ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যাকবলিত আট জেলায় ১২ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধানের ক্ষতি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১২ জুলাই ২০১৭

বন্যাকবলিত আট জেলায় ১২ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধানের ক্ষতি

এমদাদুল হক তুহিন ॥ চলমান বন্যায় দেশের বন্যাকবলিত ৮ জেলায় ১২ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধানের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কোন কোন আউশের ক্ষেত সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। কোনটি রয়েছে পানিতে অর্ধনিমজ্জিত। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে আউশ ছাড়াও ক্ষতির মুখে পড়েছে আমনের বীজতলা, বোনা আমন, পাট, সবজি, জুম, মরিচ, আখ ও ফলবাগান। বন্যাকবিলত ওই ৮ জেলায় ৩ লাখ ১৩ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমির মধ্যে ১৬ হাজার ৮৪৩ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। তবে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ১০ লাখ ৯১ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ হয়েছে। এক্ষেত্রে আবাদে অগ্রগতির হার ৯৭ শতাংশ। আর ৭২ শতাংশ আমনের বীজতলা নির্মাণই শেষ। কোথাও কোথাও চলছে আমন রোপণ কাজ। এমন পরিস্থিতিতে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান বন্যায় ফসলের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হবে না। আক্রান্ত জমি থেকে পানি সরে যাওয়ায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ গোলাম মারুফ জনকণ্ঠকে বলেন, চলতি আউশ মৌসুমে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে যেসব স্থানে আগাম বন্যা হয়েছিল তার অধিকাংশ স্থান থেকে পানি সরে যাচ্ছে। ওইসব স্থানে ফসলের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এটা সাময়িক। এতে তেমন কোন প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করছে। জানা গেছে, চলমান বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, বগুড়া, বান্দরবান, কক্সবাজার ও গাইবান্ধা। এই ৮ জেলার মধ্যে চট্টগ্রাম ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটেছে। তবে কয়েকদিনের উন্নতির পর রবিবার থেকে ফের অবনতি হয়েছে সিলেট ও মৌলভীবাজারের বন্যা পরিস্থিতি। এদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে বলে জানা গেছে। এতে ফসলের আরও ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে বন্যাকবলিত ৮ জেলায় ফসলের ৩ লাখ ১৩ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমির মধ্যে ১৬ হাজার ৮৪৩ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ১ লাখ ৯৯ হাজার ২৭৭ হেক্টর জমির মধ্যে ১২ হাজার ১৮ হেক্টর জমির আউশ, ১৮ হাজার ৬৩৬ হেক্টর আমনের বীজতলার মধ্যে ১ হাজার ১৪৩ হেক্টর ও বোনা আমনের ৫ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৩০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ২৮ হাজার ২১৭ হেক্টরের মধ্যে তলিয়ে গেছে ২ হাজার ৫৬৭ হেক্টর জমির পাটক্ষেত। আর ৮ হাজার ৭১৮ হেক্টরের মধ্যে সবজি নষ্ট হয়েছে ৫৮৬ হেক্টরের। এছাড়াও ৮ হাজার ৯৮৮ হেক্টরের মধ্যে ১৩০ হেক্টরের জুম, ৬০ হেক্টরের মধ্যে ১৪ হেক্টরের মরিচ, ৯ হেক্টরের মধ্যে ৫ হেক্টরের আখক্ষেত ও ৪৪ হাজার ৭০০ হেক্টরের মধ্যে ৮০ হেক্টরের ফলবাগান অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে সম্পূর্ণ বা আংশিক নষ্ট হয়েছে। জানা গেছে, বন্যাকবলিত জেলাগুলোর মধ্যে সিলেটে প্রায় ৬৩ শতাংশ আউশ ও ১৭ শতাংশ আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৌলভীবাজারে ৫৫ শতাংশ আউশ ও প্রায় ৫০ শতাংশ আমন বীজতলা, সুনামগঞ্জের প্রায় ২১ শতাংশ আউশ এবং চট্টগ্রামের প্রায় ৯৯ শতাংশ আউশ ও আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে, সারা দেশে চলতি মৌসুমে আমন ধানের বীজতলা নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৮২ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে বীজতলা নির্মাণ শেষ হয়েছে ২ লাখ ৩ হাজার হেক্টর জমিতে। এক্ষেত্রে বীজতলা নির্মাণে অগ্রগতির হার ৭২ শতাংশ। অন্যদিকে চলতি মৌসুমে সারা দেশে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩ লাখ ৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এখন পর্যন্ত সারা দেশে ৩০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের রোপণ কাজ শেষ হয়েছে। আর এক্ষেত্রে অগ্রগতির হার দশমিক ৫৭ শতাংশ। এছাড়া আউশ আবাদের অগ্রগতির প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, চলতি মৌসুমে সারা দেশে আউশ ধানের বীজতলা নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ হাজার হেক্টর। আর বীজতলা নির্মাণ হয় ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এক্ষেত্রে বীজতলা নির্মাণে অগ্রগতির হার ৮৫ শতাংশ। আর মৌসুমটিতে ১১ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১০ লাখ ৯১ হাজার হেক্টর জমিতে, আবাদে অগ্রগতির হার ৯৭ শতাংশ। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যাকবলিত অঞ্চল ছাড়া সারা দেশে আউশের আবাদ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এগিয়ে চলছে আমনের রোপণ কাজও। এতে ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। চট্টগ্রাম অফিস জানায়, ১৫ দিন আগেও চট্টগ্রামে বন্যার যে অবস্থা ছিল এখন তার উত্তরণ ঘটেছে। পানি সরে গেছে। আবার কোথাও সরতে শুরু করেছে। তবে বন্যায় পুকুর ডুবেছে, উপকূলে মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে আউশের জমি ও নষ্ট হয়েছে বীজতলা। তাদের মতে, চট্টগ্রামে আউশের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। এদিকে সুনামগঞ্জ অফিস জানায়, সুনামগঞ্জেও এখন আর বন্যার পানি নেই। বিপদসীমার নিচে আছে সুরমা নদীর পানি। তাই নতুন করে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই। এছাড়া হাওড়ের এই জেলাটিতে আউশের উৎপাদন খুবই নগণ্য। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলার মধ্যে একটি উপজেলা আক্রান্ত হয়েছে। ওই জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার ২ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ হলেও ক্ষতি হয়েছে ১৪০ হেক্টরের।
×