উন্নত ও অগ্রসর বাংলাদেশ তৈরিতে চাই দক্ষ মানবসম্পদ। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বর্তমানে দেশে দক্ষ মানবসম্পদের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। গত কয়েক বছরে শিক্ষার হার জ্যামিতিক গতিতে বাড়লেও সেই অনুপাতে দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদ তৈরি হয়নি। ১৬ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত একটি দেশে যেই পরিমাণ প্রকৌশলী, ডাক্তার, নার্স, প্রযুক্তিবিদ, আইটি বিশেষজ্ঞ, এমনকি বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক প্রয়োজন, সেই পরিমাণে বিশেষজ্ঞ নিদেনপক্ষে দক্ষ মানবসম্পদ নেই অথবা গড়ে ওঠেনি আজ পর্যন্ত। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় যে, কোনরকমে একটি স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হয় কেরানীর চাকরি খুঁজতে। গত কয়েক বছরে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী নাগরিক সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছেন চাকরি-বাকরি অথবা শ্রম বিক্রির উদ্দেশ্যে। তাদের মধ্যেও যে দক্ষ মানবসম্পদ আছে এমন কথা বলা যাবে না কিছুতেই, বরং অধিকাংশই অদক্ষ, বড় জোর আধাদক্ষ শ্রমিক। অনেকে এমনকি ‘নিম্ন পর্যায়ের কাজে’ জড়িত। বিদেশে চাকরি জীবন শেষ হলে দেশে ফিরেও তারা তেমন কিছু করতে পারেন না। বিদেশের শ্রমবাজারও বর্তমানে যেমন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে, তেমনি কমছে প্রবাসী আয়। সে অবস্থায় আগামী ২৭ জুলাই থেকে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য তিনদিনব্যাপী দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির আন্তর্জাতিক সম্মেলনটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) ও কলম্বো প্ল্যান স্টাফ কলেজ (সিপিএসসি) ম্যানিলার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই সম্মেলনে সদস্যভুক্ত ১৬টি দেশের প্রতিনিধি ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন। এই সম্মেলনে টেকসই উন্নয়নে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর সবিশেষ জোর ও গুরুত্বারোপ করা হবে। উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হলো ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে উদীয়মান উন্নত দেশে উন্নীত করা। সে জন্য জরুরী ও অত্যাবশ্যক দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি। উল্লেখ্য, বর্তমান সরকারও দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরির জন্য দেশব্যাপী ডিপ্লোমা শিক্ষা তথা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট তৈরিসহ একাধিক কারিগরি বোর্ড স্থাপনে সবিশেষ আগ্রহী। বৈশ্বিক শ্রমবাজার সঙ্কুচিত হওয়ার পাশাপাশি প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশেই দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির বিষয়টি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় অনেক দেশেরই অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয়। বরং তেলের দাম বেশ নেমে যাওয়ায় অনেক দেশেরই জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে লক্ষ্য করা যায় নেতিবাচক প্রবণতা। তদুপরি আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার রাজনৈতিক, অভিবাসন পরিস্থিতিসহ আইনশৃঙ্খলার অবস্থা খুবই নাজুক। সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় বলতেই হয়, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশই বিনিয়োগের জন্য সর্বাধিক উত্তম ও উপযোগী স্থান। দেশে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি বেশ ভাল, প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সরকারী-বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে প্রচুর অলস অর্থ পড়ে আছে। ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে সুদহার কমানোর কথাও বলা হচ্ছে। সে অবস্থায় সরকারকে একটি নমনীয় সুদহার নির্ধারণ করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে। বিদ্যুতের সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। পদ্মা সেতুর অগ্রগতিও আশাব্যঞ্জক। অতঃপর চাই অবকাঠামো উন্নয়ন। সেটি করা সম্ভব হলে এবং বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা গেলে বাংলাদেশী দক্ষ ও আধাদক্ষ শ্রমজীবীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
শীর্ষ সংবাদ: