ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা-কলম্বো ১০ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১২ জুলাই ২০১৭

ঢাকা-কলম্বো ১০ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনার বাংলাদেশ সফর সামনে রেখে ঢাকা-কলম্বোর মধ্যে ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সিরিসেনার ঢাকা সফরের সময় চট্টগ্রাম-কলম্বো বন্দরের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচলসহ বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা খাতে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। এই সফরের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট আগামীকাল বৃহস্পতিবার তিনদিনের সফরে ঢাকায় আসছেন। সিরিসেনার সফরকালে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দুই দেশের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল সংক্রান্ত সমঝোতা সই। এ সংক্রান্ত সমঝোতা সই হলে এই অঞ্চলে কানেকটিভিটি বাড়বে। কলম্বো বন্দর ব্যবহার করে চট্টগ্রাম থেকে জাহাজ চলাচল করতে পারবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দুই দেশের মধ্যে জাহাজ চলাচল সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশ কলম্বো বন্দর ব্যবহার করবে। এর ফলে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে কোস্টাল শিপিং চুক্তি স্বাক্ষরের পর শিপিং সেক্টর আরও গতিশীল হবে। সমঝোতা স্মারকের পর বাংলাদেশ কলম্বো বন্দরে ট্যারিফ এবং অন্যান্য সুবিধা পাবে। কলম্বো বন্দর ব্যবহারে পণ্য পরিবহনে সময়ও সাশ্রয় হবে। এই চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে শিপিং সেক্টরে আরও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া বন্দরে শিপমেন্ট বাড়বে এবং শ্রীলঙ্কার ক্যাডেটরা বাংলাদেশের মেরিন একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেবে। এই সমঝোতা স্মারকের ফলে আঞ্চলিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে উপআঞ্চলিক সহযোগিতা (বিবিআইএম), বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডর এবং বঙ্গোপসাগরীয় জোট বিমসটেকের আওতায় আঞ্চলিক কানেকটিভিটির ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের সফর সামনে রেখে দুই দেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সই করার জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ এলডিসি দেশের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে এটি হবে বাংলাদেশের প্রথম দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে চীন, ভারতসহ কয়েকটি দেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে আছে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার বাণিজ্য কার্যক্রম সম্প্রসারণে এই চুক্তি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছে উভয় পক্ষ। এছাড়াও দুই দেশের মধ্যে যেসব চুক্তির প্র¯ুÍতি নেয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজ করা এবং একে অন্যের মানের সনদ গ্রহণ করা সংক্রান্ত চুক্তি। কৃষিক্ষেত্রে বৃহত্তর সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি হতে পারে। এর অধীনে দুই দেশের কৃষি মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করবে। দুই দেশের মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রেও সহযোগিতা চুক্তি প্রস্তুতি রয়েছে। বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমি এবং শ্রীলঙ্কার বন্দরনায়েকে ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোম্যাটিক ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (বিআইডিটিআই) মধ্যে উভয়মুখী প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত একটি চুক্তি হতে পারে। এছাড়াও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) এবং শ্রীলঙ্কার লক্ষ্মণ কাদিরগামা ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মধ্যে সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি সইয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা গিরিসেনার সফর সামনে রেখে গত ৩ জুলাই ঢাকা-কলম্বোর মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিলেন শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র সচিব ইসালা ভিরাকুন। সে সময় দুই দেশের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ সম্ভাবনার চেয়েও অনেক কম। দুই দেশের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয় বছরে ২৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। শ্রীলঙ্কা থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে বছরে ৮৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। সে কারণে বাণিজ্য বাড়াতে দু’দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রসমূহÑবাণিজ্য, বিনিয়োগ, পর্যটন, কৃষি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য, আকাশ ও সমুদ্রপথে কানেকটিভিটি এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন। শ্রীলঙ্কা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে পর্যটন খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যেই মিহিরলঙ্কা এয়ার দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান ফ্লাইট পরিচালনা করছে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল, জাহাজ নির্মাণ, পর্যটন, মৎস্য আহরণ এবং অন্যান্য উৎপাদন খাতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত ও শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের ওষুধের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশী পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে ‘সিঙ্গেল কান্ট্রি ফেয়ার’ আয়োজন নিয়েও উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা গিরিসেনা ঢাকায় আসছেন। গত বছরের ১৬ মার্চ ঢাকায় আসার কথা ছিল শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের। তবে নানা কারণে সেই সফর পিছিয়ে যায়। মৈত্রীপালা গিরিসেনা এর আগে শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। এছাড়া ২০১১ সালের এপ্রিলে ঢাকা সফর করেছিলেন দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে।
×