ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তিন সপ্তাহ চলবে কন্ডিশনিং ক্যাম্প, ২৮ জুলাই প্রধান কোচ হাতুরাসিংহে আসার পর শুরু হবে স্কিল ট্রেনিং

মাশরাফিদের ফিটনেস ক্যাম্প শুরু

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ১১ জুলাই ২০১৭

মাশরাফিদের ফিটনেস ক্যাম্প শুরু

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ ছুটি পেয়েছিলেন ক্রিকেটাররা। তবে ঈদের পর অনেকেই ঐচ্ছিক অনুশীলন শুরু করে দিয়েছিলেন। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ঘোষিত প্রাথমিক দলের ক্যাম্প শুরু হয়েছে। এদিন সকাল ৯টা থেকেই ক্রিকেটাররা জিমে এসে ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়নের কাছে রিপোর্ট করেছেন। অবশ্য ঘোষিত ২৯ জনের মধ্যে অনুপস্থিত ছিলেন ৭ ক্রিকেটার। এর মধ্যে তামিম ইকবাল ন্যাটওয়েস্ট টি২০ ব্লাস্ট খেলতে ইংল্যান্ডে আছেন আর পেসার রুবেল হোসেন ইনজুরিতে। বাকি ৫ ক্রিকেটার আছেন অস্ট্রেলিয়া সফরে হাই পারফর্মেন্স স্কোয়াডের (এইচপি) সঙ্গে। ২২ ক্রিকেটার নিয়ে আপাতত যে ক্যাম্প শুরু হয়েছে সেখানে মূলত ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য কাজ করবেন ভিল্লাভারায়ন। প্রধান কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহে, ব্যাটিং কোচ থিলন সামারাবিরা এবং পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ ছুটি থেকে ফেরার পরই শুরু হবে মাঠের ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন। তখনই ঘোষণা করা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের দল। সে কারণে টানা প্রায় তিন সপ্তাহ চলবে এই স্ট্রেন্থ ও কন্ডিশনিং ক্যাম্প। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে আরও ৩/৪ দিন আগে থেকেই বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার নিজেদের শারীরিক জড়তা কাটাতে হালকা অনুশীলন ও জিম করেছেন। আয়ারল্যান্ড সফর এবং ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে ক্রিকেটাররা দেশে ফিরেছিলেন ১৬ জুন। এরপর থেকেই ছুটিতে ছিলেন ক্রিকেটাররা। ঐচ্ছিক অনুশীলন করলেও একসঙ্গে সবার সাক্ষাত এর মধ্যে আর হয়নি। সোমবার আবার পুনর্মিলনী ঘটল ক্রিকেটারদের। সে অনুসারে ২৩ দিনের লম্বা ছুটি কাটানোর সুযোগ পেয়েছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদরা। তামিম ৩ দিন আগে ইংল্যান্ড গেছেন বলে তিনি এই পুনর্মিলনী মিস করেছেন। আর ইনজুরিতে পড়া রুবেলও থাকতে পারেননি। এনামুল হক বিজয়, লিটন দাস, আবুল হাসান রাজু, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও তানবীর হায়দার এইচপি স্কোয়াডের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া সফরে থাকায় তারাও অনুপস্থিত ছিলেন। বাকি ২২ ক্রিকেটারই উপস্থিত হন মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের জিমে। সেখানে সকালের দীর্ঘ সময় ক্রিকেটারদের পরখ করেছেন স্ট্রেন্থ ও কন্ডিশনিং কোচ ভিল্লাভারায়ন। পরে ক্রিকেটাররা ইনডোরে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে মূল মাঠে ফিরেছেন। আপাতত কোন ক্রিকেট ব্যস্ততা নেই। ঘরোয়া কিংবা আন্তর্জাতিক কোন প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট নেই। আর গত মার্চ থেকেই জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা দেশের বাইরে। মার্চে শ্রীলঙ্কা সফর শেষে দেশে কিছুদিন কাটিয়েই আবার আয়ারল্যান্ড সফরে যেতে হয়েছে। এ কারণে ইনডোরের ব্যাটিং-বোলিং প্র্যাকটিসের উইকেটগুলোতে লম্বা ঘাস দেখা গেছে। আপাতত ব্যাটিং-বোলিংয়ের অনুশীলন না থাকায় সেসব অনুশীলন উপযোগী করে তোলা হয়নি। আগামী ২৮ জুলাই আবার এসে শিষ্যদের নিয়ে মাঠের ক্রিকেট অনুশীলন শুরু করে দেবেন প্রধান কোচ হাতুরাসিংহে। তিনি ৫ সপ্তাহের ছুটি নিয়ে ইংল্যান্ড থেকেই সরাসরি অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান। হাতুরাসিংহে ফেরার পরই শুরু হবে শুরু হবে স্কিল ট্রেনিং, ব্যাট-বলের অনুশীলন। তখনই ফিরবেন তার দুই সহকারী- ব্যাটিং কোচ সামারাবিরা এবং বোলিং কোচ ওয়ালশ। অর্থাৎ ২৮ জুলাই পর্যন্ত ফিটনেস নিয়েই কাজ করে যাবেন ক্রিকেটাররা। তারপর থেকে ক্রিকেটীয় কর্মকা-ের শুরু হবে। প্রতিযোগিতামূলক কোন ক্রিকেট না থাকলেও ক্যাম্পে থাকাদের মধ্যে দুই দল করে অনুশীলন ম্যাচও আয়োজনের কথা রয়েছে। আগস্ট থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ক্রিকেটারদের ব্যস্ত মৌসুম। সেই মৌসুমের আগে আবার ক্রিকেটে ধাতস্থ করার জন্যই ওই অনুশীলন ম্যাচগুলো করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ১৮ আগস্ট আসবে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল। তারা খেলবে ২ টেস্টের সিরিজ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের কিছুদিন পরেই দক্ষিণ আফ্রিকায় পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক সফর। সেখান থেকে ফেরার পরই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ নিয়ে ব্যস্ত হবেন ক্রিকেটাররা। মাঝে আবার ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) প্রস্তুাবিত ত্রিদেশীয় সিরিজ হওয়ার কথা আছে সময়সূচী মিলে গেলে। বিপিএল শেষ হতে হতেই পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে আবার বাংলাদেশে আসবে শ্রীলঙ্কা। দেশের মাটিতে খেলা শেষে মাশরাফি-মুশফিকরা সফর করবেন কোর্টনি ওয়ালশদের দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সবমিলিয়ে আগস্টের শেষ ভাগ থেকে হাঁপিয়ে তোলার মতো টানা ব্যস্ত ক্রিকেট সূচী। প্রচুর ম্যাচ থাকায় ক্রিকেটারদের ফিট থাকা খুব কঠিন। তাই এই ফিটনেস ক্যাম্পের মাধ্যমেই সেই কঠিন কাজটি সহজ করে রাখার চেষ্টা থাকবে টাইগারদের। এখনও ক্রিকেটীয় ব্যস্ততা শুরু হতে দেড় মাস বাকি। এই দীর্ঘ বিরতিতে ফিটনেস ঠিকঠাক করার গুরু দায়িত্ব ভিল্লাভারায়নের। এই ক্যাম্পটি খুব কাজে দেবে বলে মনে করেন ইমরুল কায়েস। তিনি বলেন, ‘সামনে আমাদের অনেক ব্যস্ততা, এর আগে সবাই ফিটনেস বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ পাবে। আশা করি সব মিলিয়ে আমাদের ক্যাম্পটা ভালই কাটবে।’ দলের তরুণ চার ক্রিকেটার মোসাদ্দেক হোসেন, সৌম্য সরকার, নুরুল হাসান, সাব্বির রহমানও একই সুরে গলা মেলালেন, ‘ফিটনেস ভাল থাকলে ম্যাচে মনোসংযোগের ঘাটতি থাকে না। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী যে কোনও কিছু তখন করা যায়। আশা করি এই ক্যাম্পের মাধ্যমে আমরা আমাদের ফিটনের উন্নতি করতে পারব।’ জানা গেছে প্রধান কোচ ফেরার পরই অস্টেলিয়া সিরিজের জন্য দল ঘোষণা করবেন নির্বাচকরা। সেই দলে জায়গা করে নেয়ার জন্য হলেও নিজেদের ফিটনেস সেরা অবস্থানে নেয়ার জন্য গুরুত্বের সঙ্গেই সচেষ্ট থাকবেন ক্রিকেটাররা। ফিটনেসে ঘাটতি থাকলে তার জন্য অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হোম টেস্ট সিরিজে থাকা সম্ভব হবে না। অবশ্য সে বিষয়ে নির্ভারই থাকবেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি। কারণ তার মিশন সেপ্টেম্বরের একেবারে শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। তার জন্য সময় যেমন বেশি, চ্যালেঞ্জটাও বেশি দীর্ঘদিন ক্রিকেটের বাইরে থেকে নিজেকে ফিট রাখা।
×