ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সামান্য প্রবৃদ্ধি বাড়লেও রফতানির লক্ষ্যমাত্রায় হোঁচট

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১১ জুলাই ২০১৭

সামান্য প্রবৃদ্ধি বাড়লেও রফতানির লক্ষ্যমাত্রায় হোঁচট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ২০১৬-১৭ বিদায়ী অর্থবছরে রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৮৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর আগের অর্থবছরে যা ছিল ৩ হাজার ৪২৫ কোটি ৭১ লাখ ডলার। অর্থাৎ রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। বছরের ব্যবধানে রফতানি আয় বাড়লেও অর্জিত হয়নি। এদিকে বিদায়ী অর্থবছরে পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ। গত ১৫ বছরের মধ্যে পোশাক রফতানি আয়ে এটিই সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি। বিদায়ী অর্থবছরে ২ হাজার ৮১৫ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। তার আগের ২০১৫-১৬ অর্থবছর ২ হাজার ৮০৯ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছিল। ওই বছরে পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ১৪ শতাংশ। সোমবার রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সব ধরনের পণ্য রফতানিতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে মোট ৩ হাজার ৪২৫ কোটি ৭১ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। সদ্য বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৪৮৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ কম। গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রফতানি আয় অর্জিত হয়েছিল ৩ হাজার ৪২৫ কোটি ৭১ লাখ ডলার। বিদায়ী বছরের শেষ মাস জুনে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৬৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ওই মাসে রফতানি আয় অর্জিত হয় ৩০৪ কোটি ৪৩ লাখ মার্কিন ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ দশমিক ৫২ শতাংশ কম। সদ্য সমাপ্ত জুন মাসে আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৫ দশমিক ২৭ শতাংশ কম প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে । প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দেশের পণ্য রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক খাত থেকে আসে। সদ্য বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পণ্যটি রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ। গত ১৫ বছরের মধ্যে পোশাক রফতানি আয়ে এটিই সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি। বিদায়ী অর্থবছরে ২ হাজার ৮১৫ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। তার আগের ২০১৫-১৬ অর্থবছর ২ হাজার ৮০৯ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ১৪ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরে ১ হাজার ৪৩৯ কোটি ডলারের ওভেন পোশাক ও ১ হাজার ৩৭৫ কোটি ডলারের নিট পোশাক রফতানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় নিট পোশাক রফতানি ৩ শতাংশ বাড়লেও ওভেন পোশাক রফতানি ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ কমেছে। পরিসংখ্যান বলছে, বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম জুলাই মাসে তৈরি পোশাক খাত থেকে রফতানি আয় অর্জিত হয় ২১১ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। পরের মাস আগস্টে এ খাত থেকে রফতানি আয় আসে ২৭২ কোটি ৬২ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে হঠাৎ করেই রফতানি আয়ে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তৈরি পোশাক রফতানি থেকে গত অক্টোবরে ২৫০ কোটি ১৩ লাখ, নবেম্বর মাসে কিছুটা কমে ২৩১ কোটি ৯৯ লাখ ও ডিসেম্বর মাসে ২৫৭ কোটি ৮৪ লাখ ডলার অর্জিত হয়। নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে পোশাক রফতানি থেকে আয় আসে ২৭০ কোটি ৩৫ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারি মাসে ২২২ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, মার্চে ২২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে ২২০ কোটি ৮৫ লাখ ডলার, মে মাসে ২৪৮ কোটি ৭৪ লাখ ডলার এবং শেষ মাস জুনে ২৫২ কোটি ৩১ লাখ ডলার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, আগে প্রতিবছরই ক্রেতা কিছু কিছু করে ক্রয়াদেশ বাড়াত। আর এখন প্রতিবছরই কমাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে এক ধরনের মন্দা চলছে। তাছাড়া বেক্সিট, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ও ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হওয়ার বিষয়টি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হওয়ায় সক্ষমতা কমে গেছে বলে মনে করেন বিজিএমইএর সভাপতি। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে ডলারের বিপরীতে টাকা ৪ শতাংশ শক্তিশালী হয়েছে। তবে ভারতের রুপী ৩২ শতাংশ অবমূল্যায়িত হয়েছে। ফলে আমাদের থেকে ভারতের রফতানিকারকেরা সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। দেশটির সরকার পোশাক শিল্পের জন্য বিশেষ প্রণোদনাও দিয়েছে। ফলাফল গেল বছর তাদের পোশাক রফতানি বেড়েছে ১৪ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির জন্য ডলারের বিপরীতে টাকাকে অবমূল্যায়িত না করলে সরকারকে অন্য প্রণোদনা দেয়া প্রয়োজন। বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের চলে যাওয়া বা ব্রেক্সিট, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের প্রভাব ও ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হওয়া এ তিন কারণে পোশাক রফতানি কমে গেছে। এ পরিস্থিতিতে পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পোশাক রফতানি আয়ের ধসটি সতর্ক হওয়ারই সংকেত। নিজেদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানো ছাড়া ভবিষ্যতে রফতানি বৃদ্ধি করা প্রায় অসম্ভব; বরং কার্যকর উদ্যোগ না নিলে সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। সরকার পাট ও পাটজাত পণ্যের প্রতি বিশেষ নজরদারির কারণে এ খাতে গত অর্থবছরে ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এ সময়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ খাতে আয় এসেছে ৯৬ কোটি ২৪ লাখ ডলার। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে বিদায়ী অর্থবছরের আগে বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। আয় হয়েছে ১১৬ কোটি ৯ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি। এছাড়া গত অর্থবছরে প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৩১ দশমিক ৪০ শতাংশ। এ সময়ে আয় এসেছে ১১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। এছাড়া বিদায়ী অর্থবছরে প্রকৌশল পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এ সময়ে আয় এসেছে ৬৮ কোটি ৮৪ লাখ ডলার।
×