ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড

বিধি ভেঙ্গে ৯ জনের পদোন্নতি ॥ তিন কর্মকর্তার পদাবনতি

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১১ জুলাই ২০১৭

বিধি ভেঙ্গে ৯ জনের পদোন্নতি ॥ তিন কর্মকর্তার পদাবনতি

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডে এবার নিয়ম ভেঙ্গে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্তরা সোমবার নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। তবে বিতর্কিতদের নিয়োগ দিতে গিয়ে তিন কর্মকর্তাকে বিধি লঙ্ঘন করে প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পদাবনতি করা হয়েছে। এ নিয়ে বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বোর্ডের ইতিহাসে এই প্রথম পদোন্নতি দিতে গিয়ে তিন কর্মকর্তাকে পদাবনতি করা হলো। অভিযোগ উঠেছে, এ নিয়োগের মাধ্যমে মোটা অংকের বাণিজ্য হয়েছে। বোর্ডের সর্বত্র এ নিয়ে তোলপাড় চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রবিবার রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের সচিব ড. আনারুল হক প্রাং স্বাক্ষরিত পত্রে ৯ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এরা হলেন নেসার উদ্দিন, মানিক চন্দ্র সেন, ওয়ালিদ হোসেন, মুঞ্জুর রহমান, লিটন সরকার, শফিকুল ইসলাম, সেলিনা পারভীন, জাহিদুর রহিম ও হোসনে আরা আরজু।এদের মধ্যে শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট প্রদানের সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ওয়ালিদ হোসেনকে ২০১১ সালে অসদাচারণের দায়ে ধিক্কার জানানো হয়েছিল। তার এসিআরএ এটি যুক্ত রয়েছে। সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে সেলিনা পারভীন ও লিটন কুমার সরকারের বিরুদ্ধে। গত বছর সেলিনা ভা-ারের উপসচিব এবং লিটন সহকারী সচিব থাকা অবস্থায় আর্থিক অনিয়ম করেন। তাদের দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে গত বছরের জুন মাসের ৩০ তারিখে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি এখনও প্রতিবেদন দেয়নি। ফলে এখন পর্যন্ত তারা সেই অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে পারেননি। কিন্তু সেলিনা এবং লিটনকে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।এদিকে পছন্দের লোকজনকে পদোন্নতি দিতে গিয়ে বিধি ভেঙ্গে তিন কর্মকর্তার পদাবনতি হয়েছে। বোর্ডসভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিন কর্মকর্তা গত পাঁচ বছর ধরে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু তাদের পদাবনতি দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৬ মে ২২৬তম বোর্ডসভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় বোর্ডে চেয়ারম্যান ছিলেন প্রফেসর তানবিরুল আলম। সভায় বোর্ডের স্বার্থে দ্বিতীয় শ্রেণীর ১১ কর্মকর্তাকে নিজ নিজ পদেই বেতন-ভাতা অপরিবর্তিত রেখে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে চলতি দায়িত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে মোতাবেক ওই বছরের ১ জুলাই ১১ কর্মকর্তাকে দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে প্রথম শ্রেণীতে পদোন্নতি দেয়া হয়। কিন্তু এটি ‘নিয়মমাফিক হয়নি’ বলে বোর্ডের দুই কর্মকর্তা পরের বছর ৭ এপ্রিল উচ্চ আদালতে রিট করেন। ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আদালত এই রিট খারিজ করে দেন। এরপর ওই মাসেই বোর্ডে ২৩২তম বোর্ডসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার রেজুলেশনের সিদ্ধান্তে বলা হয়, উচ্চ আদালত রিট খারিজ করে দেয়ায় ধরে নেয়া যায়, প্রথম শ্রেণীর পদে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত ১১ কর্মকর্তার ওই পদে কাজ করার যোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু সেই কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে তিন জনকে প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এরা হলেন- উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (জেএসসি) ফরিদ হোসেন, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (সনদ ও রেকর্ডস) রুবি এবং উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) দুরুল হোদা। ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের পদাবনতির বিষয়টি হাইকোর্টের আদেশ ও বোর্ড রেজ্যুলেশনের পুরোপুরি লঙ্ঘন বলে মনে করছেন। তারা বলেন, এ সিদ্ধান্তের ঘটনায় তারা সংক্ষুব্ধ। এক্ষেত্রে তারা আইনের আশ্রয় নেবেন বলে জানান।
×