ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১১ জুলাই ২০১৭

সরকারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ

ফিরোজ মান্না ॥ তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে বিকশিত ও শক্তিশালী করতে এবার সরকারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। এ প্রশিক্ষণের আওতায় আসবে সরকারের মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে বেশকিছু আইটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও প্রশিক্ষণে অংশ নেবেন। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ‘এ্যাডভান্সড সার্টিফিকেশন ফর ম্যানেজমেন্ট প্রফেশনালস (এসিএমপি)’ প্রোপ্রাম চালু করতে যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে (বিসিসি) বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের ‘লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড গবর্নেন্স (এলআইসিটি)’ প্রকল্পে যুক্তরাজ্যভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়ংকে (ইওয়াই) নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, আগামী ১০ আগস্ট এসিএমপির কার্যক্রম শুরু হবে। দেশের সরকারী ও আইটি প্রতিষ্ঠানের ৫শ’রও বেশি মধ্যম স্তরের কর্মকর্তাকে এসিএমপি প্রোগ্রামের আওতায় প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসিএমপি প্রোগ্রাম চালুর জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও ইওয়াই একসঙ্গে কাজ করবে। আর্নস্ট এ্যান্ড ইয়ংকে দেশের একটি স্বনামখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলে এসিএমপি প্রোগ্রাম চালু করতে বলা হয়েছে। যাতে কোর্স কারিকুলাম ও মডিউলে দেশ এবং বিদেশের প্রশিক্ষকদের অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটে। স্বনামখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হলে ওই প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষকরা পরবর্তী সময়ে প্রশিক্ষণ অব্যাহত রেখে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখতে পারবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশে ও বিদেশে আইটি (তথ্যপ্রযুক্তি) এবং আইটিইএস কোম্পানিগুলোর জন্য প্রায় অভিন্ন চ্যালেঞ্জ হচ্ছেÑ দক্ষতাসম্পন্ন মানুষের অভাব। সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে বিকশিত করার জন্য প্রতিযোগিতামূলক সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে আইটি এবং আইটিইএস খাতের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলাই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে না পারলে বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলানো আমাদের কঠিন হয়ে পড়বে। বিশ্ব যে গতিতে চলছে আমাদেরও সেই গতি নিয়ে আসতে হবে। এমনিতেই আইসিটি খাতে আমাদের দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে এ খাতে দক্ষ জনবল তৈরি করার। এ জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৪ হাজার দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা হচ্ছে। আরও একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩০ হাজার নারীকে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে নিজেদের নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা সবাই মিলে কাজ করছি। ২০২১ সালের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যুব সমাজ নেতৃত্ব দেবে। তখন বিশ্বজুড়ে আরও বিকশিত হবে তথ্যপ্রযুক্তি। আর তাইতো আমরা চাই নতুন প্রজšে§র প্রত্যেকেই হয়ে উঠুক ডিজিটাল বাংলাদেশের এক একজন ডিজিটাল সৈনিক। দেশে স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেম তৈরির জন্য তিনস্তরের ‘পিরামিড স্ট্রাকচার’ নিয়ে কাজ করছে সরকার। প্রথম স্তরে থাকবে ইনোভেটররা। তারপরের স্তরে থাকবে এচিভারররা। সব শেষে থাকবে ফ্রিল্যান্সাররা। ইনোভেটররা হয়তো সংখ্যায় অল্প হবে কিন্ত দেশে আইটি শিল্পে তারা বিশাল অবদান রাখবে। এরপরের স্তরে থাকবে এচিভারররা। যারা আইটি ও আইটিএস গ্রাজুয়েশন করে কোম্পানির সিইও বা সিএফও হবেন। তাদের মেধাকে লালন করতে সরকার তাদের সহযোগিতা দেবে। সবশেষে থাকবে যারা আমাদের ফ্রিল্যান্সিং খাতসহ অন্য খাতে সংশ্লিষ্ট এবং এ খাতকে এগিয়ে নিতে ছোট ছোট উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছেন। এ তিন স্তরে কাজ হলে দেশ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশ্বমানের পর্যায়ে চলে যাবে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার সরকার বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশে আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। আর দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন মানসম্মত প্রশিক্ষণ। দেশ ও বিদেশের প্রশিক্ষকরা এসিএমপি প্রোগ্রামের আওতায় প্রশিক্ষণের গুণগত মান বজায় রেখেই আইটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যম স্তরের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবে। ইওয়াইর বিজনেস এ্যাডভাইজারি সার্ভিসের প্রকল্প পরিচালক বিদ্যুত ঠাকুর বলেন, ইওয়াই ইতোমধ্যে বাংলাদেশের আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যম স্তরের কর্মকর্তাদের কোন কোন ক্ষেত্রে দক্ষতার অভাব রয়েছে। সম্প্রতি এমন একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। কারিকুলাম ও মডিউল তৈরির জন্য এ জরিপ প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ইতোমধ্যে অংশীদারদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। জরিপের ওপর ভিত্তি করে যেসব বিষয় প্রশিক্ষণে যুক্ত হতে পারে তার মধ্যে অন্যতম সোশ্যাল, মোবাইল, এ্যানালাইটিকস এ্যান্ড ক্লাউড (এসএমএসি), নেটওয়ার্কিং এবং সিকিউরিটি, বিগ ডাটা এ্যানালাইটিকস, এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্লানিং (ইআরপি), কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট (সিআরএম), রোবোটিকস, আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই), ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, কাস্টমার ম্যানেজমেন্ট, পিপল ম্যানেজমেন্ট স্কিলস। এলআইসিটি প্রকল্পের কম্পোনেন্ট টিম লিডার সামি আহমেদ বলেন, নীতিমালা প্রণয়নসহ সরকারী বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে আগামী দিনে আইটি খাতে বড় ধরনের ইতিবাচক ধারার পরবির্তন ঘটতে যাচ্ছে। এ খাতে বিনিয়োগকারীদের যেমন আবির্ভাব ঘটবে, তেমনি দেশে নতুন নতুন সফটওয়্যার, বিপিও ও হার্ডওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে। এসব পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে দেশীয় আইটি প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মধ্যম স্তরের কর্মকর্তারা। এ জন্য মধ্যম স্তরের কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে এসিএমপি কার্যক্রমের আওতায় প্রশিক্ষণের জন্য একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
×