থান সেখানে তাদের প্রার্থী থাকবে। যেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বদনাম রয়েছে সেখানেও জাপার পক্ষ থেকে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী দেয়া হতে পারে। অর্থাৎ নিশ্চিত বিজয় হবে এমন পরিকল্পনা থেকেই প্রার্থী চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি। এক্ষেত্রে উভয় দলই জোট গঠন করে নির্বাচনী জোয়ার সৃষ্টি করতে চায়। যদিও বার বার একক নির্বাচন করার কথা বলছেন ক্ষণে ক্ষণে মত পাল্টানো নেতা এরশাদ। কিন্তু ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ফের মহাজোট করে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। লড়বেন ভোটযুদ্ধে। বাস্তব কথা হলো, বাকি জীবন তিনি ক্ষমতার সঙ্গেই থাকতে চান। রাজনীতিতে একা হয়ে ফের কোন বিপদের মুখে নিজেকে ঠেলে দিতে চান না। এমন কথাও বহুবার বলেছেন তিনি। এরশাদের দলের সকল স্তরের নেতারা বলছেন, এককভাবে নির্বাচন করলে এরশাদ ছাড়া কারও জয়লাভের সম্ভাবনা নেই। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করলে বিপুলসংখ্যক প্রার্থী যেমন বিজয়ী হবে তেমনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিজয়েও ভূমিকা রাখতে পারবে। এমন চিন্তা থেকেই এরশাদ এরই মধ্যে তার পার্টির ১০০ প্রার্থীর তালিকা আওয়ামী লীগকে দিয়েছেন। জাতীয় পার্টি সূত্র জানায়, এরশাদ আশা করেন ন্যূনতম ৭০টি আসন আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ৭০টি আসনে ছাড় দিতে চেয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এসে এরশাদ আকস্মিক সরে যাওয়ায় জাতীয় পার্টি এটি অর্জন করতে পারেনি। অনেকেই দলপ্রধানের নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেন। শেষ পর্যন্ত ৩৪টি আসন পায় জাপা। সংরক্ষিত আসন মিলিয়ে এখন জাপা ৪০ এমপি নিয়ে সংসদের বিরোধী দল। তালিকায় নাম আছে যাদের ॥ জাপার অপর একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানো তালিকায় ৬৪ জেলায় ৬৪টি আসন চাওয়া হয়েছে। জাপার ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বৃহত্তর রংপুরে চাওয়া হয়েছে ১৫টি আসন। সব মিলিয়ে ৭০টি আসন বাদে বাকি আসন চাওয়া হয়েছে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক নেতাদের জন্য। তালিকায় রংপুর-১, ঢাকা-১৭ ও লালমনিরহাটের আরেকটি আসনে জাপার প্রার্থী হিসেবে এরশাদের নাম রয়েছে। এছাড়াও ময়মনসিংহ-৪ এ রওশন এরশাদ, রংপুর-১ মশিউর রহমান রাঙা, তাজুল ইসলাম চৌধুরী কুড়িগ্রাম-২, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার পটুয়াখালী-১, রুহুল আমিনের স্ত্রী রতœা আমিন হাওলাদার রবিশাল-৬, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ও গ্রেফতার হওয়া এমপি এম এ হান্নানের নাম রয়েছে ময়মনসিংহ-৪ আসনের প্রার্থী হিসেবে, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নুর নাম রয়েছে কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের প্রার্থী হিসেবে, ঢাকা-৪ আসনে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা-১ আসনে সালমা ইসলাম, ঢাকা-৬ আসনে সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নাসিম ওসমান, সিলেট-৫ আসনে সেলিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম-৫ আসনে পানি সম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ আসনে জিয়াউদ্দিন বাবলু, ব্রাক্ষণবাড়িয়া-২আসনে জিয়াউল হক মৃধা, চাঁদপুর-৪ আসনে মনিরুল ইসলাম মিলন, খুলনা-১ আসনে শুনিল শুভ রায়, ব্রাক্ষণবাড়িয়া-৩ আসনে রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, ডেমড়া-যাত্রাবাড়ী-কদমতলী মিলিয়ে ঢাকা-৫ আসনে মীর আব্দুস সবুর আসুদ, রংপুর অথবা লালমনিরহাট থেকে জিএম কাদের, নীলফামারী-৪ শওকত চৌধুরী, কুড়িগ্রাম-১ মোস্তাফিজুর রহমান, কুড়িগ্রাম-৩ একেএম মহিদুল ইসলাম, বগুড়া-২ শরিফুর ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৩ নূরুল ইসলাম তালুকদার, বগুড়া-৬ নূরুল ইসলাম ওমর, বগুড়া-৭ আলতাব আলী, জামালপুর-৪ মামুনুর রশীদ, ময়মনসিংহ-৫ সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, ময়মনসিংহ-৮ ফখরুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ-৪ পীর ফজলুর রহমান, সিলেট-২ মোঃ ইয়াহ ইয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জ-১ মুনিম চৌধুরী বাবু, লক্ষীপুর-২ মোহাম্মদ নোমান, কুমিল্লা-৮ আসনে নূরুল ইসলাম মিলন, জকিগঞ্জে আমিনুর রহমান তাজসহ অনেকের নাম তালিকায় রয়েছে। জানতে চাইলে এরশাদের প্রেস সচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শুনিল শুভ রায় জনকণ্ঠকে বলেন, খুলনা-১ আসনে প্রার্থী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। মঙ্গলবার বিকেলে তিনি জানান, আমি এখন এলাকায় রয়েছি। আজও নির্বাচনী বৈঠক ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তা বাতিল হয়েছে। মানুষ এখন জাতীয় পার্টিকে চায়। মনোনয়ন পেলে আশা করি এই আসনটি জাপার থাকবে। আওয়ামী লীগের কাছে প্রার্থী তালিকার বিষয়ে তিনি কিছু না বললেও দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী বাছাই ও তালিকা তৈরির কথা জানান তিনি। বলেন, কোন্ কোন্ আসনে কারা প্রার্থী হতে চান, শক্তিশালী প্রার্থী কারা সে তালিকা জাপার পক্ষ থেকে চূড়ান্ত হয়েছে। দলের অপর সম্ভাব্য প্রার্থী রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, বি-বাড়িয়া-৩ আসনের প্রার্থী হিসেবে অনেক আগে থেকেই কাজ করে আসছি। মনোনয়ন পেলে আশা করি আসনটি জাপার হাতছাড়া হবে না। ঢাকা-৫ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী মীর আব্দুস সবুর আসুদ বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে নয় অনেক আগে থেকেই এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি। সব সময় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে মনোনয়ন পেলে আশা করি আসনটি হাতছাড়া হবে না। চাঁদপুর-৪ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী মনিরুল ইসলাম মিলন বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে এই আসনটি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন বর্জন করায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামসুল হক ভূঁইয়া নির্বাচিত হয়েছেন। বস্তুত এটি জাপার ঘাঁটি। আমি এলাকায় প্রার্থী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। মনোনয়ন পেলে আশা করি আসনটি জাপার থাকবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাপার শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, যাদের নাম তালিকায় রয়েছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগ নেতাকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন এরশাদ। অনেককে অফিসে ডেকে এনেও নির্বাচনী কৌশল বুঝিয়ে দিয়েছেন। নির্দেশ অনুযায়ী সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় পোস্টার করাসহ সামাজিক বিভিন্ন কর্মকা-ে নিজেদের যুক্ত করেছেন। ঘন ঘন এলাকায় যাচ্ছেন। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। এদিকে প্রার্থী তালিকা হস্তান্তরের পর এ বিষয়ে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। ইতোমধ্যে চার দিনের সফরে দেশের বাইরে গেছেন এরশাদ। ফেরার পর প্রার্থী তালিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে।
×