ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দোলনচাঁপা

সাদার মায়া মিষ্টি ঘ্রাণ, চৈতন্যে দোলা দিয়ে যায়

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১২ জুলাই ২০১৭

সাদার মায়া মিষ্টি ঘ্রাণ, চৈতন্যে দোলা দিয়ে যায়

মোরসালিন মিজান ॥ অসহনীয় যানজট। গাড়ির চাকা একদম ঘুরছে না। মেজাজ চরমে। নিজের চুল নিজেই ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। এমন সময় গাড়ির জানালার গ্লাস নিচে নামাতেই দেখলেন, একগুচ্ছ সাদা সুগন্ধী দোলনচাঁপা কেউ আপনার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। আছে এমন অভিজ্ঞতা? কি করেছেন তখন? ফুল কেনার কোন ইচ্ছে ছিল না। অন্তত তখন প্রস্তুত ছিলেন না আপনি। কিন্তু ঠিক কিনেছেন। তাই তো? আসলেই ভেতরে সামান্যতম প্রেম থাকলে, কোমলতা থাকলে দোলনচাঁপাকে ফিরিয়ে দেয়া যায় না। এর সাদার মায়া, টাটকা ঘ্রাণ চৈতন্যে দোলা দিয়ে যায়। কবিও তা-ই বলেছিলেন। বলেছিলেন, আমার ভালোবাসার কথা দোলনচাঁপা জানে/ তাই এতো সুগন্ধ ছড়ায়...। নাকে আসছে তো সে ঘ্রাণ? হ্যাঁ, প্রিয় ঋতু বর্ষার অবদান দোলনচাঁপা। রাজধানী শহরে ফুলটি হয় বলে শোনা যায়নি কখনও। অথচ এখন সবখানে পাওয়া যাচ্ছে। ফুলের দোকানগুলোতে চলছে বিশেষ প্রদর্শনী। কয়েকটি স্টিক একসঙ্গে বেঁধে উপরের অংশটি স্বচ্ছ পলিথিনে মুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। যার যেটি পছন্দ হাতে তুলে নিচ্ছেন শুধু। তবে দুরন্ত কিশোর-কিশোরীরা যখন ফুলটি হাতে নিয়ে ক্রেতার খুঁজে হন্যে হয়ে ছুটে, দেখতে আহা কী যে ভাল লাগে তখন। রাজধানী শহরের প্রতি প্রান্তে ওরা ছড়িয়ে দেয় দোলনচাঁপার ঘ্রাণ। ফুলটি যে ফুটেছে, স্মরণ করিয়ে দেয়। এভাবে শহরটি-ই হয়ে ওঠে দোলনচাঁপার! তবে দিনের পুরোটা সময় এই ফুল পাওয়া যায় না। বিকেলে ফোটে। একদিকে ফোটে। আরেক দিকে শুরু হয়ে যায় বিক্রি। বাড়ি ফেরার সময় অনেকেই দু-এক গুচ্ছ কিনে কোলের ওপর রেখে দেন। বসার ঘর শোবার ঘর যত পরিপাটিই হোক না কেন, দোলনচাঁপার উপস্থিতিতে আরও স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে পরিবেশ। মন খারাপের বিকেল কিংবা একলা জাগা রাতের কষ্ট ভুলিয়ে দেয় দোলনচাঁপা। সে কথা জানিয়ে কবিগুরু লিখেছিলেনÑ দোলে দোলে দোলে প্রেমের দোলনচাঁপা হৃদয়-আকাশে...। নজরুলের ভাষায়Ñ যেন দেবকুমারীর শুভ্র হাসি, ফুল হয়ে দোলে ধরায় আসি/ আরতির মৃদুজ্যোতি প্রদীপ কলি দোলে, যেন দেউল আঙিনাতে...। প্রকৃতিপ্রেমী ফুলপ্রেমী সাধারণ মানুষও বিভিন্নভাবে ফুলটির প্রতি তাঁদের অনুরাগের কথা জানিয়েছেন। জানিয়ে যাচ্ছেন। এবার কিছু কথা নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মার কাছ থেকে শোনা যাক। তিনি বলেন, দোলনচাঁপা মূলত বুনো ফুল। আদিনিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। ভারতীয় প্রজাতির ফুল বহুকাল ধরে বাংলাদেশে আছে। এর প্রায় ৪০টির মতো প্রজাতি। কোনটির রং হলদেটে। কোনটি আবার লাল। তবে প্রধানত সাদা রঙের হয়। পুরোপুরি ফুটলে পাপড়িগুলোকে প্রজাপতির ডানার মতো মনে হয়। ফুলের গায়ে হাওয়া লাগলে সাদা প্রজাপতিরা নড়ে চড়ে ওঠে। এ কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফুলটিকে বাটারফ্লাই জিঞ্জার লিলি বলা হয়। তিনি জানান, দোলনচাঁপা গাছ ৬০ থেকে ৭০ সেমি উঁচু হয়। কা-ের পাশে কয়েকটি লম্বা পাতা থাকে। দোলনচাঁপার পাতা লেন্স আকৃতির। লম্বায় ৮ থেকে ২৪ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। চওড়ায় হয় দুই থেকে পাঁচ ইঞ্চি। বর্তমানে ফুলটির ভাল চাষ হয়। ফুলচাষীরা মৌসুমি ফুল হিসেবে দোলনচাঁপার চাষ করে থাকেন। গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে বসন্ত পর্যন্ত গাছের উপরের অংশে ৬ থেকে ১২ ইঞ্চি পুষ্পমঞ্জরি দেখা দেয়। দোলনচাঁপা গাছ দেখতে অনেকটা আদা বা হলুদ গাছের মতো। ফুল ফোটা শেষ হলে কা- শুকিয়ে যায়। তবে গোড়া থেকে আবার নতুন কা- জন্ম নেয়। সূর্যের আলো সরাসরি পড়ে না এমন জায়গায় ভাল জন্মে। দোলনচাঁপা নিজেকে এত বিলিয়ে দেয় যে, দুদিনের বেশি বাঁচে না। আর শীতে শুকিয়ে যায় গোটা গাছ। প্রাণ পায় বর্ষায়। প্রাণের স্পর্শে আসুন। উপভোগ করুন প্রিয় ফুলের সৌন্দর্য।
×