ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;মজিদ মওলানাসহ ছয় রাজাকারের বিরুদ্ধে নুরুন্নাহারের সাক্ষ্য

পাক আর্মি ও রাজাকাররা আমার ‘জা’ জমিলার সঙ্গে ‘খারাপ কাজ’ করে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১১ জুলাই ২০১৭

পাক আর্মি ও রাজাকাররা আমার ‘জা’ জমিলার সঙ্গে ‘খারাপ কাজ’ করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার শেখ মোঃ আবদুল মজিদ ওরফে মজিদ মওলানাসহ ছয় রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের চতুর্থ ও পঞ্চম সাক্ষী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে ৪র্থ সাক্ষী নুরুন্নাহার ওরফে তারার মা বলেন, পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা ঘরে ঢুকে আমার জা জমিলা খাতুনের ওরফে নায়েবের মার সঙ্গে ‘খারাপ কাজ’ করে ‘অঘটন’ ঘটায়। অন্যদিকে ৫ম সাক্ষী মোঃ আসাদুজ্জামান জবানবন্দীতে বলেন, পাকি আর্মি ও রাজাকাররা আমার ভাবি নায়েবের মাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। তখন নায়েবের মা চিৎকার-চেঁচামেচি করে। সাক্ষীর জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী তাকে জেরা করেন। জেরা শেষে পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ২৩ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। মানবতাবিরোধী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ময়মনসিংহের আবদুল সালামসহ ৯ রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়ার জন্য পরবর্তী দিন ৬ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে রাজশাহীর বোয়ালিয়ার আবদুস সাত্তার টিপু ওরফে টিপু সুলতানকে মানবতাবিরোধী অপরাধে শ্যেন এরেস্ট দেখানো হয়েছে। পরবর্তী দিন ৭ সেপ্টেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে ময়মনসিংহের ত্রিশালের মোঃ সামসুল হক বাচ্চুসহ তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে অগ্রগতি প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ৪ সেপ্টেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মুখলেসুর রহমান বাদল, হৃষিকেশ সাহা, সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি, রিজিয়া সুলতানা বেগম চমন, আবুল কালাম প্রমুখ। নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার শেখ মোঃ আবদুল মজিদ ওরফে মজিদ মওলানাসহ ছয় রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের চতুর্থ সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেছেন, আমার নাম নুরুন্নাহার ওরফে তারার মা। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৮০ বছর। আমার ঠিকানা-গ্রাম-পুর্ববুদি, থানা-পূর্বধলা, জেলা-নেত্রকোনা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিকে কোন একদিন দুপুর বেলা আমদের বাড়িতে আমি, আমার চাচি শাশুড়ি, আমার ভাসুরের ছেলেমেয়ে ও আমার জা জামিলা খাতুন রফে নায়েবের মা উপস্থিত ছিলাম। এই সময় তিনজন পাকিস্তানী আর্মি ও পাঁচজন রাজাকার আমাদের বাড়িতে আসে তখন আমি ঘরের বাহিরে পালিয়ে যাই। অন্যান্যরা আমাদের বাড়ির ঘরে আশ্রয় নেয়। রাজাকার ও পাাকিস্তানী আর্মিরা ঘরে ঢুকে আমার জা জমিলা খাতুনের কোলে থাকা ২১ দিনে বাচ্চাকে আমার চাচি শাশুড়ির কোলে দিয়ে তাকে ঘর থেকে বের করে দেয়। তারপর পাকিস্তানী আর্মিরা জমিলা খাতুন ওরফে নায়েবের মার সঙ্গে ‘খারাপ কাজ’ করে অঘটন ঘটায়। এরপর পাকিস্তানী আর্মিরা আমাদের বাড়ির পুকুরে গোসল করে চলে যায়। পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা চলে যাওয়ার পর ঘরের ভেতর চৌকির নিচে লুকিয়ে থাকা আমার ভাসুরের ছেলেমেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে চিৎকার-চেঁচামিচি করে। তারপর আমরা যেই ঘরে জমিলা খাতুনকে পাকিস্তানী আর্মিরা খারাপ কাজ করেছিল সেই ঘর থেকে জমিলা খাতুনকে বের করে এনে তার মাথায় পানি দেই। এবং তার পরিধেয় কাপড় পাল্টে দেই। এরপর তাকে স্থানীয় ডাক্তার চিকিৎসা করে। এই ঘটনায় তিনদিন পর লোকলজ্জার ভয়ে জমিলা খাতুনকে তার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়।
×