ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার জট পরিস্থিতির উন্নতি

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১১ জুলাই ২০১৭

চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার জট পরিস্থিতির উন্নতি

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার জট পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি, তবে ক্রমশ উন্নতির দিকে। বহির্নোঙ্গরে লাইটারিং অনেকটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে বিদেশী জাহাজের ধাক্কায় দুটি কী-গ্যান্ট্রি ক্রেন বিকল হয়ে যাওয়ায় কন্টেনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে ধীরগতি চলছে। আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙ্গরে পণ্য লাইটারিং এবং ইয়ার্ডে কন্টেনার জট পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ঈদের ছুটিতে আমদানিকারকরা পণ্য ডেলিভারি না নেয়ায় কন্টেনারের যে স্তূপ সৃষ্টি হয়েছিল তাও কমছে। তবে তা ধারণ ইয়ার্ডের ক্ষমতার নিচে নেমে আসতে আরও অন্তত দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। এ লক্ষ্যে অফডকের কন্টেনারগুলো সরিয়ে নিয়ে বন্দর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সহায়তা করার জন্য বেসরকারী আইসিডিগুলোকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বন্দর সূত্রে জানা যায়, বর্ষণ এবং স্রোত ও বাতাসের তীব্রতা কমায় বহির্নোঙ্গরে গত কয়েকদিন ধরে স্বাভাবিক সময়ের মতোই পণ্য লাইটারিং হচ্ছে। ঘাট অভিমুখে এবং অভ্যন্তরীণ জলপথে পণ্য পরিবহনও চলছে। যে মাদার ভেসেলগুলো কর্মহীন অলস ভেসেছিল সেগুলোতে কাজ হচ্ছে। অধিকাংশ ভেসেলেই রয়েছে গম, চাল, চিনিসহ খাদ্যপণ্য, সিমেন্ট ক্লিংকার এবং শিল্পের কাঁচামাল। ঈদের ছুটির আমেজ কেটে যাওয়ার পর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। পণ্যের শুল্কায়নে গতি ফিরে আসায় বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারিও বেড়েছে। বিরূপ আবহাওয়া এবং ঈদের ছুটি, এই দুয়ে মিলে অনেকটা স্থবিরাবস্থায় পড়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর। আগের সপ্তাহেও পণ্য ডেলিভারি ছিল নামমাত্র। কিন্তু ঈদের দ্বিতীয় সপ্তাহ অর্থাৎ রবিবার থেকে পণ্য হ্যান্ডলিং এবং ডেলিভারি হচ্ছে আগের মতোই। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (এডমিন এ্যান্ড প্ল্যানিং) জাফর আলম জানান, বছরে দুই ঈদে সকালের শিফট বাদ দিলে বন্দর কখনও বন্ধ থাকে না। প্রতিদিনই কন্টেনার ওঠানামা হয়। ঈদের ছুটিতেও পণ্য ডেলিভারির প্রস্তুতি থাকে। কিন্তু বিষয়টি শুধু বন্দরের একার নয়। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ছুটি ভোগ করে। ক্লিয়ারিং এজেন্টরাও ঐ সময় কাজ করে না। ফলে কাস্টমসে শুল্কায়নও বন্ধ থাকে। ওই সময়ে কন্টেনার আনলোডিং হয় অথচ ডেলিভারি হয় না। সে কারণেই পণ্যের স্তূপ হয়। এক্ষেত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষের করার কিছু থাকে না। প্রতিবছরই দুই ঈদের লম্বা ছুটিতে এটি স্বাভাবিক চিত্র। ধীরে ধীরে তা ঠিকও হয়ে যায়। বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিবহন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এখনও ইয়ার্ডে পণ্য রয়েছে ৩০ হাজার টিইইউএস কন্টেনারের বেশি। এর মধ্যে কয়েক হাজার কন্টেনার রয়েছে, যেগুলো অফডকে চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু ঈদের ছুটি এবং নানা কারণেই অফডকগুলোর কাছ থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। অফডকগুলোকে কড়াকড়িভাবে বলা হয়েছে তাদের কন্টেনার সরিয়ে নিতে। এসব কন্টেনার সরে গেলে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হবে। লাইটার জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মাহবুব রশিদ জানান, বন্দর বহির্নোঙ্গরে মোট ৩৫টি জাহাজ রয়েছে। এর অধিকাংশেই কাজ চলছে। সাগরে বাতাস এবং স্রোত অনেকটা স্বাভাবিক পর্যায়ে আসায় কাজেও গতি এসেছে। চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক প্রায় ১৪শ’ জাহাজ রয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, কাজ পুরোদমে শুরু হওয়ায় জাহাজের বুকিংও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এদিকে চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনালে (সিসিটি) একটি বিদেশী জাহাজের ধাক্কাজনিত দুর্ঘটনায় দুটি কী-গ্যান্ট্রি ক্রেন বিকল হওয়ায় কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে কিছুটা ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অত্যাধুনিক এ যন্ত্রপাতি দিয়ে যে গতিতে কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হতো, সে পরিমাণ করা যাচ্ছে না পুরনো পদ্ধতিতে। বন্দরকে এখন বাধ্য হয়ে আগের পদ্ধতিতে ফিরে যেতে হয়েছে। ওই দুই জেটিতে গিয়ারলেস জাহাজের পরিবর্তে ভেড়ানো হচ্ছে ক্রেন সংবলিত জাহাজ। সূত্র জানায়, জাপান থেকে আসা বিশেষজ্ঞরা গ্যান্ট্রি ক্রেন দুটি ঠিক করার কাজ শুরু করেছে। তবে এর জন্য অন্তত দু’মাস সময় লাগবে।
×