ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীলঙ্কার লজ্জা, জিম্বাবুইয়ের ইতিহাস

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ১১ জুলাই ২০১৭

শ্রীলঙ্কার লজ্জা, জিম্বাবুইয়ের ইতিহাস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে সময়টা ভাল যাচ্ছে না। তাই বলে ঘরের মাটিতে পাঁচ ম্যাচের দীর্ঘ সিরিজে জিম্বাবুইয়ের কাছে এভাবে হার? সত্যি অবিশ্বাস্য। এমন অবিশ্বাস্য ঘটনার জন্ম দিয়ে ইতিহাস গড়েছে গ্রায়েম ক্রেমারের দল। শেষ ম্যাচে ৩ উইকেটের নাটকীয় জয়ে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথম বারের মতো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে (৩-২এ) জিম্বাবুইয়ে। দীর্ঘ ১৬ বছর পর বিদেশের মাটিতে টেস্ট-প্লেয়িং কোনো দেশের বিপক্ষে দিপক্ষীয় সিরিজে সাফল্যের মুখ দেখল আফ্রিকান লিলিপুটরা। শেষ তাদের এমন কীর্তি ছিল সেই ২০০১ সালে, বাংলাদেশ সফরে। হাম্বানটোটায় টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে মাত্র ২০৩ রান করে এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের শ্রীলঙ্কা। জবাবে ৩৮ ওভার ১ বলে ৭ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় জিম্বাবুইয়ে। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ম্যাচসেরা হয়েছেন সিকান্দার রাজা, সিরিজসেরা হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। ছোট লক্ষ্য তাড়ায় সুলোমন মিরের সঙ্গে ৯২ রানের উদ্বোধনী জুটিতে দলকে দারুণ সূচনা এনে দেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। দলকে ১ উইকেটে ১৩৭ রানের দৃঢ় ভিত দিয়ে ফেরেন এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। ৯টি চার ও একটি ছক্কায় ৭৩ রান করার পথে দেশের পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে পৌঁছান পাঁচ হাজার রানে। লাসিথ মালিঙ্গা মাসাকাদজাকে বিদায় করার পর যেন জেগে ওঠে লঙ্কানরা। একে একে ফিরিয়ে দেয় ক্রেইগ আরভিন, শন উইলিয়ামস, টারিসাই মাসাকান্দা, ম্যালকম ওয়ালার ও পিটার মুরকে। সতীর্থদের আসা যাওয়ার মধ্যে প্রতিরোধ গড়েন রাজা। অধিনায়ক ম্যালকম ওয়ালারকে নিয়ে দলকে এনে দেন ইতিহাস গড়া জয়। ছক্কায় দলকে জয় এনে দেয়া ম্যাচ সেরা রাজা অপরাজিত থাকেন ২৭ রানে। ৪৭ রানে চার উইকেট নিয়ে দলকে জয়ের আশা দেখিয়েছিলেন আকিলা দনাঞ্জয়া। ৪৪ রানে ২ উইকেট নিয়ে তাতে দারুণ সহায়তা করেছিলেন মালিঙ্গা। কিন্তু দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সিরিজে শেষ হাসি হাসল অতিথিরাই। ব্যাট হাতে দৃঢ়তা দেখানোর আগে দারুণ বোলিংয়ে দলের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন রাজা। ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে ১০ ওভারে মাত্র ২১ রানে কুসল মেন্ডিস, উপুল থারাঙ্গা ও হাসারাঙ্গা ডি সিলভার উইকেট তুলে নেন তিনি। শুরু থেকে নিয়মিত উইকেট হারানো লঙ্কানরা কখনও সেভাবে ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি। প্রথম চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে দুই অঙ্কে ছুঁতে পেরেছেন কেবল দানুশকা গুনাথিলকা (৫২)। স্বাগতিকদের একমাত্র অর্ধশত রানের জুটি গড়ে ওঠে অবিচ্ছিন্ন নবম উইকেটে আসেলা গুনারতেœ ও দুশমন্থা চামিরার মধ্যে। শেষ পর্যন্ত ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন গুনারতেœ। অতিথি অধিনায়ক ক্রেমার ২ উইকেট নেন ২৩ রান দিয়ে। জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় গৌরবের মুহূর্ত এসেছিল ২০০০-০১ মৌসুমে। সেবার নিউজিল্যান্ডের মাটিতে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল তারকাখচিত ফ্লাওয়ার ভাই, ক্যাম্পবেল-স্ট্রিকদের দল। ২০০১-০২ মৌসুমে বাংলাদেশের মাটিতে সাফল্যের পর কেটে গেছে ১৬ বছর। ২০০৮ সালে সহযোগী সদস্য, প্রায় হারিয়ে যাওয়া শক্তি কেনিয়ার বিপক্ষে একটি সিরিজ জেতা ছাড়া বিদেশে সিরিজ জয়ের স্বাদ আর পাওয়া হয়নি। এমনকি সম্প্রতি হেরেছে আফগানিস্তানের কাছে। সেই জিম্বাবুইয়ের এই সাফল্য ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। স্কোর ॥ শ্রীলঙ্কা ২০৩/৮ (৫০ ওভার; ডিকওয়েলা ৩, গুনাথিলকা ৫২, মেন্ডিস ১, থারাঙ্গা ৬, ম্যাথুস ২৪, গুনারতেœ ৫৯*, হাসারাঙ্গা ০, কুলাসেকারা ৫, দনাঞ্জয়া ৭, চামিরা ১৮*; রাজা ৩/২১, চটারা ১/৪৯, ক্রেমার ২/২৩, পোফু ০/৩৬, উইলিয়ামস ১/৪১, ওয়ালার ১/২১) জিম্বাবুইয়ে ২০৪/৭ (৩৮.১ ওভার; মাসাকাদজা ৭৩, মিরে ৪৩, মাসাকান্দা ৩৭, আরভিন ২, উইলিয়ামস ২, রাজা ২৭*, ওয়ালার ১, মুর ১, ক্রেমার ১১*; মালিঙ্গা ২/৪৪, কুলাসেকারা ০/২৫, গুনারতেœ ১/২৩, দনাঞ্জয়া ৪/৪৭, হাসারাঙ্গা ০/৪৫, চামিরা ০/১৬, গুনাথিলকা ০/২) ফল ॥ জিম্বাবুইয়ে ৩ উইকেটে জয়ী ম্যাচসেরা ॥ রাজা (জিম্বাবুইয়ে) সিরিজ ॥ ৩-২ ব্যবধানে জয়ী জিম্ব^াবুইয়ে সিরিজসেরা ॥ মাসাকাদজা (জিম্বাবুইয়ে)।
×